ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

১৮ কোটি টাকার সড়কের কাজ, শেষ না হতেই উঠে যাচ্ছে পিচ

মিজানুর, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৫ মে ২০২৫

১৮ কোটি টাকার সড়কের কাজ, শেষ না হতেই উঠে যাচ্ছে পিচ

ছবিঃ সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাড়ে আট কিলোমিটার সড়কের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর আগেই উঠে যাচ্ছে পিচ ও পাথরের ঢালাই। হাতের খোঁচায় উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং, পায়ে লাগছে গলিত পিচ এমন দৃশ্য দেখে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ পাওয়া মো. বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ভূরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ড থেকে ধলডাঙ্গা ঘাটপার পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৭ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ২২৮ টাকা। এর মধ্যে বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মিটার আরসিসি ঢালাই এবং বাকি অংশ কার্পেটিং করার কথা।

সরকারের উন্নয়ন সহযোগী এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। দরপত্রে কাজটি পায় কুড়িগ্রামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আরএবি-আরসি-বিসি-এইচটি জেভি’। কিন্তু পরে ঠিকাদার কাজটি মো. বেলাল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে সাব-কন্ট্রাক্টে দিয়ে দেন। কাজ শুরুর সময় ধরা হয় ৫ জানুয়ারি ২০২৪, আর শেষ হওয়ার কথা ৩০ জুন ২০২৫।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে বহু স্থানে রাস্তার পিচ উঠে গেছে। কোথাও কোথাও দেখা গেছে, ধুলাবালি ও ময়লা পরিষ্কার না করেই পিচ ঢালাই করা হয়েছে। এতে বিটুমিন ঠিকমতো না বসায় কিছু অংশে পায়ে ঘষলেই উঠে যাচ্ছে পিচ। যানবাহনের চাকার দাগ পড়ে আছে কার্পেটিংয়ে। এতে প্রশ্ন উঠেছে, নির্মাণ সামগ্রীর মান ও কাজের তদারকি নিয়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলাচল করে। অথচ এমন একটি রাস্তায় অপরিকল্পিত, কম পুরুত্বের এবং নিম্নমানের কার্পেটিং করা হয়েছে। পিচের সঙ্গে বিটুমিন কম দেওয়া হয়েছে, ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট ও অন্যান্য উপকরণ। এমনকি রোলার ও কম্প্রেশার মেশিন দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার না করেই ঢালাই করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাস্তার নিম্নমানের কাজের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হলে স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দেন। পরে এলজিইডির প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ বিষয়ে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ পাওয়া মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘কাজ এখনো চলমান। কিছু জায়গায় বিটুমিন ভালোভাবে জমাট না বাঁধায় মোটরসাইকেল চালানোর কারণে পিচ উঠে গেছে। পরে আমরা তা ঠিক করেছি।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রকৌশলী ইনছাফুল হক সরকার বলেন, ‘কাজে কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি। কিছু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তা ঠিক করতে বলা হয়েছে।

তবে এলাকাবাসীর দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বের করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

আরশি

×