
আলেকজান্ডার সোলঝেনিৎসিন
সোলঝেনিৎসিনের জন্মের ছয় মাস আসে রুশ যুদ্ধে মারা যায় তাঁর বাবা। মানুষ করে মা তাকে। তিনি পড়তে চেয়েছিলেন সাহিত্য নিয়ে। কিন্তু তার শহরের বিশ্ববিদ্যালয় সে সুযোগ ছিল না। সে জন্য তাকে যেতে হবে মস্কো। তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। আর মাকে একা ফেলে তার মস্কো যেতে ইচ্ছে করেনি। তিনি পড়াশোনা শুরু করলেন অংকে।
ভালোই করলেন তিনি। শিক্ষকরা বললেন, তুমি অংকে ভালো করবে। অংক তার কাছে সহজ লাগতো। এই অংকের ডিগ্রি তার জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছিল। আট বছরের সাজা হয়েছিল। আট বছর কেটেছিল কাজাখাস্তানের শ্রম শিবিরে। অনেক ভারী কাজ করতে হতো। পরে তাদের অংকে শিক্ষকতার দায়িত্ব পান সেখানে।
কোনো সাংঘাতিক বিষয় যে সহজ করে বলা যায় তার প্রমাণ পাওয়া যায় রুশ কবি ও ঔপন্যাসিক অ্যালেক্সান্ডার সোলঝেনিটসিনের গদ্য কবিতায়। ছাব্বিশ বছর বয়সে শ্রম শিবিরে পাঠানো হয় আট বছরের জন্য তাঁর এক বন্ধুকে স্টালিনের সমালোচনা করে চিঠি লেখার দোষে। সেখানে তিনি লেখার জন্য কাগজ কলম চেয়ে পাননি। তিনি স্মৃতিতে দশ হাজার লাইনের উপন্যাস ও আড়াই হাজার লাইনের একটা নাটক সাজিয়ে রেখেছিলাম। জেল থেকে বের হয় এসে সবার আগে এ দুটো বিষয় স্মৃতি থেকে কাগজে লিপিবদ্ধ করতে শুরু করেন।
এই লেখা সম্পর্কে তিনি পরে বলেছিলেন, আমি শিখেছিলাম শ্রম শিবিরে থাকতে কিভাবে পাহারার ভেতর সারিবদ্ধ হয়ে মার্চ করার সময়, জমে যাওয়া বরফের ভেতর, লোহার ফাউন্ড্রিতে, সংকীর্ণ জেল কক্ষের ভেতর কিভাবে বিষয় নিয়ে ভাবা ও লেখা যায়। একজন সৈন্য মাটির ওপর শুতে পারে, শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাতে পারে; একটা কুকুর জমাট বরফ আবহাওয়া শরীরে লোম দিয়ে ঢেকে গুটিশুটি হয়ে থাকতে পারে। আর আমি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম প্রকৃতির সঙ্গে যে কোনো জায়গায় থেকে লেখার।
সোলঝেনিৎসিনের উপন্যাস ওয়ান ডে ইন দ্য লাইফ অব ইভান ডেনিসোভিচ (১৯৬২) তাকে বিখ্যাত করে তোলে। ১৯৬৪ সালে নিকিতা ক্রুশ্চেভের পতন হয় তবে সোলঝেনিৎসিনের লেখা তখনো নিষিদ্ধ ছিল। তিনি নোবেল পান ১৯৭০ সালে। তিনি পুরস্কার নিতে সুইডেন যাবার সাহস করেননি। যদি দেশে ঢুকতে দেওয়া না হয়। ১৯৭৪ সালে তাঁর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয় ও নির্বাসিত করা হয়।
তিনি চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ভেরমনটের একটা ছোট্ট গ্রামে। তিনি আবার লিখতে ও বক্তৃতা দিতে শুরু করলেন। কমিউনিজমের অনেক কিছু তিনি পছন্দ করেননি। নির্বাসিত হয়ে তিনি আমেরিকাতে আসেন। মার্কিন সমাজের কিছু জিনিস তিনি পছন্দ করেননি। ১৯৯০ সালে তাঁর নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিলে তিনি জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। জন্ম তার ১১ ডিসেম্বর ১৯১৮ সালে। মারা যান ২০০৮ এর ৩ আগস্ট।
অনেক গুরুতর বিষয় কখনো কখনো খুব সহজভাবে উপস্থাপন করা যায়। তার প্রমাণ আলেকজান্ডার সলঝেনিটসিনের কুকুরছানা গদ্য কবিতাটা। কুকুরছানার খেলার অনুমতি একটা বেড়া দেওয়া জায়গার ভেতর। এই লেখাটা উপলব্ধি করায় একটা বন্দী কুকুরছানার চেয়ে কম গুরুতর ছিল না তার বিষয়।