মর্গ স্ট্রিটের হত্যা রহস্য
(পূর্ব প্রকাশের পর)
তার ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলেছিলেন মাদাম এসপানায়ার, আট বছর আগে। মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণ টাকা জমা রাখতেন। ঘটনার তিনদিন আগে চার হাজার ফ্রাঁ তোলেন ব্যাংক থেকে। স্বর্ণ মুদ্রায় টাকাটা নিয়েছেন তিনি। ক্লায়েন্টের নিরাপত্তার জন্য ব্যাংক থেকে একজন কেরানিকে সঙ্গে দিয়ে দিয়েছিলেন মঁসিয়ে মিগনড।
এডলফ লে বোঁ : ব্যাংকের কেরানি। ঘটনার দিন দুপুর বেলা সে মাদাম এসপানায়ার সঙ্গে ব্যাংক থেকে মাদামের বাসায় যায়। চার হাজার ফ্রাঁ ভর্তি দুটো থলি ছিল বোঁর হাতে। মাদামের মেয়ে কামিলা দরজা খুলে দেয়। একটা থলি তার হাতে দেয় বোঁ। অন্যটা মাদামের হাতে দেয়। তারপর দরজা থেকেই সে ফিরে আসে। ফেরার সময় রাস্তায় কাউকে দেখেনিÑ বাড়িটা এমনিতেই একটু নির্জন গলির ভেতরে।
উইলিয়াম বার্ড : ইংলিশম্যান, পেশায় দর্জি। দুবছর ধরে সে প্যারিসে বসবাস করছে। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করা দলটার সামনের দিকে ছিল। উপর থেকে ভেসে আসা যে দুটো কণ্ঠস্বর নিয়ে এত কথা হচ্ছেÑ তা সে শুনেছে। তার মতে গম্ভীর কণ্ঠস্বরটা একজন ফ্রেঞ্চম্যানের। দুটো ফ্রেঞ্চ শব্দ সে স্পষ্ট শুনেছেÑ ‘ঝধপৎবফ’ আর ‘গু এড়ফ’ৃ! ভেতরে হুলস্থ’ূল চলছিলÑ কিছু একটা যেন টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরটা কোনো মেয়ের হতে পারে, নিশ্চিত নয় সে। কিছু একটা বলছিলÑ ইংলিশ নয়, জার্মান হতে পারে। সে অবশ্য জার্মান জানে না।
আলফনসো গার্সিয়া : কফিন বিল্ডেতা, স্প্যানিশ। মর্গ স্ট্রিটের বাসিন্দা। কণ্ঠস্বর দুটো সে-ও শুনেছে। গম্ভীর স্বরটা ফ্রেঞ্চম্যানের সে নিশ্চিত। শব্দগুলো বুঝতে পারেনি। দ্বিতীয় স্বরটা একজন ইংলিশম্যানেরÑ এ বিষয়েও সে নিশ্চিত। না সে ইংরেজি ভাষা জানে না, উচ্চারণ শুনে এ রকম মনে হয়েছে তার।
আলবার্তো মন্তানি : কনফেকশনারির মালিক। ইটালিয়ান। তার মতে গম্ভীর স্বরটা ফ্রেঞ্চম্যানের। কাউকে কিছু বোঝাতে চেষ্টা করছে মনে হচ্ছিল। দুই একটা শব্দ বুঝতে পেরেছে। দ্বিতীয় স্বরটার কোনো কিছুই সে বুঝতে পরেনিÑ তবে রাশিয়ান মনে হয়েছে তার কাছে। রুশ ভাষা সে জানে না।
প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি থেকে যা জানা গেল তার সার সংক্ষেপ এ রকম ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। জানালাগুলোও বন্ধ ছিল। সারা ঘর, করিডোর সব জায়গা তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে। ভেতরে কেউ ছিল না। ছাদের দরজা স্থায়ীভাবে বন্ধ থাকেÑ সেই পথে কারও পালানোর সম্ভাবনা নাই। ঘরের চিমনিগুলো সরু। এত সরু যে চিমনি দিয়ে কারও পক্ষে ছাদে উঠে যাওয়া সম্ভব নয়। চিমনি সরু বলেই কামিলার মৃতদেহ সেখানে আটকে ছিলÑ বহু কষ্টে চার-পাঁচজন মিলে দেহটাকে নামানো গেছে। (চলবে..)