ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ব্যথানাশক ওষুধেই মস্তিষ্কের ক্ষতি! গবেষণা বলছে ৪০% পর্যন্ত ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ১৯:৪৩, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৫, ১৩ জুলাই ২০২৫

ব্যথানাশক ওষুধেই মস্তিষ্কের ক্ষতি! গবেষণা বলছে ৪০% পর্যন্ত ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা

ছবিঃ সংগৃহীত

স্নায়বিক ব্যথা ও মৃগী রোগে বহুল ব্যবহৃত ওষুধ গ্যাবাপেন্টিনের সঙ্গে ডিমেনশিয়া ও হালকা মানসিক দুর্বলতার ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথার জন্য নিয়মিত গ্যাবাপেন্টিন গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ডিমেনশিয়া বা মানসিক দুর্বলতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বিশেষ করে যাদের ওষুধ গ্রহণের পরিমাণ বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও প্রবল।

গ্যাবাপেন্টিন কীভাবে কাজ করে?

গ্যাবাপেন্টিন মূলত একটি অ্যান্টি-সিজার (খিঁচুনি প্রতিরোধী) ওষুধ, যা স্নায়ুবিক ব্যথা, মৃগী, শিঙ্গলস পরবর্তী ব্যথা ও রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রে রাসায়নিক সংকেত নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করে। ওষুধটি গ্রহণের পর মাথা ঘোরা, ঘুম ঘুম ভাব, মাথাব্যথা ও বমিভাবের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে দেখা যায়। তবে নতুন গবেষণা বলছে, এর আরও গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি রয়েছে।

গবেষণার ফলাফল কী বলছে?

২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২৬,৪০০ জন গ্যাবাপেন্টিন গ্রহণকারী এবং সমসংখ্যক গ্যাবাপেন্টিন না-গ্রহণকারী ব্যক্তির চিকিৎসা ইতিহাস বিশ্লেষণ করেন গবেষকরা। বয়স, রোগ ইতিহাস ও অন্যান্য ব্যথানাশক গ্রহণের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েও গবেষণা চালানো হয়।

ফলাফলে দেখা যায়—

  • যেসব রোগী ৬টির বেশি গ্যাবাপেন্টিন প্রেসক্রিপশন পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৯% বেশি

  • একইসঙ্গে ৮৫% বেশি রোগীর হালকা মানসিক দুর্বলতা (Mild Cognitive Impairment) দেখা গেছে ১০ বছরের মধ্যে।

  • সবচেয়ে আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, ৩৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে গ্যাবাপেন্টিন গ্রহণকারীদের ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ এবং মানসিক দুর্বলতার সম্ভাবনা তিনগুণ বেড়েছে।

  • এমনকি ৫০ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রেও একই রকম উদ্বেগজনক ফলাফল দেখা গেছে।

এছাড়া যাদের প্রেসক্রিপশন ১২টির বেশি, তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৪০% এবং মানসিক দুর্বলতার ঝুঁকি ৬৫% বেশি, যাদের প্রেসক্রিপশন ৩-১১টি ছিল, তাদের তুলনায়।

গ্যাবাপেন্টিনের ইতিহাস ও বর্তমান উদ্বেগ

গ্যাবাপেন্টিন ১৯৯৩ সালে মার্কিন FDA কর্তৃক অনুমোদিত হয় মৃগী রোগে আংশিক খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণের জন্য। তখন এটিকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও কম আসক্তিকর মনে করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

‘পেইন মেডিসিন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্যাবাপেন্টিন গ্রহণের কারণে কম ডোজেও হাসপাতাল ভর্তি হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। এসব ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, গ্যাবাপেন্টিন গ্রহণকারী প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।

অন্যান্য ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি

ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে—মাথায় আঘাত, শ্রবণ সমস্যা, দীর্ঘদিনের অবসাদ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন এবং ধূমপান। তাই সচেতন থাকতে হবে জীবনযাপনেও।

ঝুঁকি কমাতে করণীয়:

  • ধূমপান ও মাদক গ্রহণ পরিহার করা

  • নিয়মিত ব্যায়াম

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

  • পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাবাপেন্টিনের ব্যবহারে সাবধান থাকা জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে মানসিক কার্যকারিতার অবনতি ঘটতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং বিকল্প থেরাপি গ্রহণে মনোযোগী হওয়াই শ্রেয়।

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/popularly-prescribed-pain-drug-can-increase-the-risk-of-dementia-by-up-to-40-reveals-study/articleshow/122419209.cms

ইমরান

×