
ছবি: সংগৃহীত
শান্ত নয়, উত্তাল হয়ে উঠছে সমুদ্র। নীল জলরাশিতে বাঁধছে নতুন সামরিক সুর। প্রাচ্যের দুই পুরনো পরাশক্তি—ইরান ও রাশিয়া—এবার হাত মিলিয়ে নামছে গভীর সমুদ্রে। সম্প্রতি রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা অংশ নিচ্ছে ইরানের সঙ্গে যৌথ সামুদ্রিক মহড়ায়। মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত জলসীমায় এবার ঢেউ তুলবে যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন আর লং রেঞ্জ ক্ষেপণাস্ত্র। উদ্দেশ্য একটাই—শক্তি প্রদর্শন।
এই মহড়া আর পাঁচটা রুটিন ড্রিল নয়। এটি এক ঘোলা বার্তা, যা সরাসরি পাঠানো হচ্ছে ওয়াশিংটন এবং তেল আবিবের ঠিকানায়। সাগরের বুকে এবার শক্তি দেখাতে একসাথে নামছে রাশিয়া ও ইরান।
তাসনিম নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২১ জুলাই কাস্পিয়ান সাগরে শুরু হচ্ছে ‘কাসারেক্স ২০২৫’ নামে একটি তিন দিনব্যাপী যৌথ নৌ মহড়া। এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে ইরানের নৌবাহিনী, ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কোরের নৌ শাখা, ইরানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং রাশিয়ার শক্তিশালী নৌবাহিনী। তিন দিনব্যাপী এই মহড়ায় থাকবে যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, লং রেঞ্জ মিসাইল ও নজরদারির প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক প্রদর্শনী।
কাস্পিয়ান সাগরের পানি আজ আর শুধু পানি নয়; সেখানে লুকিয়ে আছে নতুন বিশ্বশক্তির খেলা। যেখানে ইরান ও রাশিয়া একসঙ্গে মহড়া দিয়ে শক্তি প্রদর্শন করবে। একদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের আগুন, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই সামুদ্রিক মহড়া ঘিরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে শুরু হয়েছে নতুন অংক।
মহড়ার ঘোষিত উদ্দেশ্য—কাস্পিয়ান সাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও মানবিক উদ্ধার তৎপরতায় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উপকূলবর্তী দেশগুলোর নৌবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানো। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ইরান ও রাশিয়ার কৌশলগত জোটের একটি প্রকাশ। বিশেষ করে ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন এবং রাশিয়ার সঙ্গে তাদের দীর্ঘমেয়াদী সামরিক সহযোগিতার পটভূমিতে এই মহড়া বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
এই মহড়া শুধু সামরিক অনুশীলন নয়, এটা একপ্রকার রাজনৈতিক বার্তা—নেটো ও আমেরিকার চোখে চোখ রেখে শক্তির জানান দেওয়া। মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই মহড়াকে বিশ্লেষকরা দেখছেন বিশ্ব শক্তির এক নতুন বার্তা হিসেবে। রাশিয়া ও ইরানের এই সামুদ্রিক বন্ধন বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য সংকটের পটভূমিতে। আর এরই মাঝে উদ্বেগ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে। অনুমান করা হচ্ছে, পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনিটর করবে এই মহড়ার প্রতিটি মুহূর্ত।
উল্লেখ্য, এর আগেও মার্চ মাসে আরব সাগরে ইরান, রাশিয়া ও চীনের যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার নাম ছিল “মেরিটাইম সিকিউরিটি বেল্ট এক্সারসাইজ ২০২৫”। সপ্তম বার্ষিক এই ত্রিপক্ষীয় নৌ মহড়াটি ১০ই মার্চ ইরানের চাবাহার উপকূলে শুরু হয়। এতে জলদস্যুতা বিরোধী অনুসন্ধান ও উদ্ধার এবং নৌযুদ্ধ মহড়া অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, এই মহড়া সাগরে হুমকি মোকাবিলায় তিন দেশের সহযোগিতার প্রতীক।
শেখ ফরিদ