ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

এডগার অ্যালেন পো এবং তাঁর কবিতা

ভূমিকা ও অনুবাদ : তূয়া নূর

প্রকাশিত: ২২:২৯, ৪ জানুয়ারি ২০২৪

এডগার অ্যালেন পো এবং তাঁর কবিতা

এডগার অ্যালেন পো

এডগার অ্যালেন পো তার অসাধারণ কবিতা ও ছোটগল্প দিয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যে। তিনি ছিলেন শেক্সপিয়ার ও অ্যালেক্সান্ডার পোপের লেখার ভক্ত। তার প্রথম দিকের কবিতায় কবি বায়রণ, জন কীটস ও শেলীর প্রভাব রয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ের কবিতায় একটা উত্তরণ দেখতে পাওয়া যায় বিষয়গত দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ও পরাবাস্তব রহস্যময়তার ছাপ। উনিশ শতকের ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ ইউরোপীয় এই আন্দোলনের তিনি অন্যতম অগ্রদূত ছিলেন।

তার ছোটগল্পে ফরাসী প্রতিকবাদীর প্রভাব রয়েছে, পরে সেখান থেকে বের হয়ে এসে আধুনিক ধারার সূচনা করেন। প্রথমে তার কাজ সম্মান পায়নি যুক্তরাষ্ট্র বা ইংল্যান্ডে। তাকে চিনতে শুরু করে যখন ফরাসী কবি ব্যোদেলিয়ার যখন তাকে অনন্য প্রতিভা হিসেবে মূল্যায়ন করেন। তিনি ছিলেন সম্পাদক ও সমালোচক। রহস্য, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ও অতিপ্রাকৃত গল্পের উদ্ভাবক তিনি। 
তাঁর দীর্ঘতম কবিতার নাম ‘আল আরাফ’ যেখানে আছে ৪২২ লাইন। এই কবিটা তিনি লিখেন যখন তার বয়স ১৫ বছর হতে কয়েক মাস বাকি। 
আর্থার কোনান ডয়েল, ফিয়োদর দস্তিয়ভস্কি, চার্লস ব্যোদেলিয়ার, ফ্রান্জ কাফকা, জর্জ বার্নার্ড শসহ অনেক কবি, লেখক ও শিল্পী অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কবি ইমারসন তাকে ‘ঔরহমষব সধহ’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আর টি এস ইলিয়ট বলেছিলেন এভাবে- ‘সাবালক হবার আগে একজন অত্যন্ত প্রতিভাধর তরুণ ব্যক্তিত্ব। ‘এডগার অ্যালেন পো ১৮০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে। মারা যান ১৮৪৯ সালের ৭ অক্টোবর মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে চল্লিশ বছর বয়সে। 
সৌন্দর্যের প্রতি তার সংবেদনশীলতা এবং একজন রমণীর চরিত্রের স্নিগ্ধতা তাকে ‘এনাবেল লী’ কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে। লেখাটা প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর পর।

এনাবেল লী
অনেক অনেক দিন আগের কথা,
সাগরের গা ঘেঁষে একটা রাজ্য ছিলো,
একটা যুবতী নারীর আবাস ছিলো সেখানে, তুমি তাকে চিনতে পারো 
তার নাম এনাবেল লী;
তার ভাবনার জগত জুড়ে ছিলাম আমি
আমাকে ভালবাসতো খুব, আমি ও ভালোবাসতাম তাকে। 

সে যখন খুব ছোট্ট ছিলো আমি ছিলাম তার সাথী,
সাগরের পাশে সেই রাজ্যটাতে,
আমাদের ভালবাসা ছিলো ভালোবাসার চেয়েও গভীর-
আমি আর আমার এনাবেল লী-
এমন এই ভালোবাসা যে স্বর্গের ডানাওয়ালা দেবতাদের 
নজর পড়েছে আমাদের ওপর। 

আর ঠিক এই কারণে অনেক আগে 
এই সাগর ঘেঁষা দেশে 
এক রাতে একটা মেঘ উড়ে আসে
হিম হয়ে যায় এনাবেল লী;
তার উঁচু জাতের আত্মীয়রা এসে 
আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যায়,
সেখানে হয় তার সমাধি 
সমুদ্রের পাশে এই রাজ্যে। 

স্বর্গের অর্ধেক দেবতারা ছিলো নাখোশ
তাদের হিংসার আগুনে পুড়লাম আমরা;
সত্যি! এই ছিলো কারণ যা সব মানুষ জানে
সাগরের পাশের এই রাজ্যে
ঠান্ডা বাতাসের মেঘ এসে বরফ হিমে
প্রাণ কেড়ে নেয় আমার এনাবেল লীর। 

আমাদের ভালোবাসা ছিল সব ভালোবাসার চেয়ে দৃঢ়তর,
তাদের চেয়েও যারা আমাদের থেকে বয়সী-
তাদের অনেকে আমাদের চেয়ে অনেক জ্ঞানী-
মাথার উপরে স্বর্গের দেবতারা 
বা সাগর তলের দানবেরা 
কেউ পারেনি আমার মন থেকে রূপসী এনাবেল লীর ছবি মুছে ফেলে দিতে;

সুন্দরী এনাবেল লীর চোখে স্বপ্ন না এঁকে চাঁদ 
কখনো ছড়ায় নি আলো;
আর তারারা কখনো জেগে ওঠেনি, 
দেখতে পাই অপ্সরী এনাবেল লীর উজ্জ্বল চোখ;
তাই আমি সারারাত ধরে শুয়ে থাকি আমার
প্রিয়তমা, আমার প্রিয়জন, আমার জীবন ও আমার কনের পাশে
সাগরের কাছে তার কবরে-
সাগরের কাছে তার সমাধি সৌধে।

×