ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

ডিক্যাব অনুষ্ঠানে মাইকেল মিলার

নির্বাচনের সময় নিয়ে ইইউ কাউকে চাপ দেবে না

কূটনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ৫ মে ২০২৫

নির্বাচনের সময় নিয়ে ইইউ কাউকে চাপ দেবে না

মাইকেল মিলার

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কাউকে চাপ দেবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন কখন হবে, সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণকেই নিতে হবে। তবে নির্বাচনের আগে সংস্কারগুলো সম্পন্ন করা প্রয়োজন, সেটির জন্য উপযুক্ত সময় দরকার।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মাইকেল মিলার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে সংস্কারমুখী পদক্ষেপে একযোগে কাজ করার প্রত্যাশা রাখছে ইইউ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে সহযোগিতা করতে ইইউ আগ্রহী। তবে নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের ওপরই বর্তায়। আরেক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত জানান, গত জুলাইয়ে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের বিচারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শতভাগ আস্থা রেখেছে।
মাইকেল মিলার বলেন, আমি যখন এখনকার পরিস্থিতি এবং পরবর্তী ধাপে রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে তাকাই, তখন কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করতে হলে সাক্ষ্যপ্রমাণ লাগবে। যদি সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকে, তাহলে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর বিচার যখন শুরু হবে, তখন অকারণ দেরি করা ঠিক হবে না।
রাখাইনে মানবিক করিডর নিয়ে এক প্রশ্নে আন্তঃসীমান্ত সহায়তা পাঠানোর জন্য সরকারগুলোর সম্মতি এবং মানুষের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত মিলার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানবিক অংশীদার হিসেবে, শরণার্থীদের সহায়তার ক্ষেত্রে বাস্তববাদী থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত। শরণার্থীরা এখানে থাকলে, আমরা তাদের প্রয়োজন এখানে মেটাব। তারা যদি সীমান্তের অপর প্রান্তে থাকে, তাহলে আমাদের দেখতে হবে কীভাবে ওই প্রান্তেও সহায়তা পাঠানো যায়। কেননা, এর মধ্য দিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি ভালো হতে পারে।
মিলার বলেন, এটা আন্তঃসীমান্ত সহায়তাও হতে পারে। আমরা আন্তঃসীমান্ত সহায়তা পৃথিবীর নানা স্থানে করেছি এবং এটা কাজ করতে পারে। তবে, এটা কেবল তখনই কাজ করতে পারে, যখন দুই প্রান্তের মানুষগুলো নিরাপদ থাকে এবং সরকারগুলো একমত হয়।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ব্রাসেলস সফর করে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। অন্যান্য দলও ইইউ’র রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে বলে তিনি জানান।
রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার মনে করেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে দেশে সংস্কার আনার একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, এই সুযোগ যেন সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটিই এখন গুরুত্বপূর্ণ। রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, উভয়পক্ষের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানবিক সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন। ত্রাণ যেন সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায়, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। করিডর বা সেফ প্যাসেজ তৈরির ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যেই তা নিশ্চিত করতে হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগের সরকারের ধারাবাহিকতায় (ইনহেরিটেন্ডলি) কিছু সমস্যা নিয়ে গঠিত হয়েছে। সেই কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটি কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না। এ ছাড়া রাষ্ট্রদূত বাণিজ্য-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন।
ইইউ’র দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার সহযোগিতা চেয়েছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউতে পাচার হওয়া অর্থ যদি বর্তমান সরকার ফেরত আনতে চায়, তবে এ নিয়ে রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যোগাযোগ করতে হবে।
বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি হবে মৌলিক অধিকার ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার জীবদ্দশায় ইউরোপের প্রায় অর্ধেক দেশ কর্তৃত্ববাদ থেকে গণতন্ত্রের পথে এসেছে এবং এই কাজটি বাংলাদেশ এখন করছে।
বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা এবং সুশীল সমাজকে গুরুত্ব দেওয়া। আমরা চাই, বাংলাদেশ তার অর্থনীতি উন্মুক্ত করুক। যাতে ইউরোপের কোম্পানিগুলো এখানে ব্যবসা করতে পারে। পানি, ডিজিটাল, পরিবহন, জ্বালানি, অবকাঠামোসহ অন্যান্য খাতে ইউরোপের কোম্পানিগুলো আগ্রহী বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইইউ রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা এখনো বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি যে পরিস্থিতি উন্নতির পথে আছে। আর বর্তমান পরিস্থিতি গ্রাউন্ড বাস্তবতা দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে করতে হবে। ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিনের সভাপতিত্বে ডিক্যাব টকে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।

আরো পড়ুন  

×