ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে কৃষি বিশেষজ্ঞদের তাগিদ;###; কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও কৃষি উপকরণ সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করতে হবে;###;করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের বিনা বাধায় বাজারে যেতে দিতে হবে

আবাদি জমি পতিত নয় ॥ প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলাতে হবে

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২৫ এপ্রিল ২০২০

আবাদি জমি পতিত নয় ॥ প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলাতে হবে

কাওসার রহমান ॥ সরকারী নির্দেশনা সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ে বাধার কারণে কৃষি উপকরণ বিপণনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষিপণ্য ও উপকরণ চলাচল ও ক্রয়-বিক্রয় লকডাউনের বাইরে রাখা হলেও সরকারের ওই সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, পুলিশের বাধায় দেশব্যাপী স্থানীয় বাজারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়ছে ফসল আবাদের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ ক্রয়-বিক্রয়। ফলে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনার সাধারণ ছুটির সময়ে দেশে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আর কৃষি উৎপাদন সচল রাখার জন্য কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণনের জন্য জনপ্রশাসন ও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে অন্তত চারটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষি সচিবের বরাত দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা এগুলোর কোন তোয়াক্কাই করছেন না। তারা অতি উৎসাহী হয়ে সারাদেশের স্থানীয় হাট-বাজারগুলো জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে কৃষি উপকরণ কিনতে গিয়ে কৃষক যেমন বিপাকে পড়ছেন। তেমনি উপকরণ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোও মাঠ পর্যায়ে তাদের উৎপাদিত কৃষি উপকরণ পৌঁছাতে পারছে না। আবার হাট-বাজার বন্ধ করে দেয়ার কারণে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রিও করতে পারছেন না। ফলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য খেতেই নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে আবাদি জমি ফেলে না রেখে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ প্রতিপালনের জন্য কৃষি সচিব করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাধারণ ছুটির সময়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থানপূর্বক নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালন ও অনুসরণ করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। করোনার সময়ে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রণোদনা থেকে কৃষকরা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে মাঠে ফসল চাষ করতে পারবেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশে গত পহেলা এপ্রিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মঈদ স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চলমান সেচ, সার ও বালাই ব্যবস্থাপনাসহ করণীয় বিষয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান; বোরো ফসল কর্তন ও মাড়াইয়ে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে শ্রমিক খরচ সাশ্রয় ও সঠিক সময়ে ফসল ঘরে তোলা; গম ফসল উপযুক্ত সময়ে কর্তন ও ব্লাস্ট সহনশীল বারিগম-৩৩ জাতের বীজ সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান, চলমান খরিপ-১ মৌসুমে আউশ ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলগত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ন করা; প্রতিটি বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ ও সম্ভাব্য স্থানে দুই সারি আদা ও হলুদ চাষের ব্যবস্থা করা, পুকুরপাড় ও রাস্তার পাশে সবজি চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা এবং বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ও আশপাশে সম্ভাব্য স্থানে পেয়ারা, লেবু, পেঁপে ও অন্য ফল চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা। এর সঙ্গে বিশেষভাবে কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, কৃষকের সঙ্গে থাকুন- কৃষকের পাশে থাকুন। এই নির্দেশনার পরদিনই অর্থাৎ ২ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আরও একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ইতিপূর্বে প্রদত্ত ৩টি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় ও মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়। মন্ত্রণালয়ের য্গ্মু সচিব দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়ে চলমান বোরো মৌসুমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে সার, বীজ, বালাইনাশক, সেচযন্ত্রসহ সকল কৃষিযন্ত্র এবং যন্ত্রের খুচরা যন্ত্রাংশ, কৃষি যন্ত্রে ব্যবহৃত জ্বালানি তথা ডিজেল, কৃষিজাত পণ্য ও উপকরণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পণ্য পরিবহন এবং ক্রয়-বিক্রয় অব্যাহত থাকবে। দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি হ্রাসে সকল কৃষকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের নির্দেশগুলো অনুসরণ এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয় নির্দেশনায় বলা হয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দফতর/সংস্থা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে। সময়ে সময়ে সরকারের জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এসব নির্দেশনা দেয়ার পর দেশে করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে ৬ এপ্রিল নতুন নির্দেশনা জারি করে কৃষি মন্ত্রণালয়। সরকারী এ প্রজ্ঞাপনে করোনাভাইরাসের সাধারণ ছুটির সময়ে কৃষি উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে মোট ৬টি নির্দেশনা দেয়া হয়। এই নির্দেশনাগুলো হলো, করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনা প্রতিপালনে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। বসতবাড়ির আঙ্গিনাসহ সকল পতিত জমিতে শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য ফসল চাষ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারী প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে; সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়েও জরুরী পণ্য বিবেচনায় সার, বালাইনাশক, বীজ, সেচযন্ত্রসহ সকল কৃষিযন্ত্র (কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার ইত্যাদিসহ) এবং কৃষিযন্ত্রের খুচরা যন্ত্রাংশ, সেচযন্ত্রসহ কৃষিযন্ত্রে ব্যবহৃত জ্বালানি তথা ডিজেল, কৃষিপণ্য আমদানি, বন্দরে খালাসকরণ, দেশের অভ্যন্তরে সর্বত্র পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় যথারীতি অব্যাহত থাকবে; ঢাকার শেরেবাংলা নগরের সেচ ভবন প্রাঙ্গণে কৃষক কর্তৃক উৎপাদিত নিরাপদ সবজি সরাসরি বিক্রয়ের জন্য স্থাপিত প্রতি শুক্র ও শনিবারের কৃষকের বাজারে আগত কৃষি পণ্যবাহী গাড়ি ও সংশ্লিষ্ট কৃষকদের চলাচল অব্যাহত থাকবে; সকল কৃষি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল এবং এ সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত সরকারী-বেসরকারী ব্যক্তিদের চলাচল অব্যাহত থাকবে; আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিতকরণে সঠিক সময়ে বীজতলা তৈরি, রোপণ, সেচসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে; কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর দফতর,সংস্থা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণার বিষয়ে গত ২৪ মার্চ, ১ এপ্রিল, ৫ এপ্রিল ও ১০ এপ্রিল যে প্রজ্ঞাপন জারি করে তার প্রতিটি প্রজ্ঞাপনেই সুনির্দিষ্টভাবে বলেছে যে, কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, জ্বালানি, খাদ্য, শিল্প পণ্য, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, জরুরী ও নিত্যপণ্য পরিবহন, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও গণমাধ্যম এ ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ এসব সরকারী নির্দেশনা কোন আমলেই নিচ্ছে না। বরং তারা তাদের খেয়াল খুশিমতো নিজেদের বিধান তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করে সব কৃষিপণ্য ও উপকরণ পরিবহন ও বিপণন বন্ধ করে দিয়েছে। এমন কি চাল ও অন্যান্য কৃষি পণ্য পরিবহনেও বাধা প্রদানের কারণে এসবের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। গত বছর আউশ, আমন ও বোরোর বাম্পার ফলনের পর এ বছরও আউশ এবং আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখনও বাম্পার বোরো ফসলও কাটার অপেক্ষায়। অথচ পরিবহন সঙ্কটের কারণে চালের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে সারাদেশেই বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মোটা চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। দেশের ১২টি জেলার ৩২টি বাজারে এক জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, এসব জেলার মাত্র ১০টি বাজার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কয়েকটি বাজার অবশ্য ২টা পর্যন্ত খোলা থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া ২২টি বাজারই লকডাউনের নামে পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জরিপকালে ঠাকুরগাঁও জেলার সবগুলো উপজেলার সব বাজারই লকডাউনের নামে পুরোপুরি বন্ধ পাওয়া গেছে। কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের দোকান দূরের কথা এসব বাজারে কাঁচা তরি-তরকারিও বিক্রি করতে দিচ্ছে না পুলিশ। এসব বাজার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আবার যে সকল বাজার খোলা থাকছে সেখানেও কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ বিক্রেতারা দোকান খুলতে ভয় পাচ্ছে। একই ভয়ে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও কৃষক বাজারে যেতে সাহস করছে না। প্রধানমন্ত্রী করোনার সময়ে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলাতে নির্দেশনা দিয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনায় বলা হচ্ছে, কৃষকের সঙ্গে থাকুন, কৃষকের পাশে থাকুন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পাশে নেই কৃষকের। ফলে অসহায় কৃষক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ফসল ফলানো বাদ দিয়ে গৃহে বন্দী হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ বিপণন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। উল্লেখ্য, জেলাগুলো হলো নীলফামারী, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, বগুড়া, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী। এ বিষয়ে কৃষিপণ্য ও উপকরণ প্রস্তুতকারী বিভিন্ন কোম্পানি স্থানীয় ও সরকারের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের যৌথ মালিকানাধীন দেশের শীর্ষস্থানীয় এগ্রিবিজনেস কোম্পানি সিনজেনটা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গত ১৪ এপ্রিল এ বিষয়ে কৃষি সচিব বরাবরে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের নানা পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, সাধারণ ছুটির আওতামুক্ত হলেও, ভীতির কারণে কৃষি উপকরণ বিক্রেতারা অনেকেই দোকান খুলছে না এবং কৃষকও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও বের হচ্ছে না। এই সময়ে বোরো ধানের বিপিএইচ ও ব্লাস্টের আক্রমণের সময়। এই সময়ে ফসল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এছাড়া আগামী আউশ ও আমন মৌসুমের প্রস্তুতি ও গ্রীষ্মকালীন সব্জি চাষও বিঘিœত হবে। তাই প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষক ও কৃষি উপকরণ বিক্রেতাদের আতঙ্কিত ও ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থা থেকে স্বাভাবিক কাজে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। আতঙ্কিত না হয়ে বিক্রেতারা যেন দোকান খোলা রাখে এবং কৃষকরা যেন তাদের ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সঠিক সময়ে সংগ্রহ করে ফসল উৎপাদনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন, সেজন্য তাদের মাঝে বেশি বেশি প্রচার প্রয়োজন। কৃষি উপকরণ বিক্রেতারা যাতে নির্ভয়ে দোকান খোলা রাখতে পারেন এবং কৃষকরাও যেন নির্ভয়ে কৃষি উপকরণ ক্রয় করতে ও তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেন সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তাদের উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। এটা নিশ্চিত করা গেলেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিনজেনটা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম এম গোলাম তৌহিদ বলেন, কৃষি উপকরণ উৎপাদন, বণ্টন ও খুচরা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকার গৃহীত সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় ও বাস্তবায়নের এখনও সুযোগ রয়েছে। কৃষকরা মাঠ পর্যায়ে কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন যেন না হন এবং কৃষক ও কৃষি কর্মীদের যাতায়াত ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি কৃষির সার্বিক স্বার্থেই বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গোটা বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন এখন নাজুক অবস্থায়। এ অবস্থায় আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। এটি যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য সকল পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা উচিত। এই সময়ে হাওড় এলাকায় ধান কাটার সময় হয়েছে, শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা ব্যাহত হবে, ধান কাটতে দেরি করলে বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাওড় ছাড়াও সারাদেশের ধান এখন প্রজনন পর্যায়ে আছে, এ সময়ে সেচের প্রয়োজন। তাছাড়া ধানে এখন এলাকা ভেদে মাজরা, খোলপোড়া এবং বাদামি গাছ ফড়িং-এর আক্রমণের সময়। আবার আলু পরবর্তী ভুট্টা রোপণের সময় এখন। আউশ আবাদ ও আমন চাষের জন্য বীজ সংগ্রহ ও বীজতলা তৈরি করতে হবে। এছাড়াও গ্রীষ্মকালীন সব্জির পরিচর্যা করতে হবে কৃষককে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সময়ে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাসমূহ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। কৃষকদের তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি এবং কৃষি উপকরণ সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করা অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের বিনা বাধায় বাজারে যেতে দিতে হবে। কৃষি উপকরণ বিক্রেতাদের দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থা করা অর্থাৎ দিনের বেলা দোকান খোলা রাখতে বাধা না দেয়া, যাতে করে কৃষক তাদের প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ যেমন বীজ, সার, বালাইনাশক সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া, কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী পরিবহন চলাচল নির্বিঘœ করা জরুরী। দেশের কৃষির স্বার্থেই কৃষকদের যারা পরামর্শ প্রদান করে (কৃষি কর্মকর্তা এবং বালাইনাশক বিক্রয় প্রতিনিধি) তাদের চলাচলে বাধা দেয়া যাবে না। তারা আরও বলেন, এখনই যদি আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষি উৎপাদনে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করি, তবে করোনা পরবর্তীতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত হবে। যে সময় সারা বিশ্বেই খাদ্য ঘাটতি থাকবে, তখন টাকা থাকবে কিন্তু আমদানি করার মতো খাদ্য থাকবে না। তাই এখনই আমাদের সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে এবং মাঠ প্রশাসনকে এটা অনুধাবন করে কাজ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও মাঠ পর্যায়ে তা প্রয়োগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা জরুরী। অন্যথায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনার টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার হবে না, তেমনি খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়বে।
×