
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের শুল্ক কমানোর আদেশ দেন
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প সরকারের এ সিদ্ধান্ত অর্থাৎ শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার সাফল্যকে বড় বিজয় হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক কূটনীতিতে এটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারক, অর্থনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব। দীর্ঘ দুই মাসের কূটনৈতিক যুদ্ধে অর্জিত এ সাফল্যে সারাদেশে এখন স্বস্তির সুবাতাস বইছে।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, নতুন এই শুল্কহারে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অপরাপর প্রতিযোগী দেশের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। স্বাভাবিক কারণেই ভবিষ্যতে চীন ও ভিয়েতনাম থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আশা করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, নতুন সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় এখন আমাদের কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি হয়েছে। আগের যে ধারণা ছিল- ভারত আমাদের মার্কেট দখল করে ফেলবে, এখন বরং বাংলাদেশই ভারতের কাছ থেকে কিছু মার্কেট শেয়ার আদায় করতে পারবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে সে হিসেবে প্রতিযোগিতায় আমরা তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক অবস্থানে আছি। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশেগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আমরা বলতে গেলে স্বাভাবিক অবস্থানেই আছি।
গত দুই মাসের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় এবং ধারাবাহিক মিটিং ও কূটনৈতিক যোগাযোগের ফল হিসেবে শুক্রবার প্রথম প্রহরে আসে কাক্সিক্ষত খবর। বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সময় বৃহস্পতিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে কয়েক ডজন দেশ ও বিদেশি অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়। একই দিনে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপিন্সের ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ওয়াশিংটন।
গত ২ এপ্রিল বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির কথা বলে বিভিন্ন দেশের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। সে সময় বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে দেশগুলোকে শুল্ক নিয়ে আলোচনার সুযোগ দিতে ৯ এপ্রিল ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। ৯ জুলাই সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়। ৯ জুলাইয়ের পর শুল্কহার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত দেশগুলোকে সময় বেঁধে দেয় ওয়াশিংটন। ওই সময়সীমা শেষে শুক্রবার থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে বর্তমানের গড় ১৫ শতাংশ মিলিয়ে মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে বলেছে, অনেক বিষয় জড়িত থাকায় শুল্ক আলোচনার প্রক্রিয়াটি ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। শুল্ক ছাড় পাওয়ার বিষয়টি শুধু মার্কিন রপ্তানির ওপর শুল্ক কমানোর সঙ্গেই যুক্ত ছিল না, বরং অশুল্ক বাধা, বাণিজ্য ঘাটতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত মার্কিন উদ্বেগ সমাধানে একটি দেশের সদিচ্ছার ওপরও নির্ভর করছিল। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্ক পেয়েছে- যা তৈরি পোশাক খাতের প্রধান প্রতিযোগী দেশ শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার প্রায় সমান। দেশগুলো ১৯ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে শুল্ক পেয়েছে। ফলে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের তুলনামূলক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অক্ষুন্ন রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিত চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারায় ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক হার নির্ধারিত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সফল হয়েছে। দেশটির বাজারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ভালো। বাংলাদেশের জন্য আলাদা কোনো শর্ত আরোপ করেনি যুক্তরাষ্ট্র, বাকি দেশগুলোর মতো একই শর্ত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছিল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে।
শুক্রবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই স্বস্তির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ইউএসএ। শুল্ক কমাতে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সামরিক চুক্তি করিনি। এটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য, তুলাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যও আনতে চায় বাংলাদেশ। এতে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশের পক্ষে শুল্ক আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করেছি, যাতে আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আমাদের পোশাক শিল্পকে রক্ষা করা ছিল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তবে এর পাশাপাশি আমরা মার্কিন কৃষিপণ্য কেনার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলোর সঙ্গে আমাদের সদ্ভাব বাড়াবে।
তিনি বলেন, আমরা সফলভাবে একটি সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে পেরেছি। এটি আমাদের পোশাক খাত এবং এর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য সুখবর। এর মাধ্যমে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছি এবং বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশের নতুন সুযোগ তৈরি করেছি।
শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশ হওয়া নিঃসন্দেহে উন্নতি মন্তব্য করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, শুধু ট্যারিফ হ্রাসের কারণে আমাদের রপ্তানি বেড়ে যাবে এমনটা না। আমাদের কিছু মৌলিক সমস্যা আছে, বিশেষ করে সরবরাহ ব্যবস্থার দিক থেকে। সেগুলো ঠিক করতে হবে। তাহলেই আমরা এই সুযোগগুলো বাস্তবে কাজে লাগাতে পারব। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার, আগের মতো ঝুঁকির মধ্যে আর নেই আমরা।
তিনি বলেন, এক সময় যেভাবে ভারতের কারণে বাজার হারানোর ভয় ছিল, এখন বরং কিছু অংশ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের উচিত এই সুযোগ কাজে লাগানো। বিশেষ করে যারা দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি দিতে পারবে, তারাই সুবিধা পাবে। তবে সেটা নির্ভর করবে আমরা কতটা দক্ষভাবে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজ করতে পারি তার ওপর। আমাদের ডেলিভারি ব্যবস্থায় সমস্যা আছে, সেটা ঠিক করতে পারলে আমরাও বাজারে শক্ত অবস্থানে যেতে পারব। ভিয়েতনামের মতো দেশ কিছু নির্দিষ্ট সাপ্লাই শিপমেন্টে সুবিধা পায়, সেটা আমাদের নেই। তবে এখন কিছু ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
