পাঁচ নারী বিচারপতি নিয়োগ
সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ার ইতিহাসে বাংলাদেশ আর এক ধাপ এগিয়ে গেল। আইন পেশায় সমসংখ্যক নারীর যৌক্তিক অভিগমন নতুন সময়ের অপরিহার্য চাহিদা। আইন আর বিচারিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নারী সমাজের অংশগ্রহণও ক্রমান্বয়ে বাড়ার দিকে।
হরেক বৈচিত্র্যময় পেশায় নারীরা যে মাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছেন সেখানে শাসন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বিধি আইনি কর্মযোগও নারীদের আর এক মর্যাদায় অভিষিক্ত করে। বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন আর বিচারিক ব্যবস্থার ওপর বিভাগীয় কার্যক্রম উচ্চ শিক্ষার পাদপীঠে অনন্য অভিযোজন। গত শতকের আশির দশক থেকে এমন পাঠক্রম বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনার নতুন সংযোজন।
সেখানে নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ দর্শনীয় এবং দৃষ্টিনন্দন। আজ আমরা একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে আরও চমৎকারভাবে উপলব্ধি করছি তৈরি হওয়া নারী আইনজীবীর সংখ্যাও হাতেগোনার অবস্থায় নেই। তারই অবিস্মরণীয় শুভ পরিণতি সুপ্রিম কোর্টে এক সঙ্গে পাঁচ নারী বিচারপতির নিয়োগই শুধু নয় আজ অবধি তা ইতিহাসও বটে। আইন বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বিচারপতির মতো শক্ত অবস্থানে আসা সহজসাধ্য কখনোই ছিল না। আজও তা নেই।
যা নারী-পুরুষ সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। বাংলাদেশে নজির স্থাপন করা এই পাঁচ বিচারপতির নাম। (১) বিচারপতি মুবিনা আসফি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করা এই বিচারপতি ১৯৯৩ সালে জজ কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তার শুভযাত্রা শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে হাইকোর্ট ও ২০০৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবীর তালিকাভুক্ত হন। ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার পেশাকে এগিয়ে নেন। ২০১৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর আইনি বিভাগের প্রধান ছিলেন।
(২) বিচারপতি নাসরিন আক্তার। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে ২০০৫ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কর্মজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে নিবেদিত হন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্য নির্বাহী সদস্য হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করেন।
(৩) বিচারপতি আইনুন নাহার। আইনুন নাহারের গ্রামের বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজারে। পিতা পেশায় প্রকৌশলী। ২০০০ সালেই তিনি জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে অভিষিক্ত হন। ২০০৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ও ২০২০ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবীর পদ অলঙ্কৃত করেন। দীর্ঘ বিশ বছর বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের আইনজীবী হিসেবে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে বিভিন্ন মামলা পরিচালনার দৃষ্টান্ত রাখেন।
(৪) বিচারপতি তামান্না রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ অর্জন করেন। পরবর্তী ইতিহাস তো আরও বর্ণময়। (৫) বিচারপতি সাথিকা হোসেন। তিনি ১৯৯৯ সালে হাইকোর্টে বিভাগের আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবনকে স্বাগত জানান। ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ লাভ করেন।
নতুন নিয়োগ পাওয়া ২৩ জন বিচারপতির মধ্যে ৫ জন নারী বিচারপতি নিয়োগ নতুন বাংলাদেশের অনন্য এক ইতিহাস আর নজির তো বটেই। ইতোমধ্যে নতুন নিয়োগ পাওয়া বিচারপতিদের রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
অপরাজিতা প্রতিবেদক