
-
বিজয়ের বার্তা ছিল ঘরে ঘরে আজ
বলো যে এসেছে দিন —- রক্তে ভেজা
দুর্গম পথ ছিল কুটিল, দুর্দিন ;
ছিল পথে কষ্টের স্মৃতি —- স্বপ্ন তবু
আশা ভরসায় মাখা রঙিন-রঙিন
বেহুলা বাংলার পুঁথি বেদনায় নীল
ছিলতো রুদ্ধ দিন শোকার্ত মলিন;
ধর্ণার দিন শেষে আজ শোনো বিজয় সংগীত —- দীপ্ত ভোরের সাড়া
ঝংকৃত ঝিল- মিল, দেহ মন ভরপুর
নূতন দিনের আশা —- সবুজ মানচিত্রে ফোটা সৌর- দীপ—- কান পেতে শোন ঐ
পাখি ডাক —- বিজয় বার্তা নিয়ে বাঙালির
জন্মভিটায় ফেরা প্রশ্বাস।
** শীতার্ত ওম
লিলি হক
মাত্র ক’দিনের পরিচয়,
দূর হতে দৃষ্টি বিনিময়
ছায়াঘন পল্লবিত কিরণে
দুটো হৃদয় হারায় পুলকিত শিহরনে
কেমন আছো কথা ক’টিতে সমস্ত পৃথিবীর আদর যেন উপচে পড়ছিল।
পর্দার থিরথির কাঁপনে মিষ্টি মধুর সম্বোধনে মুখোমুখি বারান্দায় বসেছিলাম দুজনে।
তুমি ছিলে স্তব্ধতায় মগ্ন রহস্যময় যুবক
যে আমাকে ভালোবাসবে বলে দুহাত বাড়িয়ে আছে আর আমি কবি হৃদয়ে ভোরের আলোয় তোমার মাঝে লাল সবুজ নীল রঙের খেলা দেখছিলাম, পর্যবেক্ষণ করছিলাম আপাদমস্তক যাকে আগে কোনদিন দেখিনি সেই হবে কী শীতার্ত জীবনের ওম!
** কষ্ট
সুমন বনিক
পা-পথে হাঁটতে হাঁটতে
হঠাৎ নজর কাড়ল
কতিপয় নাম-গোত্রহীন ঘাসফুল।
ওরা মুখ বাড়িয়ে কী যেন
বলতে চেয়েছিল।
কাছে যেতেই
ওদের বৃন্ত থেকে
ঝরে পড়ল বিষাদের কলস
দেহ থেকে খসে পড়ল
বেদনামাখা পাপড়িগুলো।
ওদের না বলা কথাগুলো
দীর্ঘশ্বাসের আতর মেখে
সাজিয়ে রেখেছি
রিডিং টেবিলে।
** বদল
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান
অনেক দূর থেকে এসেছি নিজের কাছে
অবনত দুঃখভারে যেসব ফুল ফোটেনি
বৃষ্টিস্পর্শ মাতৃস্নেহ বঞ্চিত যারা
রোদের গল্প শোনেনি
তাদের জন্যে এসেছি
এই দ্বিধাহীন প্রান্তরে...
আমি ম্লান নগর-বালক কোলাহল ভেঙে ভেঙে নৈঃশব্দ্যে ডুবে যাওয়া চাঁদ
কে আমায় ফেরায় অনাদর জ্যোৎস্নায়!
তাই নিজের কাছেই নতমুখে ফেরা
রাত বদল হলে
আয়নায় বদলে নেবো মুখ
অন্য নারী, অন্য এক জীবন।
** মরণকথা
সৈয়দ শরীফ
একবার আমি মরে গিয়ে দেখেছিলাম
আমার বেঁচে থাকাদের চোখ ধাঁধানো
উল্লাস- আর দূর দূর সীমান্তবর্তী
পার্বত্য জেলায় করছে ভ্রমণ অসংখ্য
ভুলে যাওয়া, অসংখ্য নিশ্বাস-
দেখেছি অশ্রুসিক্ত কিছু মনে পড়াদের;
পড়েছিল ভেঙে যারা আমার মৃত্যুর
দায়- রেখে আসা এই দুঃখগুলোও
কী ভাবে যে অন্যের হয়ে যায় !
আমার জন্মগুলোও বড় স্বার্থপর
মৃত্যুর হাত ধরে বসে আছে স্বর্গগামী
ট্রেনে- এইসব বিষণœ মরে যাওয়া
আমি যে পারছি না নিতে মেনে..
** ইচ্ছে
ফজলুর রহমান
তুমি একটা গর্জন গাছ হতে চেয়েছিলে,
আমি বললাম নদী হও না কেন?
তুমি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললে জলে অনেক দুঃখ;
সারা জীবন ভাসতে হয়,
সেই থেকে আমি জলে ভাসি আর তুমি বাতাসে উড়ো।