রাজন ভট্টাচার্য ॥ ইট পাথরের এই শহরে জলাশয়ের চারপাশজুড়ে সবুজে ঘেরা জায়গা খুব কমই মেলে। এ রকম পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন হাতিরঝিল প্রকল্প। রাজধানীর ‘ফুসফুস’ হিসেবেও প্রকল্পটি শুরুতে খ্যাতি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পটিতে আধুনিক নির্মাণশৈলীর ছোঁয়া পরতে পরতে। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নির্মাণ শেষে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সংসদ অধিবেশনে প্রশংসাও হয়েছে বেশ। ঢাকা শহরে এরকম প্রকল্প দেখে রীতিমতো মুগ্ধ প্রবাসীরাও। তুলনা করা হয় বিশ্বের ছোটখাটো আকর্ষণীয় বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গেও। আবার খোদ এই নগরীতে এমন সৌন্দর্যখচিত একটি স্থাপনা থাকতে পারে তা কেউ কেউ বিশ্বাসই করতে চান না। রাজউকের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ছিল সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ। প্রকল্পের কাজ শেষ। এখন প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যুতি দৃশ্যমান। প্রায় পাঁচ মাস চলছে করোনা কাল। ছোঁয়াচে রোগে সংক্রমণের ভয়ে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া মানা। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের এখন দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। তবে ঈদ শেষে এখনও জমে ওঠেনি রাজধানী। ফাঁকা বেশিরভাগ সড়ক ও বিনোদনকেন্দ্র। এই সুযোগে বহুল কাক্সিক্ষত হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরে বেড়ানো মন্দ না! তীব্র গরমের মধ্যেও তেমন লোকজনের ভিড় নেই এখানে।
শুরুটা কোথা থেকে হবে। গুলশান, রামপুরা, বেগুনবাড়ি কিংবা বাংলামোটর যেকোন প্রান্ত থেকেই হতে পারে। শুরুতেই স্বাগত জানাবে প্রকল্পের লেকজুড়ে ময়লা পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানির ঘ্রাণ। আহ! দূষিত বাতাসে বেড়ানোর ইচ্ছাটা একেবারেই ফিকে হয়ে যেতে পারে! কিন্তু প্রকল্পের মূল নক্সায় হাতিরঝিলের ময়লা পানি সেচ দিয়ে শীতলক্ষ্যায় নেয়ার কথা ছিল। আর শীতলক্ষ্যা থেকে পরিশোধিত স্বচ্ছ পানি পাইপ দিয়ে লেকে ফেলার কথা। প্রকল্পের কাজ শেষ। কিন্তু সেই চিন্তা ও পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন কর্তৃপক্ষ! ফলে অনেকটা সবুজে ঘেরা এ প্রকল্পে মূল সমস্যা হলো দুর্গন্ধযুক্ত পানি। তাই যে চিন্তা থেকে বিশাল ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে- তা অনেকটাই ম্লান করেছে শুধুমাত্র ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। শুধু তাই নয়, ময়লা পানির গন্ধে রীতিমতো অতিষ্ঠ আশপাশের আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।
সম্প্রতি রাজধানীর হাতিরঝিলের পানি যেকোন মূল্যে দূষণমুক্ত রাখতে ও আশপাশের এলাকার স্যুয়ারেজ লাইনের ময়লা হাতিরঝিলে প্রবেশ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। একই সঙ্গে দূষিত পানি দ্রুত অপসারিত করতে নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু রাখারও নির্দেশ দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও নির্মল পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য। কিন্তু প্রতিনিয়ত আশপাশের এলাকা থেকে স্যুয়ারেজ লাইনের দূষিত পানি ও ময়লা আবর্জনা পরিবেশ দূষণ করছে ও এর পানিতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করছে। এতে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। দূষিত পানি ও আবর্জনা পচা গন্ধে এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যহানির ঘটছে। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। তিনি বলেন, যেকোন মূল্যে আশপাশের এলাকার স্যুয়ারেজ লাইনের ময়লা হাতিরঝিলে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে যেন দূষিত পানি দ্রুত অপসারিত হতে পারে।
