
.
ফেনীতে বন্যার পানি একদিকে যেমন নামছে অন্যদিকে তেমনি বাড়ছে। জেলার মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর ২১টি ভাঙা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফুলগাজীতে মাছ ধরতে গিয়ে একজন মারা গেছেন। এদিকে, চারদিন ভারি বৃষ্টির পর নোয়াখালীতে দেখা মিলেছে রোদের। বৃষ্টির বিরতিতে স্বস্তি ফিরলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। জেলা সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাটসহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক গ্রাম এখনো পানির নিচে। এ ছাড়া, খাগড়াছড়িতে বৃষ্টি কমে আসায় মাইনী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে মেরুংবাজার, সোবহানপুর, চিটাগাংপাড়া, কবাখালীসহ বিভিন্ন নিম্নঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে পানি নামছে। খবর নিজস্ব সংবাদদাতা ও পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধির।
ফেনীতে বন্যার পানি একদিকে নামছে অন্যদিকে বাড়ছে। জেলার মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ২১টি ভাঙা স্থানে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে প্লাবিত হতে শুরু করে। মোটবী ইউনিয়নের ইজ্জতপুর উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ওই রাতে ১৬টি পরিবারের ৫০জন আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্লাবিত হয়েছে তিন উপজেলার ১১৪টি গ্রাম।
ফুলগাজী ও পরশুরামের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও অবনতি হয়েছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার। এখনো পানিবন্দি শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এদিকে, ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তি উপজেলার দৌলতপুর বন্দুয়ার বাসিন্দা।
ফুলগাজী ও পরশুরামের পানি নামতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে, নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম। এতে করে পানিতে তলিয়ে আছে মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ফসলি জমি। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ।
স্থানীদের অভিযোগ, গত বছরের বন্যার ক্ষত কাটিয়ে না উঠতেই আবার বন্যার কবলে পড়ে এবার নিঃস্ব হয়েছি। এদিকে, বন্যায় বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিলেও পোকামাকড় আর সাপের উপদ্রবে আতঙ্কে দিন পার করছেন বানভাসিরা। সামরিক বেসামরিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বানবাসী মানুষ ত্রাণ সহায়তা চায় না। তারা চায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ। তারা টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধান চায়।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ফেনীর বন্যা কবলিত পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া (আংশিক), ফেনী সদর (আংশিক) ও দাগনভূঞা (আংশিক) উপজেলার ১১৪টি গ্রামের জনগণের দুর্ভোগ কমাতে সকল অংশীজনের সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ৮২টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার ২০০ মানুষ অবস্থান করছেন। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় দুর্যোগে সবচেয়ে নাজুক গর্ভবতী নারী ও অসুস্থ ১৮ জনকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয়েছে।
অপরদিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধার তৎপরতা ও রান্না করা খাবার এবং তাদের ত্রাণ সহায়তায় সম্মিলিত কাজ করে সেনা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ২১টি স্থান ভেঙে ১১৪ গ্রাম প্লাবিত হয়।
নোয়াখালী ॥ টানা চার দিনের ভারি বৃষ্টিপাত শেষে নোয়াখালীতে দেখা মিলেছে রোদের। শুক্রবার সকাল থেকেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে আসে। রোদের ঝলকানিতে খানিকটা স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মনে। এদিকে, বৃষ্টির বিরতিতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বাজার-হাটে থৈ থৈ পানি। দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি লাখো মানুষ।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, নোয়াখালীর পৌরসভাগুলোতে জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। যা অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, খাল ও ড্রেনগুলো দখলের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। এসব ড্রেন ও খালগুলো পুনরুদ্ধারে পৌরসভাকে বারবার নির্দেশনা দিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯টি খাল চিহ্নিত করেছে যা পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নেবে এবং বিএডিসির প্রকল্পের আওতায় ১৭১ কিলোমিটার খাল খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কাজগুলো বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসন হবে। আকাশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কেটে যাবে বলে আশা করছি।
খাগড়াছড়ি ॥ টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নে। টানা পাঁচদিন পর শুক্রবার সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে দুর্গত মানুষের মধ্যে। বৃষ্টি কমে আসায় নিম্নঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধীরে ধীরে পানি নামছে। যদিও কিছু স্থানে এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে, তবে স্থানীয়রা ঘরবাড়ি মেরামত ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন।
বন্যার কারণে দীঘিনালা-লংগদু সড়কে তিনদিন যান চলাচল ব্যাহত হলেও পানি কমায় এখন সব ধরনের যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে, লংগদুর সঙ্গে খাগড়াছড়ি ও দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায়।
প্যানেল