ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

বই ॥ অন্তরালে

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০১:৪৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

বই ॥ অন্তরালে

অন্তরালে

জেবুন নাহারের কবিতার বই ‘অন্তরালে’ প্রকাশ পায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। আগামী প্রকাশনীর প্রকাশনায় ‘অন্তরালে’র প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। পিতামাতাকে উৎসর্গ করা কবিতাগুচ্ছের কবি ব্যক্তিগত জীবনে ফার্মেসির শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করাই শুধু নয়, উচ্চতর গবেষণায় পিএইচডি সনদ লাভও জীবনের এক সমৃদ্ধ যোগসাজশ।

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিজেকে শাণিত করা ছাড়াও নান্দনিক সত্তায় সমর্পিত হয়ে অন্যমাত্রার সৃজন দ্যোতনাও তাকে তাড়িত করে। সত্যিই অভিনব এক অভিযোজন যা কিনা বিজ্ঞানের ছাত্রীকে সাহিত্য সংস্কৃতির বলয়ে নিমগ্ন করে দিল। তেমন শৈল্পিক শৌর্যে মনের নিভৃতে ঝঙ্কৃত হওয়া কথামালার ছান্দিক আর শাব্দিক চয়নের যে অনবদ্য নির্মাণশৈলী তা সত্যিই অভিভূত এবং চমকৃত করবে পাঠকদের। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সুখ, দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনুভব-অনুভূতি যে মাত্রায় কবিকে আন্দোলিত করে তারই যথার্থ পরিস্ফুটন ‘অন্তরালে’।

সত্যিই মনের গহীনে নিভৃত অন্তরালে প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, চাওয়া-পাওয়া ছাড়াও হৃদয় নিংড়ানো বোধ পাঠকের অন্তর নানামাত্রিকে নাড়িয়ে দেয়। গ্রন্থের নামানুসারে ‘অন্তরালে’ কবিতাটিই সূচনালগ্নে পাঠকের দৃষ্টি কাড়ে। চিরায়ত প্রেম-ভালবাসার নিমগ্নতায় কবি যে মাত্রায় উচ্ছল আর উৎসর্গিত তাও যেন জীবন বোধের নানামাত্রিক অনুরণন আর ঝঙ্কার। শুধু কি তাই? স্বাপ্নিক আচ্ছন্নতায় মনো সরোবরের ছায়াসঙ্গীকে যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবি ভাবাও যেন এক পরম আবিষ্টতা। বিভিন্ন কাব্যিক, ছন্দোবদ্ধ আবহে ছায়া সুনিবিড় নৈসর্গের নিঃশর্ত দান যেন আবহমান বাংলার শাশ্বত রূপশৌর্য। যেখানে ঝরো ঝরো বৃষ্টিই শুধু নয় এক সঙ্গে মিশে যাওয়া দমকা হাওয়াও কবির বোধিসত্তার শৈল্পিক মহিমা যেন উষ্ণ আবেশে মাতিয়ে দেয়।

সত্যিই ভালবাসা, প্রকৃতির অবারিত সম্ভার, সুখ-দুঃখের অবিমিশ্র দ্যোতনা তার সঙ্গে নান্দনিক সত্তা যেন এক ও অভিন্ন মাত্রায় গেঁথে থাকে। প্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিষ্কারে সমর্পিত একজন ওষুধ বিশেষজ্ঞ যেন রোগবালাইকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে মনো সম্ভারের নানাবিধ আয়োজনে নিজেকে উজাড় করে দিতে একেবারে অকুণ্ঠিত। মানুষের জীবন নিরবচ্ছিন্ন সুখ কিংবা আনন্দের নয়। ব্যথা, বেদনা এবং দুঃখ-শোকের এক অবিমিশ্র যাতনাও। আনন্দ আর কষ্ট সবই যেন অপেক্ষমাণ এক পালাক্রম। ‘লাগামহীন ইচ্ছের অপেক্ষা’ কবিতাটি যেন তারই অনবদ্য বহির্প্রকাশ। ‘মরীচিকা’র ছন্দোবদ্ধ ঝঙ্কারও যেন নিজেকে নিঃশেষে অশ্রুর সাগরে ভাসিয়ে দেয়ার বেদনাঘন অনুভব।

সেই চোখের বাধভাঙ্গা জলধারা দয়িতের অপেক্ষায় যেন আনন্দাশ্রু বর্ষণের শুভমুহূর্ত। কবিতার আঙ্গিক আর বৈশিষ্ট্য যাই হোক না কেন তার অনুভব আর উপলব্ধি কবির মানসিক মনোবেদনার অভাবনীয় নির্মাণশৈলী। মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক অতি আপনজনকে হারানোর মর্মবেদনায় জীবনের ভেসে চলা মুহূর্তগুলো যেন দুঃখ, তাপে, শোকে, কষ্টে উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত এবং অতি আবশ্যিকভাবে জর্জরিতও। তবে জীবনকে জানা, বোঝার নির্মল অনুভবে কবিতাগুলো যে মাত্রায় হৃদয়নিঃসৃত ভাবনার অলঙ্করণ তা পাঠকদেরও মিশ্র দ্যোতনায় প্রাণিত ও আন্দোলিত করবে। গ্রন্থের রূপকারকে অভিনন্দন মনের নিভৃতের আবেগাচ্ছন্ন ভাবকে পাঠকের সামনে হাজির করার জন্য। পাঠকপ্রিয়তা পেতে সময় লাগবে না। সঙ্গে বইটির বহুল প্রচারও কামনা করছি।

×