বুধবার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভর বর্ষায় হাতিরঝিলের লেকজুড়ে খরা চলছে। যেন চৈত্র মাস। কম পানি। কালো কুচকুচে রং। কোথাও কোথাও ময়লা আবর্জনা জমতে জমতে স্তূপ হয়ে আছে। বসুন্ধরা-কাঁঠালবাগান-সেন্ট্রাল রোড হয়ে আসা লেক থেকে রাতদিন ময়লা পানি গড়িয়ে পড়ছে হাতিরঝিলের লেকে। প্রকল্প এলাকাঘুরে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের আরও অনেক চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের চারপাশজুড়ে রয়েছে নানা রকমের সাইনবোর্ড। এর একটিতে লেখা রয়েছে, ‘হাতিরঝিলের রাস্তায় রিক্সা, ভেন ও ঠেলাগাড়ি প্রবেশ নিষেধ’। কে শোনে কার কথা। সবকিছু চলছে হরদম। দেখার যেন কেউ নেই।
প্রকল্পজুড়ে দৃষ্টিনন্দন বাহারি ফুলের সমারোহ এখন আর খুব একটা নেই। অনেক স্থানে ফুল গাছ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। প্রকল্পের মগবাজার ও সোনারগাঁও অংশে দেখা গেছে ওয়াকওয়েতে গাছ উপড়ে পড়ে আছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দিনের পর দিন গাছগুলো পড়ে থাকলেও তুলে নেয়া হচ্ছে না। এতে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বাতাসে গাছের ডাল ভেঙ্গেও রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো প্রকল্পজুড়ে আধুনিক বিন স্থাপন করা হয়েছিল। এর বেশিরভাগই এখন নেই। কিছু থাকলেও অর্ধেক অংশ টিকে আছে। বিনগুলো প্রকাশ্যে ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে নেশাখোরের দল। আরেকটি বড় সমস্যা হলো ভবঘুরে মানুষের উৎপাত। মগবাজার ও বেগুনবাড়ি অংশে সবচেয়ে বেশি ভবঘুরে দেখা গেছে। করোনার কারণে প্রকল্পের তদারকি কমেছে। এই সুযোগে ঠাঁই নিয়েছে ভাসমান মানুষ। প্রকল্পের ঘাস আর বসার স্থানগুলোতে কাপড় চোপড় শুকাতে দেখা গেছে। তেমনি বেঞ্চগুলোতে ঘুমাতে দেখা যায় ভাসমান লোকদের। যেখানে সেখানে মলমূত্রও রয়েছে। উল্টোপথে গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়।
পর্যটকরা জানিয়েছেন, ভবঘুরে মানুষ সব সময় টাকার জন্য হাত পাতে। না দিলে অশোভন আচরণ করে। এমনকি দুর্বল ভেবে গায়ে পর্যন্ত হাত দেয়। সুজন নামে একজন অভিযোগ করলেন, ঈদের পরদিন তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে কয়েক যুবক। পলাশ বলেন, ঈদ শেষে ঘুরতে এসে দেখি ওয়াটার টেক্সি বন্ধ। তাছাড়া পানির যে দুর্গন্ধ এতে ওয়াটার টেক্সিতে চলাচল করা মোটেই সম্ভব হবে না। টেক্সি ঘাটে তেমন একটা লোকজন দেখা যায়নি। ঘাট সংশ্লিষ্ট দুজনেই জানালেন, ময়লা পানির কারণে এখন আর নৌকা ভ্রমণে শৌখিন মানুষের আনাগোনা তেমন নেই। তাছাড়া করোনার কারণে এমনিতেই লোক সমাগম কম।
তবে সচল আছে চক্রাকার বাস সার্ভিস। যাত্রী কম হওয়ার কথা বলেছেন চালকসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, করোনার কারণে এমনিতেই গণপরিবহনে লোকজন কম ওঠে। তাছাড়া সন্ধ্যার পর যাত্রীরা চলাচলে নিরাপদ বোধ করেন না। ফলে যাত্রী একেবারেই কমেছে। আয় কম হওয়ায় আমাদের বাস চালানো একেবারেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
ওয়াটার টেক্সি ঘাটের ঠিক সামনে উন্মুক্ত মঞ্চ রয়েছে। সেখানেও দেখা গেছে ভাসমান মানুষের উৎপাত। প্রকল্প পরিচালন ব্যয় তোলার চিন্তা থেকেই এই উন্মুক্ত মঞ্চ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। যেখানে নাটক, গানের অনুষ্ঠানসহ নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। করোনাকালে এখন একেবারেই সব বন্ধ।
