দেশের মানুষ অবিলম্বে নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়

দেশের মানুষ অবিলম্বে নির্বাচিত সরকার দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উত্তরার আজমপুরে আমির কমপ্লেক্সের সামনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 
এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ দেশের জন্য ভালো খবর। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাধুবাদ জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনেকে অনেক কথা বলেন। তাদের অনেক ভুল আছে, ত্রুটি আছে, তাদের বেশি অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে। আশা করেছিলাম সরকার এক বছরের মধ্যে আমাদের যারা শহীদ হয়েছে প্রকৃত তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। দুর্ভাগ্য তারা পুরোটা করতে পারেনি। কিন্তু তারা চেষ্টা করছে।
ফখরুল বলেন, সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি দু’-একদিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস হচ্ছে যে ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের বিষয়ে। এই নির্বাচনটা আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়, দেশের মানুষ একটা নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা করতে দেখতে চায়।
ফখরুল বলেন, আমাদের তো যাওয়ারই জায়গা নেই। এখন আমাদের সমস্যা হলো কার কাছে যাব? কোনো এমপি নাই তো। তাহলে আমাদের সমস্যা সংসদে কে তুলে ধরবে? কে সংসদে আমাদের দাবি নিয়ে কথা বলবে? এজন্যই আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার, খুব দ্রুত সংসদ দরকার। যে সংসদে আমরা আমাদের কথাগুলো বলতে পারব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ভয়ঙ্কর একটা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে আপাতত মুক্তি পেয়েছি। এই মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে যখন তাদের আমরা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারব। যারা লুটপাট করে, যারা ব্যাংক লুট করে, যারা চাঁদাবাজি করে, যারা মানুষের সম্পত্তি দখল করে নিয়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো রকমের আপোস থাকবে না। তাদের আমরা কখনোই স্বীকার করব না এবং তাদের আমরা কোনোমতেই সামনে আসতে দেব না।
ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ওপর যে আস্থা রেখেছিল জনগণ একইভাবে আজ তারা তারেক রহমান সাহেবের ওপর আস্থা রাখছে। তাই কবে দেশে আসবেন তারেক রহমান সেজন্য আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি তারেক রহমান সাহেব অতি দ্রুত দেশে ফিরে আসেন,  আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেন, সেটাই আমাদের কামনা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব প্রতিদিন কথা বলছেন। প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করছেন। তিনি বলছেন যে, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব, যে বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে, যে বাংলাদেশে মানুষ ভোট দিতে পারবে, যে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ আর গরিব থাকবে না, আস্তে আস্তে উন্নতির দিকে যাবে এবং বারবার করে বলেছেন দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে। আগামীতে নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রান্তিক মানুষের জন্য ‘ফার্মাস কার্ড’, ‘স্বাস্থ্য কার্ড’, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা তারেক রহমান নিয়েছেন তার কথাও তিনি তার বক্তব্যে বলছেন।
ফখরুল বলেন, এক বছর আগে এইদিনে উত্তরা উত্তাল হয়েছিল।  ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনের শেষদিকে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের কথা বলার পাশাপাশি শহীদদের পরিবারের বেদনা-কষ্টের জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে একটা ভালো খবর আছে।  ক’দিন আগে আপনারা দেখেছেন আমেরিকা আমাদের পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপ করেছে। ট্যারিফ কী জানেন? আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করব তার ওপরে ৩৫ ভাগ ট্যাক্স নিয়ে নিবে জানিয়েছিল। অর্থাৎ আমাদের যে জিনিসটার দাম ১০০ টাকা  ওটার সঙ্গে আরও ৩৫ টাকা যোগ হবে। তার মানে ১০০ টাকার জিনিস ১৩৫ টাকা দাম হবে। ফলে আমাদের জিনিসটা আর বিক্রি হবে না। আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং উপদেষ্টাগণ আলোচনা করে ওটাকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে এসেছেন। সেজন্য আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা একটা বড় দায়িত্ব পালন করেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএম আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, দলের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি পালন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল আলম নিরব, কৃষক দলের আহ্বায়ক হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, জাসাসের নেতা হেলাল খান, তাঁতি দলের নেতা আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর, সদস্য সচিব মোস্তফা জামান প্রমুখ।