ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাইয়ের দিনগুলি: ১০ জুলাই

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ১০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৮:৫৯, ১০ জুলাই ২০২৫

জুলাইয়ের দিনগুলি: ১০ জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচির তৃতীয় দিনে সারাদেশে প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। রাজধানী ঢাকা কার্যত দেশের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, কারণ শহরের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

এদিন সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ ও সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে কাঁটাবন, নীলক্ষেত, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, বাংলামটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মহাখালী, চানখাঁরপুল, বঙ্গবাজার, শিক্ষা চত্বর, মৎস্য ভবন, জিপিও, গুলিস্তান, রামপুরা ব্রিজ, আগারগাঁও, হাতিরঝিল মোড়, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মগবাজার-সাতরাস্তা ফ্লাইওভারসহ ১৭টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ‘ব্লকেট’ তৈরি করে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মহাখালী ও কারওয়ান বাজার রেলক্রসিংয়ে কাঠের গুঁড়ি ফেলে রেল চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে ঢাকা থেকে সারাদেশের রেলযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সবচেয়ে শক্তিশালী আন্দোলন চলে মহাখালী এলাকায়, যেখানে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আমতলীতে অবস্থান নিয়ে ফ্লাইওভার ও রেলক্রসিং অবরোধ করে রাখেন।

বাংলা ব্লকেডের প্রভাবে রাজধানী ছাড়িয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, সিলেট, রংপুর, বরিশালসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন।

বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ।

ডুয়েট (গাজীপুর): ঢাকা-জয়দেবপুর-শিমুলতলী সড়ক ও ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ অবরোধ।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ।

খুলনার বিএল কলেজ: খুলনা-যশোর মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েট: ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক আটকে বিক্ষোভ।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: বৃষ্টিতে ভিজেই সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ।

বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুরসহ অন্যান্য জেলাগুলোতেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

এদিন সকালে কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল চেয়ে সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চ ৭ আগস্ট পর্যন্ত সব বিষয়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। এতে কার্যত আগের হাইকোর্ট রায় বহাল থাকে—যেটি কোটা বাতিলকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল।

এরপরই দুপুরে শাহবাগ মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ ৫% কোটা রেখে সব গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করতে হবে। যৌক্তিক সংস্কার ছাড়া আন্দোলন চলবে।”

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তার সঙ্গে থাকা সারজিস আলম বলেন, “নির্বাহী বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কেউ যদি আজকেই ঘোষণা দেন বা ত্রুটিহীন পরিপত্র জারি করেন, তাহলে আমরা রাজপথ ছেড়ে পড়ার টেবিলে ফিরব। রাজপথ আমাদের স্থায়ী জায়গা নয়।”

তবে শিক্ষার্থীদের এই ঘোষণার পরই নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান, আদালতের আদেশের প্রতি সম্মান জানাতে বলেন।

তবে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থানে অনড়, এবং বলেছে—যতক্ষণ পর্যন্ত সংসদে আইন পাস করে যৌক্তিক সংস্কার না হবে, ততক্ষণ তারা আন্দোলন থেকে সরে আসবে না।

ফারুক

×