জানা গেছে, হাতিরঝিল প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও রাজধানীর দৃষ্টিনন্দন এ প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের ভার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের হাতেই থাকছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। সম্প্রতি বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকায় সমন্বিত উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন স্কিম প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এবং হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে বলা হয়, বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পটি সরকারের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা এবং পয়োবর্জ্য পূর্ণ হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি খালকে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে একটি স্টর্ম ওয়াটার বেসিন তৈরি করা হয়েছে। একটি দৃষ্টিনন্দন জলাধার এবং সবুজের সমারোহ পরিপূর্ণ স্থান হওয়ায় হাতিরঝিল রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে চিঠিতে।
সেখানে বলা হয়েছে, হাতিরঝিল প্রকল্পটি উন্মুক্ত স্থান হওয়ায় দেশী-বিদেশী পর্যটক ও সাধারণ মানুষের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য বিনোদনকেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নগরবাসীর কাছে নান্দনিক এ প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা ‘দীর্ঘমেয়াদী করার জন্য’ পুরো প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচী নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
রাজউকের প্রস্তাবে হাতিরঝিল প্রকল্পের জন্য বার্ষিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৭৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। প্রকল্প থেকে বার্ষিক ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ৪৮৪ টাকা আয় হবে বলে রাজউকের প্রস্তাবে বলা হয়েছে। বাকি ১৭ কোটি ৭৮ লাখ ৩৫ হাজার ৫১৬ টাকা সরকারী কর্মসূচী ব্যয় হিসেবে সংগ্রহ করা জন্য প্রস্তাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়েছে রাজউক। রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি আমরা প্রস্তাব আকারে পাঠিয়েছি।
২০০৭ সালে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালের জুন মাসে। পাঁচ দফা বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। ২০১৭ সালে আরেকবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা।
হাতিরঝিল প্রকল্পে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কাজের অংশের পরামর্শক স্থপতি ইকবাল হাবিব বিকল্প উপায়ে বর্জ্য পরিশোধনের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথাগত ড্রেনেজ বা পয়োলাইনের পরিবর্তে হাতিরঝিলের দূষণ দূর করতে সূর্যের আলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এর জন্য ‘সোলার ইকুইটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ দরকার। বিদেশে এর ব্যবহার রয়েছে। পান্থপথ, মহাখালী বক্স কালভার্ট ছাড়াও টঙ্গী ডাইভারশন রোড, তেজগাঁও, বেইলী রোড, মগবাজার, রামপুরাসহ মোট ১১টি পথ ধরে হাতিরঝিলে বৃষ্টির পানি ও আবর্জনা যায়।
প্রকল্পের পশ্চিমাংশে ঝিলে কঠিন বর্জ্য যাতে না পড়ে, সেজন্য সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে বৈদ্যুতিক ছাঁকনি (মেকানিক্যাল স্ক্রিন) বসানো হয়। সেই ছাঁকনিতে বর্ষার সময় দেখা যায় মরা মুরগি, গরু ছাগলের নাড়িভুঁরি, বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট, লেপ-তোষক-বালিশের অংশবিশেষ।
বুয়েটের অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ মুজিবুর রহমান বলেন, বৃষ্টির পানি যাওয়ার পথ থেকে পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালির বর্জ্য আলাদা করা খুব জরুরী। প্রথমেই প্রান্থপথ কালভার্টে বৃষ্টির পানি যাওয়ার লাইন থেকে পয়োবর্জ্যরে লাইন সরিয়ে আনতে হবে। ৩১১.৭৯ একর জায়গাজুড়ে হাতিরঝিল প্রকল্প। এ প্রকল্পে ১৭ কিলোমিটার সড়ক, ২টি ইউলুপ, ৪টি ব্রিজ, ৩টি ভায়াডাক্ট এবং ৪টি ওভারপাস তৈরি রয়েছে। বেগুনবাড়ি খাল এ প্রকল্পকে দৃষ্টিনন্দন করেছে।
