ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

যে চিঠি কবিতা হয়ে ধরা দিল কলেজ বার্ষিকীতে

রাইসুল ইসলাম রুবেল, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ৯ জুলাই ২০২৫

যে চিঠি কবিতা হয়ে ধরা দিল কলেজ বার্ষিকীতে

দৈনিক জনকণ্ঠ

এইচ.এস.সি. শেষে সদ্য ভর্তি হয়েছি ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে। কলেজজীবনের একেবারে শুরু, নতুন মুখ, নতুন পরিবেশ, নতুন স্বপ্ন। সবকিছুই তখন জীবনের প্রথম পৃষ্ঠার মতোই সুন্দর ও কৌতূহল ভরা।

কলেজের দ্বিতীয় দিন। ক্লাস শেষে কিছু বন্ধুদের সঙ্গে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্পে মেতে আছি। হঠাৎ এক অচেনা মেয়ে নিঃশব্দে এগিয়ে এসে আমার হাতে একটি গাঢ় নীল খাম ধরিয়ে দিয়ে ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেল। না কোনো কথা, না কোনো পরিচয় শুধু একটুখানি হাসি আর সেই নীল খাম।

বন্ধুরা কেউ কিছু বলতে পারছিল না, আমি স্তব্ধ। খাম খুলে দেখি ভেতরে একটি চিঠি। তবে তা সাধারণ কোনো চিঠি নয়; মনে হলো, যেন অনুভূতির কালি দিয়ে লেখা এক তরুণীর নিঃশব্দ আকুতি। নাই কোনো নাম, নেই প্রেরকের পরিচয়। তবুও প্রতিটি চরণে ছিল এক মায়া, এক সাহস, আর এক অপূর্ব ভালোবাসার ছোঁয়া।

চিঠির ভাষা ও ছন্দ এতটাই হৃদয়ছোঁয়া ছিল যে, আমি আর স্থির থাকতে পারিনি। ভেবেছিলাম এমন এক নিঃশব্দ অভিব্যক্তি তো লুকিয়ে রাখার নয়। তাই চিঠির কথাগুলোকে কবিতার রূপ দিয়ে তুলে দিয়েছিলাম আমাদের কলেজ বার্ষিকীতে।

চিঠিটি কে লিখেছিল, আমি জানি না। তবে তার প্রতি মুগ্ধতা ও সম্মান জানিয়ে মজা করে আমি তাকে ‘ঘসেটি বেগম’ নামে চিহ্নিত করেছিলাম।নিচে তুলে ধরছি সেই কবিতাটি, যেটি এক নীল খামের গল্প নিয়ে জন্ম নিয়েছিল 


নীল খামের চিঠি

চিঠি পেলাম নীল খামেতে, তাতে আছে লিখা,
সত্যিকারের কবে আমি পাব তোমার দেখা।
মেয়ে আমি নয়কো খারাপ, অনার্স পড়ি সবে,
চিঠি পেয়ে ভাবছো তুমি—ভর্তি হলাম কবে?
এসএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগ, এইচএসসিতে পাশ,
সেটাই এখন আমার কাছে বড় ইতিহাস।
এস.এস.সিতে প্রথম বিভাগ তোমার ছিল জানি,
ছাত্র তুমি নইকো খারাপ—এটাও আমি মানী।
অতিশীঘ্র এই চিঠিটার উত্তর তুমি দিও,
নাম না দিলেও—আমি কে, তুমি বুঝে নিও।
এই খানেতে চিঠিখানি করলাম আমি শেষ,
কালো শার্টে তোমায় কিন্তু লাগে দারুণ বেশ!


এই কবিতাটি এখন কলেজ বার্ষিকীর একটি পৃষ্ঠায় জায়গা করে নিয়েছে। হয়ত কোনো একদিন সেই মেয়েটি কোনো এক কোণায় বসে এই কবিতাটি পড়বে। তার মুখে ফুটে উঠবে একটুখানি হাসি। হয়ত মনে মনে ভাববে হ্যাঁ, কেউ তার অনুভূতির মর্যাদা দিয়েছিল।

আমি জানি না সে কে ছিল। হতে পারে সে আমারই সহপাঠিনী, বা অন্য বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী। তবে আমি চাই সে জানুক আমি তার চিঠিকে হালকাভাবে নিইনি। বরং শ্রদ্ধা ও ভালো লাগা থেকেই তা কবিতায় রূপ দিয়েছি, বিদ্রুপ নয় ভালোবাসা ও সম্মান দিয়েই।

আজ এতদিন পর ফিরে তাকালে, কলেজজীবনের সেই দিনগুলো ধরা দেয় কুয়াশার ভেতর। চোখে ভেসে ওঠে সেই নীল খামটি। একজন অচেনা মেয়ের সরল সাহসিকতা, অনুভবের ভাষা, আর আমার তরুণ মনের প্রথম বিস্ময় সব মিলিয়ে এই নীল খামের গল্প আমার কলেজজীবনের এক অপূর্ব স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।


বি.দ্র.: ‘ঘসেটি বেগম’ নামটি একটি ছদ্মনাম। এটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি চরিত্র। যদি বাস্তব কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এই নাম বা ঘটনার সামান্য সাদৃশ্য ঘটে, তবে তা নিছকই কাকতালীয়। লেখাটি একটি নিষ্পাপ কলেজ স্মৃতির অংশ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।

হ্যাপী

×