স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনছে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার এলাকায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক কারবারে জড়িতদের শতকরা ৮০ ভাগই রোহিঙ্গা। তারা মিয়ানমারের মানুষ হওয়ায় সেই এলাকা ও সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের ধারণা রয়েছে। আবার এখানেও উদ্বাস্তু হিসেবে দীর্ঘদিন থাকায় এখানকার পরিবেশ সম্পর্কেও তাদের ভাল একটা ধারণা জন্মেছে। ফলে রোহিঙ্গারাই মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়েছে। র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ ইয়াবা, স্বর্ণ ও নগদ টাকা উদ্ধার সংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মাদক উদ্ধার করা খুবই কঠিন। কারণ রোহিঙ্গারা পাহাড়ী এলাকায় ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছে। ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সহজে ইয়াবা বহন, মজুদ, কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, মাদক কারবারে রোহিঙ্গারা জড়িত না থাকলে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক কারবার বন্ধে সহজে সফলতা অর্জন করতে পারত। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় রোহিঙ্গা মাদক কারবারিরা দিন দিন কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। আবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয়রাও মাদক কারবারে জড়িত রয়েছে। র্যাব-১৫ সদস্যরা অপরাধ দমনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও কাজ করছে। যার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সম্প্রতি ৪৫ লাখ ইয়াবার একটি বড় চালান র্যাব আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
র্যাব-১৫ এর সঙ্গে কক্সবাজার জেলা পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএনসহ সরকারের সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করে কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ। র্যাব-১৫ সীমিত জনবল নিয়ে মূলত জঙ্গী, মাদক, অস্ত্র, হত্যা, ধর্ষণ প্রতিরোধকে প্রাধান্য দিয়ে কক্সবাজারে কাজ করছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১৫ প্রধান উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সদস্য মাদক কারবারে জড়িত আছে কিনা এ ধরনের কোন তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেলে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। কিশোর গ্যাং এর অপরাধ দমনেও র্যাব-১৫ কাজ শুরু করেছে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান। আদালত থেকে জামিন পাওয়া মাদক কারবারিদেরও তারা মনিটরিংয়ে রেখেছেন।
টেকনাফের দক্ষিণ ডেইল পাড়া থেকে মঙ্গলবার রাতে ৫৭ ভরি স্বর্ণ, ৩২ হাজার পিস ইয়াবা ও সাড়ে ৪ লাখ নগদ টাকাসহ নুরুল আলম নামে এক ব্যক্তিকে আটক করার পর বুধবার রাতেও র্যাবের অভিযানে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে আরও এক রোহিঙ্গা। রামুর খুনিয়াপালং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার ইয়াবাসহ হামিদ হোসেন নামের এক রোহিঙ্গা মাদক কারবারিকে আটক করেছে র্যাব। বুধবার সন্ধ্যার পর এ অভিযান চালানো হয়। আটক ব্যক্তি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪, ব্লক জি-১-এ এর আবদুস সালামের পুত্র। বৃহস্পতিবার সকালে এ সংবাদ জানিয়ে র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী বলেন, কতিপয় মাদক কারবারি খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে পাকা রাস্তার ওপর ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে জেনে র্যাব-১৫ এর একটি চৌকস দল অভিযান চালায়। র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাবার প্রাক্কালে হামিদ হোসেনকে আটক করে। পরে তার শপিং ব্যাগ তল্লাশি করে ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত রোহিঙ্গা স্বীকার করে যে, সে দীর্ঘদিন যাবত টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ইয়াবা কিনে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করে আসছে।