প্রকল্পের সোনারগাঁও অংশে গাছের ডালপালার আড়ালে একটি বড় সর সাইনবোর্ড দেখা যায়। সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে এই সাইনবোর্ড টানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এত লেখা নয়টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, হাতিরঝিল জনগণের সম্পদ এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের সকলের দায়িত্ব। প্রকল্পটি জনগণের অর্থে সম্পন্ন করা হয়েছে, এ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ সকলের দায়িত্ব। প্রকল্পটি একটি লেক ও পার্ক এলাকা বিধায় নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যতীত প্রকল্প অভ্যন্তরে ও সড়কে গাড়ি পার্কিং নিষেধ। অথচ সাইনবোর্ডের চারপাশজুড়ে বুধবার বিকেলে অংখ্য প্রাইভেটকার পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসা বাড়ির যানবাহন এখানে রাখা হয়। সাইবোর্ডে লেখা অন্য নির্দেশনাসমূহের মধ্যে রয়েছে, প্রকল্পে ব্যবহৃত নির্ধারিত বাস ব্যতীত অপরাপর বাস ট্রাক কাভার্ডভ্যানসহ যেকোন ধরনের যানবাহন প্রবেশ ও রিক্সা চলাচল নিষেধ। প্রকল্পের অভ্যন্তরে গাছ ও বাগানসহ পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হউন এবং অপরকে পরিবেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করুন। গতি সীমা, সড়ক সংকেত এবং ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট পথে গাড়ি চালান। প্রকল্প এলাকায় হকার, অস্থায়ী দোকানপাট তথা ব্যবসা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। প্রকল্পের অভ্যন্তরে খাবার/চিপস/পানি/ কোমল পানি জাতীয় বোতল ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় যত্রতত্র ময়লা ফেলা নিষেধ, নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ব্যবহার করুন’। অথচ নির্দেশনার একটিও বাস্তবায়নের চিত্র চোখে পড়েনি।
হাতিরঝিল নিয়ে মিস প্ল্যান হয়েছে- আতিকুল ইসলাম ॥ রাজধানীর হাতিরঝিল নিয়ে মিস প্ল্যান হয়েছে বলে কয়েকদিন আগে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ২০ থেকে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত মাথায় রেখে এর প্ল্যান করা হয়েছে। বাংলাদেশ তো বৃষ্টিপ্রবণ দেশ। ছয় ঋতুকে মাথায় রেখেই প্ল্যানটি করা উচিত ছিল। ৫০ থেকে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে ঢাকার অবস্থা কী হবে সেটাও ভাবার দরকার ছিল। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে যাদি পরিকল্পনাটি করা হতো, তাহলে আজ ঢাকার এমন দশা হতো না।
বর্তমানে ডিএনসিসি এলাকায় মগবাজার প্রধান সড়ক, জাহান বক্স লেন, শাহ সাহেব বাড়ি লেন, নয়াটোলা ও মধুবাগ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। হাতিরঝিল করার সময় যদি এই এলাকাগুলো নিয়ে পরিকল্পনা করা হতো, তাহলে এই সমস্যাটা হতো না। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীসহ হাতিরঝিল এলাকা পরিদর্শন করেছি।
হাতিরঝিল কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে মেয়র বলেন, হাতিরঝিল কর্তৃপক্ষের চিন্তা করতে করতেই অনেক বছর চলে যাবে। তারা এখনও চিন্তা করছে। তারা যতক্ষণে চিন্তা করছে, ততক্ষণে আমি প্রকল্প সাবমিট করে দিয়েছি। মন্ত্রণালয় যদি অনুমোদন দিয়ে দেয় আমি এখনই কাজ শুরু করব। আগামী বর্ষায় কেউ যেন ভোগান্তিতে না পড়ে। এই কাজগুলো করতে হবে। তার সঙ্গে সঙ্গে খাল ও সারফেস ড্রেনের সঙ্গে কানেকটিভিটি করে দিতে হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: