
ছবিঃ সংগৃহীত
আনারস বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি মৌসুমি ফল। এটি খেতে যেমন রসালো ও সুস্বাদু, তেমনি এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে আনারসের জুড়ি নেই। যদিও অনেকেই জানেন না—এই ফলটি আমাদের দেশেই চাষ হয় এবং এটি আমাদের কৃষির জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত।
আনারস কি দেশি ফল?
আনারস মূলত দক্ষিণ আমেরিকার ফল হলেও বর্তমানে এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সফলভাবে চাষ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও টাঙ্গাইল অঞ্চলে ব্যাপক আকারে আনারস উৎপাদন হচ্ছে। এর মান, স্বাদ এবং রসে ভরা শরীর একে বাংলাদেশি ফল হিসেবেই প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। তাই এটি এখন আমাদের 'দেশি ফল' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
মৌসুম
বাংলাদেশে সাধারণত মে মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত আনারসের মৌসুম চলে। এই সময়ে বাজারে আনারসের সরবরাহ বেশি থাকে এবং দামও তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়। তবে হাইব্রিড জাতের আনারস বছরের আরও কিছু সময়েও পাওয়া যায়।
আনারসের উপকারিতা
হজমে সহায়তা: আনারসে আছে ব্রোমেলিন নামক একটি এনজাইম, যা প্রোটিন হজমে সাহায্য করে। এটি বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা কমাতে কার্যকর।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে: আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং ঠান্ডা-সর্দি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
চুল ও ত্বকের যত্নে: আনারসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং বয়সের ছাপ কমায়। চুলের জন্যও এটি উপকারী।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: আনারসে রয়েছে পটাশিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হাড়ের সুস্থতা: এতে ম্যাঙ্গানিজ থাকে, যা হাড় গঠনে সহায়তা করে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
দেহে পানিশূন্যতা রোধ: গ্রীষ্মকালে আনারস শরীর ঠান্ডা রাখে ও পানিশূন্যতা পূরণ করে।
ওজন কমাতে সহায়ক: আনারসে ক্যালোরি কম, ফাইবার বেশি—এটি ক্ষুধা কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কৃমি দমনে: সকল প্রকার কৃমি দমনে আনরসের ভুমিকা অনন্য।
যেভাবে খাওয়া যায় আনারস
কাঁচা খাওয়ার উপযোগী করে কেটে: আনারসের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হলো কেটে খাওয়া। খোসা ও চোখ বাদ দিয়ে আনারস গোল বা লম্বা করে কেটে খাওয়া হয়। হালকা লবণ বা মরিচগুঁড়া দিয়ে খেলে স্বাদ বাড়ে।
আনারসের জুস: আনারস থেকে রস বের করে ঠান্ডা করে পান করলে শরীর ঠান্ডা থাকে ও পানি ঘাটতি পূরণ হয়। ইচ্ছে করলে সামান্য চিনি, লবণ বা পুদিনা পাতাও মেশানো যায়।
ফলের সালাদে: আনারস টুকরো করে পেঁপে, কলা, আপেল ইত্যাদি ফলের সাথে মিশিয়ে মজাদার সালাদ তৈরি করা যায়। এতে লেবু ও সামান্য গোলমরিচ দিলে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়ে।
ডেজার্টে: আনারস দিয়ে পুডিং, কাস্টার্ড, আইসক্রিম বা কেকেও ব্যবহার করা হয়। এতে খাবারে মিষ্টি ও ফলের স্বাদ দুটোই আসে।
আনারসের আচার: অনেকেই আনারস দিয়ে মিষ্টি ও টক আচার তৈরি করেন। এটি ভাত বা খিচুড়ির সঙ্গে খেতে দারুণ লাগে।
রান্নায়: মুরগি বা গরুর মাংসের রান্নায় বিশেষ স্বাদের জন্য আনারস ব্যবহার করা হয়। যেমন—আনারস দিয়ে কোরমা বা ফ্রাইড রাইস।
স্মুদি বা মিল্কশেকে: আনারস, দুধ, বরফ ও সামান্য চিনি দিয়ে সুস্বাদু স্মুদি বা মিল্কশেক বানানো যায়, যা গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে।
তবে এরকম দুধের সাথে আনারস কারো কারো শরীরের জন্য অনুপযোগী হতে পারে।
টিপস:
টাটকা ও সুগন্ধযুক্ত আনারস বেছে নিন।
খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
খাওয়ার পর মুখ ধুয়ে নিন, কারণ এতে থাকা অ্যাসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে।
সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়:
আনারসে থাকা অ্যাসিডিক উপাদান খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিক বা পেটের অস্বস্তি হতে পারে।
অতিরিক্ত খেলে মুখে জ্বালাপোড়া:
ব্রোমেলিনের কারণে আনারস বেশি খেলে মুখে বা জিহ্বায় জ্বালাপোড়া হতে পারে।
অ্যালার্জি:
কোনো কোনো মানুষের আনারসে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন ত্বকে চুলকানি, ঠোঁট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
গর্ভবতী নারীদের জন্য সতর্কতা:
বেশি পরিমাণে কাঁচা আনারস গর্ভবতী নারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এতে থাকা কিছু যৌগ জরায়ু সংকোচন ঘটাতে পারে। তবে মাঝারি পরিমাণে পাকা আনারস নিরাপদ।
আনারস একটি পুষ্টিকর ও উপকারী দেশি ফল। এটি কেবল স্বাদেই নয়, গুণেও ভরপুর। তবে ফলের মতো এর উপকারিতা পেতে হলে কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করতে হবে। তাই আনারস খান পরিমিতভাবে, উপভোগ করুন স্বাস্থ্যসম্মতভাবে।
নোভা