ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপরাজেয় কথাশিল্পী

এসডি সুব্রত

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

অপরাজেয় কথাশিল্পী

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

অত্যধিক জনপ্রিয়তার কারণে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ নামে খ্যাত। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন বাঙালী লেখক, ঔপন্যাসিক, ও গল্পকার ছিলেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলায় দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মায়ের নাম ভুবনমোহিনী দেবী। শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাঁড়া।

তার শৈশব বেশিরভাগ সময় তার পিতামহ কেদারনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে বিহারে কাটাতেন, যেখানে তার বাবা কিছুকাল চাকরি করেছিলেন। তার পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় অনিয়মিত চাকরির কারণে পরিবার দারিদ্র্যে ছিল। দেবানন্দপুরের প্যারী প-িতের পাঠশালায় তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। তিনি হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে যোগদান করেন। তিনি ভাল ছাত্র ছিলেন তিনি সাহসীও ছিলেন। তবে দারিদ্র্যের কারণে তাকে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়। তার পরিবারে দারিদ্র্যতা তাকে কাজের সন্ধান করতে বাধ্য করেছিল।

১৯০০ সালে তিনি বনেলী রাজ-এস্টেটে কয়েকদিন চাকরি করেছিলেন। ১৯০৩ সালে ২৭ বছর বয়সে বার্মা চলে আসেন এবং রেঙ্গুনে একটি সরকারী অফিসে ক্লার্কের কাজ করেন। তারপর তিনি বার্মা রেলওয়ের এ্যাকাউন্টস বিভাগে একটি স্থায়ী চাকরি অর্জন করেছিলেন। সেখানে তিনি প্রায় ১০-১১ বছর কাজ করেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দুবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন শান্তি দেবী, যাকে তিনি ১৯০৬ সালে বার্মায় বিয়ে করেছিলেন। তাদের একটি ছেলে ছিল। শান্তি দেবী এবং তাদের পুত্রের প্লেগ হয়েছিল এবং ১৯০৮ সালে দুজনেরই মৃত্যু হয়। পরে তিনি ১৪ বছরের কন্যা মোক্ষদাকে বিয়ে করেন।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যের প্রতি টান ছিল ছোটবেলা থেকেই। তিনি শৈশব থেকেই লেখা শুরু করেন তার সেই সময় লেখা দুটি গল্প ‘কাশীনাথ’ ও ‘ব্রহ্মদৈত্য’। তিনি তিরিশটির বেশি উপন্যাস এবং গল্প লেখেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার অনেক উপন্যাস নিজের অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে তৈরি করেছিলেন। তার প্রথম ছোট গল্প ‘মন্দির’ ১৯০৩ সালে বের হয়।

যা কুন্তলীন প্রতিযোগিতায় সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেছিল। যমুনা পত্রিকাটিতে তিনি নিয়মিত গল্পের অবদান রেখেছিলেন। তিনি নিজের নামে, অনিলা দেবী এবং অনুপমা নামে এটি করেছিলেন। পরে তিনি বলেছিলেন যে বার্মায় থাকাকালীন যমুনা তার সাহিত্যজীবনকে পুনর্জ্জীবিত করার অনুঘটক ছিলেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লিখেছিলেন। তিনি মহিলাদের এবং তাদের দুর্দশা সম্পর্কে লিখেছিলেন।

দেবদাস, বিরাজবৌ, পল্লী-সমাজ, পরিণীতা তার সামাজিক রীতিনীতি প্রত্যাখ্যানের প্রতিচ্ছবি। তার রচনা স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছিল। ১৯২৬ তার লেখা বৈপ্লবিক আন্দোলন ঘিরে ‘পথের দাবি’ গল্পটি বাংলায় জনপ্রিয় হয়েছিল। তার শেষ উপন্যাস হলো শেষ প্রশ্ন। তার স্বামী গল্পটি নারীবাদ এবং মহিলা চরিত্রের প্রতিচ্ছবি ছিল।
১৯১৭ সালে প্রকাশিত তার উপন্যাস ‘দেবদাস’
একটি প্রেমের কাহিনী যা সামাজিক রীতিনীতিকে অস্বীকার করেছিল। ১৯১৪ সালে প্রকাশিত ‘পরিণীতা’ নারীবাদী গল্প। এটি সামাজিক প্রতিবাদের একটি উপন্যাস যা সামাজিক নিয়ম ভঙ্গ করে। শ্রীকান্ত উপন্যাসটি ১৯১৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এটি শ্রীকান্তের জীবনযাত্রা এবং তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন চরিত্র তুলে ধরেছিলেন। বিশ্বাস করা হয় যে এটি শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নিজের জীবন এবং ভ্রমণের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৮ সালে ১৬ জানুয়ারি কলকাতায় মারা যান।

×