ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

শৈশবের শীত-স্মৃতি

রফিকুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২১:০০, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

শৈশবের শীত-স্মৃতি

শৈশবের শীত-স্মৃতি

‘হে সূর্য!
তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ওই উলঙ্গ ছেলেটাকে।’
হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে জবুথবু গ্রামের ভোর। কুয়াশার চাদরে  ঘোমটা মুড়ি দিয়ে আসে শীতের বুড়ি, যেন তার কোনো ব্যস্ততা নেই, ধীরস্থির পায়ে আসে। উত্তরের শীতল বাতাস বইতে থাকে শিরশির করে। শীত সকালে বাড়ির উঠানের একপ্রান্তে গনগনে জলন্ত আগুন জ্বালানো হতো, সেই আগুন ঘিরে বসতো বাড়ির ছেলেবুড়ো। টিনের চালের আদর খেয়ে শীতগুলো টুপটাপ শিশির হয়ে গলে গলে পড়ত।

অনেক সময় সখ করে কাজের মানুষের সঙ্গে কাঁপতে কাঁপতে মাঠে যেতাম খেজুরের রস খুলে আনতে, শীতের শিশির আর পথের ধুলো মিশে কাদা হয়ে পা দুটি অবাশ হয়ে যেত। মাঝে মাঝে এমন কুয়াশা পড়ত অদূরে কিছুই দেখা যেত না, সে এক অন্যরকম মজা পেতাম। মাঠের মানুষ হাকডাক দিয়ে জানান দিত কে কোথায় আছে। সারি বেঁধে কাঁধে গাছিরা কাঁপতে কঁপতে খেজুরের রসের হাঁড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরত।

তখন আজকের মতো উন্নত মানের গরম কাপড় ছিল না, মনে পড়ে, ছোট বেলায় মা গলায় কাপড় বেঁধে দিত, তারপর আগুনের কাছে গিয়ে বসতাম, সমস্ত গ্রামজুড়ে যেখানে-সেখানে নাড়ার আগুন জ্বালানো হতো, সবাই মিলে আগুন পোহাত আর খোশগল্পে মেতে উঠত। শীতের সেই কষ্টের মধ্যেও মজা করতাম, মুখ খুললেই ধোঁয়া বের হতো, বারবার করতাম, বারবার ধোঁযা বের হতো। 
শীতকাল মানেই প্রথমে যে ভয়টা মাথায় আসত তা হলো গোসল করা। লেপের ভেতর থেকে বের হতেই ইচ্ছে করত না। এক সময় ঘন কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো জ্বলে উঠতেই ঝলমল করে হেসে উঠত সারাগ্রাম খানি। সকালে সোনালি রোদে হীরক দ্যুতি ছড়িয়ে দিত গ্রাম-গঞ্জে মাঠে,-ঘাটে। সূর্যের উত্তাপ নিতে ঘর থেকে মানুষ বাইরে বেরিয়ে আসত। খেজুর রসের মন মাতানো ম-ম গন্ধে মেতে উঠত সারাপাড়া জুড়ে। প্রায় বাড়িতেই খেজুরের রস জ্বালানো হতো। 
আজ আর গ্রামগুলো তেমন নেই অনেকটা শহরের মতো গড়ে উঠেছে। মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এসেছে। জ্যাকেট কাকে বলে চিনতাম না, এখন কত রকম শীতের পোশাক উঠেছে। শীতকালে ঠা-া পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো কোনো সময় শীতের তীব্রতা এত বেশি হয়, তাকে স্বাভাবিক শীত বলা যায় না। এমন অস্বাভাবিক শীতের খবর শুনি পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ২.৩ ডিগ্রি সে. নেমে আসে, এটা আমাদের জন্য স্বাভাবিক শীত নয়।
সেইসব ছিন্নমূল মানুষদের কথা ভাবি একটু কর শীতের কাপড় বা মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই যাদের, তাদের জীবনে শীত আনন্দের নয়, শীত আসে ছিন্নমূল মানুষদের জন্য অভিশাপের, দুঃখের। এখনো হাজারও ছিন্নমূল মানুষ পাতলা কাপড়ে শীতে কাঁপে ফুটপাতে। 
 আর তাই আসুন, যে যার সাধ্যমতো কাছের দরিদ্র মানুষগুলোর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই এই পৃথিবীকে গড়ে তুলি সবার জন্য বসবাসযোগ্য সহানুভূতির অপার পৃথিবী।

×