
ছবি আল জাজিরা
মাত্র ১০ বছর বয়সে মাথায় গুলির আঘাত পেয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে ইমরান। সেই ছোট্ট ছেলেটি আজও হাসপাতালে শুয়ে, তার মায়ের চোখে অস্থিরতা, ক্লান্তি ও এক ধরনের অব্যক্ত কান্না। এ এক রাষ্ট্রীয় সহিংসতার নির্মম প্রতিচ্ছবি—যেখানে শিশুদেরও রক্ষা নেই।
ঘটনাটি ঘটে ৫ আগস্ট। সেদিন রাজধানীর একটি বিক্ষোভে ইমরান উপস্থিত ছিল। সে বড়দের সঙ্গে পায়ে পায়ে হেঁটেছিল, তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আওড়েছিল প্রতিবাদের স্লোগান। আর তখনই—ঠিক সেই মুহূর্তে—তার মাথায় এসে লাগে একটি গুলি। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেদিনই এই ছোট্ট প্রতিবাদকারী গুলিবিদ্ধ হয়।
ইমরানের মা আইরিন বলেন, আমি জানি না কেন তারা ওকে গুলি করল। সে তো একটা শিশু! কী দোষ ছিল তার? আমি থানায় মামলা করেছি, কিন্তু এরপরই আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে—বলা হয়েছে আমি যেন এলাকাতে না যাই।
এই ঘটনার পর ইমরানকে ভর্তি করা হয় ঢাকার একটি সামরিক হাসপাতালে। ডাক্তাররা বলেন, মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছিল সে। রক্তক্ষরণ থামাতে কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করতে হয়। তবুও—অলৌকিকভাবে—সে বেঁচে গেছে। এখন তার বয়স ১১, তবে তার শৈশব আর আগের মতো নয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলমান বিক্ষোভে ইমরানের মতো অনেক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে, কেউ প্রাণ হারিয়েছে, কেউ আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছে। ১৮০ শিশুসহ নিহত হয়েছেন ১,৪০০ জন।
ইমরানের বেঁচে থাকাটাই যেন একপ্রকার রাজনৈতিক ব্যর্থতার সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায়—প্রতিটি শিশু যুদ্ধে শিকার হলে জাতি কতটা ব্যর্থ হয়।
আইরিন বলেন, আমি শুধু চাই, আমার ছেলেটা আবার স্কুলে যেতে পারুক। আবার হাসতে পারুক। আর কেউ যেন এমন না হয়।
তথ্যসূত্রঃ আল-জাজিরা