
ছবি: সংগৃহীত
গত মে মাসে দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ৬৫২টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫৮ জন। এর মধ্যে শুধু সড়কপথেই ৫৯৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬১৪ জন, আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ১৯৬ জন। নিহতদের প্রায় ৪১ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে। সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটর করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
মোটরসাইকেলই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসে ২৩৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহতের ৪১.৬৯ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১ জন মোটরসাইকেল আরোহী আহত হয়েছেন।
বিভাগভিত্তিক চিত্র
দুর্ঘটনার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এখানে মে মাসে ১৩৯টি দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত হয়েছেন। বিপরীতে বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম—৩০টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন।
নিহতদের পেশাগত পরিচয়
নিহতদের মধ্যে ১৫৪ জন চালক, ১০৩ জন পথচারী, ৬৭ জন পরিবহন শ্রমিক এবং ৯২ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়া ৮৮ জন নারী এবং ৫৮ জন শিশু দুর্ঘটনায় নিহত হন।
কী কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা?
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের সংখ্যা ৯৪৫টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল মোটরসাইকেল—২৯.৪১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান (২২.৫৩ শতাংশ)। এর পর রয়েছে বাস (১২.৪৮ শতাংশ) এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক (১৪.১৭ শতাংশ)।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে—
- সড়কে তিন চাকার যানবাহনের অবাধ চলাচল
- সড়কে রোড সাইন, লাইট বা টার্নিং চিহ্নের অভাব
- যানবাহনের ত্রুটি ও ফিটনেসবিহীন অবস্থা
- অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া গতি
- ট্রাফিক আইন অমান্য
- উল্টো পথে গাড়ি চালানো
- পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন
- সড়কে চাঁদাবাজি এবং চালকদের দীর্ঘ কর্মঘণ্টা
দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ
- সমিতি দুর্ঘটনা রোধে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ
- সড়কে রাতে পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করা
- ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালকের প্রশিক্ষণ ও যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়া
- আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা
- সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ ও চালকদের বেতন-সময় নির্ধারণ
- ডিজিটাল পদ্ধতিতে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন
- মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন সরিয়ে ফেলা
জনস্বার্থে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সড়কে প্রাণহানি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
রাকিব