শুল্কহার ২০ শতাংশ হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন এ অর্জনের ফলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এখন আমাদের শুল্কহার প্রায় সমান অথবা কিছুটা কম। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির খবর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বায়ারদের এখন আগের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এতে তাদের ক্রয়ক্ষমতা এবং স্থানীয় ভোক্তাদের ভোগব্যয় কমে যেতে পারে। ফলে প্রাথমিকভাবে আমাদের রপ্তানিতে কিছুটা ধাক্কা লাগতে পারে এবং মূল্য নিয়ে চাপ তৈরি হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ আবার এই সমস্যা কাটিয়েও উঠতে পারবে, কেননা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশেগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আমরা বলতে গেলে স্বাভাবিক অবস্থানেই আছি। ফলে আমরা ধীরে ধীরে এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারব।
সামগ্রিকভাবে শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হওয়ায় আমরা খুশি মন্তব্য করে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)-এর সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, এটা খুশির খবর যে শুল্ক কমার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে কম্পিটিটিভ থাকব, শুল্কহারের কারণে আমরা অন্য দেশের কাছে বাজার হারাব না। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর শুল্ক হারও মোটামুটি একই রকম। তবে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেল মার্কেটে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। তাই আগামী এক থেকে দেড় বছর আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে অর্ডার কিছুটা কমতে পারে, তারপর এটা ঠিক হবে। সামগ্রিকভাবে শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হওয়ায় আমরা খুশি।
পরিবর্তিত সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, যে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে সে হিসেবে প্রতিযোগিতায় আমরা তুলনামূলকভাবে একটা সন্তোষজনক অবস্থানে আছি। তিনি বলেন, এটা জয়-পরাজয়ের কোনো বিষয় না। আমরা ২০ শতাংশ, পাকিস্তান ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনামে ২০ শতাংশ আর ভারতে ২৫ শতাংশ। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সার্বিকভাবে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ট্যারিফের ফিগারটা সন্তোষজনক। ট্যারিফ বিষয়ে আমাদের প্রতিযোগীতাদের সঙ্গে যেটা হয়েছে সেটা ঠিকই আছে। এটা সন্তোষজনক। তবে পুরো নেগোসিয়েশনের সার্বিক বিষয়টা তো আমাদের জানা নেই। আমরা শুধু ট্যারিফের বিষয়টা জানি। সার্বিক বিষয়টা জানার পরে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব। এর বিপরীতে আর কী দিতে হয়েছে সেটা না জানা পর্যন্ত তো এর ইমপ্যাক্টটা কী হবে সেটা আমরা বলতে পারছি না।
এদিকে ২০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ মন্তব্য করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) পরিচালক সেলিম রায়হান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, নতুন এ হারের সংশোধন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কাঠামোর একটি বৃহত্তর পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে এসেছে, যা দেশটির অনেক বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর প্রযোজ্য বলে মনে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কার জন্য হার কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে (আগে ছিল ৩০ শতাংশ), পাকিস্তানের হার কমে হয়েছে ১৯ শতাংশ (আগে ছিল ২৯ শতাংশ)। বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিযোগী, যেমন ভিয়েতনাম ও ভারতের ক্ষেত্রে ট্যারিফ হার বর্তমানে যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ। ফলে, বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রধান প্রতিযোগীদের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে সমতুল্য অবস্থানে পৌঁছেছে।
শুল্ক কমায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্লাস্টিক রপ্তানির বাজার হারানোর শঙ্কা কেটে গেছে জানিয়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক রপ্তানিকারক প্রতিযোগী দেশগুলোর শুল্ক কাছাকাছি, অনেক ক্ষেত্রে বেশি থাকার কারণে আমরা রপ্তানিতে এখন সুবিধা পাব। যেমন আমাদের অন্যতম প্রতিযোগী ভারতের শুল্ক আমাদের চেয়ে বেশি দিতে হবে, সেখানে আমরা এগিয়ে যাব। চীনের সঙ্গেও সুবিধা পাব। শুল্ক কমানোর ফলে এখন প্লাস্টিক রপ্তানির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হবে। অন্যান্য দেশের বড় বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশ করা হয়ত সুবিধা হবে।
এদিকে পরিবর্তিত শুল্ক বাস্তবতায় ভবিষ্যতে চীন ও ভিয়েতনাম থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীন ব্যতীত অন্য দেশগুলোর জন্য প্রায় সমান হারে শুল্ক নির্ধারণ করা একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্য এই শুল্ক ১৯ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা রক্ষা পেয়েছে। তিনি বলেন, এই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের উদ্যোক্তাদের আরও দক্ষ ও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে, মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কিন ক্রেতাদের বোঝাতে হবে যে, এই আমদানি শুল্ক আমদানিকারকদেরই বহন করতে হবে এবং পরিশেষে এটি চূড়ান্ত ভোক্তাকেই বহন করতে হবে।
দেশের সর্ববৃহৎ চেম্বার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেছেন, আমরা আমাদের শুল্ককে এই অঞ্চল এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে পেরেছি, যা একটি ভালো দিক। কিছু কিছু শিল্পের জন্য এই শুল্ক স্বস্তিদায়ক হলেও আমদানির যন্ত্রাংশ বা ট্রানজিট চালানের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আমাদের ব্যবসায়িক মডেলকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করবে। যদি আমরা চীন বা ভারতের কাপড় বা সুতা ব্যবহার করে তৈরি পোশাক রপ্তানি করি, তবে আমাদের শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে হিসাব করে দেখলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বাস্তবে সরকারি প্রতিবেদনের চেয়ে অনেক কম দাবি করে তিনি বলেন, এই ধরনের হিসাবের অসঙ্গতি শুধরে না নিলে ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনায় বাংলাদেশ দুর্বল অবস্থানে পড়তে পারে।
প্যানেল