ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

বার্ন ইউনিটে মাইলস্টোনের দীপ্ত

আমি তো বন্ধুদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, আমি নিশ্চয়ই বাঁচব

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ২৪ জুলাই ২০২৫

আমি তো বন্ধুদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, আমি নিশ্চয়ই বাঁচব

ছবি: সংগৃহীত

বাবা একদিন রাগ করে পোষা পাখিগুলো ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেই পাখিদের যত্ন নেয়ার আবদার করেই আজ ICU’র বিছানায় শুয়ে আছে ছোট্ট দীপ্ত। দগ্ধ শরীরে, অর্ধেক পুড়ে যাওয়া হাতে সে এখনো বাবা-মা, পাখি আর ছোট বোনকে ভালোবাসার কথা বলে যায়। বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে দেরিতে বের হওয়াই তার পুড়ে যাওয়ার কারণ — তবুও আক্ষেপ নয়, দীপ্ত শুধু বলে, “আমি তো বন্ধুদের সাহায্য করেছি, আমি মরবো না।”

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের বেড নম্বর ৩-এ শুয়ে থাকা এই সাহসী শিশুর নাম নাভিদ নাওয়াজ দীপ্ত। মালস্টোন স্কুলে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একজন সে।

দু’ভাই-বোন—দীপ্ত আর নায়রা আফরিন—প্রতিদিন স্কুলে যেত হাত ধরে। স্কুল শেষে একসাথে বাড়ি ফেরার কথা ছিল সেদিনও। ছোট বোন নায়রা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী, বড় ভাই দীপ্ত ছিল তার অপেক্ষায়। মা নুরুন নাহার স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ছুটি হলে একসাথে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু সেই ১০ মিনিটের ব্যবধানে আছড়ে পড়ে ভয়ংকর বাস্তবতা—বিমান এসে পড়ে স্কুলের ওপর।

নায়রা ছুটে বেড়ায় ভাইকে খুঁজতে। অবশেষে দেখে, দীপ্ত দগ্ধ শরীরে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে আসছে ধোঁয়া আর আতঙ্কের ভেতর থেকে। মা জ্ঞান হারান। নায়রা নিজের হাতে বাবাকে ফোন করে জানায়, “ভাইয়া পুড়ে গেছে।”

এরপর শুরু হয় হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটোছুটি। প্রথমে সিএমএইচ, তারপর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউ। এখানেই দীপ্তর ঠিকানা এখন।

দীপ্তর বাবা বিপ্লব জানালেন, ছেলেটি এখনো চিন্তায় থাকে তার পাখিগুলোর কথা। বিড়ালও খুব ভালোবাসতো, কিন্তু মায়ের অ্যালার্জির কারণে বিড়াল পুষতে পারেনি। সেই ছোট্ট ছেলেটিই এখন পুড়ে যাওয়া শরীরে অপারেশনের ব্যথা সহ্য করছে, মুখে সাহসের কথা বলছে — “আমি তো বন্ধুদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, আমি নিশ্চয়ই বাঁচব।”

দীপ্তর ড্রেসিং হচ্ছিল যখন অপারেশন থিয়েটারের সামনে তার বাবা, মামা ও অন্যান্য আত্মীয়রা উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছিলেন। চোখে জল, মনে প্রার্থনা—এই শিশুটি যেন ফিরে আসে, ফিরে যায় পাখিদের কাছে, ছোট বোনের খুনসুটির ভেতরে, এবং সেই স্কুলে, যেখানে সে স্বপ্ন দেখত প্রতিদিন।

 

শেখ ফরিদ

×