ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কন্যা শিশুর স্বপ্ন

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০০:৩০, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

কন্যা শিশুর স্বপ্ন

কন্যা শিশুর স্বপ্ন

পারিবারিক সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশে সন্তান জন্ম মাতৃত্বের এক অপার সম্ভাবনাময় জগৎ। সেখানে কন্যা শিশুর পৃথিবীর আলো দেখা তাও এক অবিমিশ্র আনন্দ যোগ। কিন্তু প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার হরেক অপসংস্কার পুত্র-কন্যার মধ্যে যে বিভেদের প্রাচীর করে সেটা সংশ্লিষ্টদের জন্য চরম দুঃসময়। বিশ^জুড়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের যে অবধারিত দূষণ প্রক্রিয়া সেটাও সন্তানসম্ভবা মায়ের জন্য নাকি নিরাপদ আর স্বস্তিদায়ক হয় না।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য-উপাত্ত সংশ্লিষ্টদের জন্য আপদ আর বিপত্তিকরও বটে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারী ও কন্যা শিশুর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া যেন সময়ের বিপন্ন প্রভাব। নারী ও কন্যা শিশুর সার্বিক নিরাপত্তার ওপর সচেতন কর্মযোগ আর দায়বদ্ধতা সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর নিয়ামক। বিভিন্ন আলাপ আলোচনায় উঠে আসছে একজন পুত্র সন্তান যেভাবে নির্বিঘœ আর নিরাপদে তার শৈশব-কৈশোর অতিক্রান্ত করে সেখানে সহোদররা বোনটির তার আবাল্য স্বল্প সময়ের স্মৃতি কোনোভাবেই স্বস্তিকর হয় না। পদে পদে আশঙ্কিত পরিবেশ পরিস্থিতির দুর্ভোগে পড়া কন্যা শিশু সন্তানের জন্য চরম নাকাল অবস্থা।

বর্তমানে নতুন সময়ের আধুনিক বলয় তেমন দুর্যোগ, অসময়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে কন্যাদের বেড়ে ওঠার সামাজিক নিশ্চয়তা জরুরি বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনরা। পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা কন্যা শিশুর পথচলা হরেক বিপর্যয় আর দুশ্চিন্তায় আবর্তিত হতে সময় নেয় না। স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার অধিকার একজন কন্যা শিশুর আশৈশব। সেখানে তাদের অসহায়ত্ব আর প্রতিরোধহীন অব্যবস্থার শিকার হওয়া যৌক্তিক এবং কাক্সিক্ষত হতেই পারে না। কন্যা শিশুর স্বপ্নেই আধুনিক ও প্রযুক্তির বাংলাদেশ সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে যাওয়ার নিশানা খুঁজে পাবে। স্বাপ্নিক শৈশব তার কৈশোরের নিরাপদ ভিত্তি তৈরি করবে।

আর যথার্থ যুবতীর ভাব কল্পনায় আগামীর সমৃদ্ধ ভুবন প্রস্তুত যেন জীবনকে সুনির্দিষ্ট ও কাক্সিক্ষত জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র কন্যা নয় পূর্ণ সন্তানের মর্যাদায় এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ভেতরের বোধে সতত জাগিয়ে রাখাও পরিস্থিতিকে সাবলীলভাবে আয়ত্তে আনা। সব শিশুর অন্তরেই ঘুমিয়ে থাকে পিতা-মাতার সাবলীল অস্তিত্ব অভিব্যক্তি। যা ভবিষ্যতে একজন কন্যা শিশু থেকে মাতৃত্বের অলঙ্কারে জীবনকে স্বর্ণময় আর বর্ণময় করে তোলে। কন্যা শিশুদের জন্য এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান পালিত হয়ে গেল ১১ অক্টোবর গত শুক্রবার।

দিবসটির যে বার্তা কন্যাদের উৎফুল্ল ও উৎসাহিত করে তা ছিল ‘কন্যা শিশুর স্বপ্নে গড়ি আগামীর বাংলাদেশ’। স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী কন্যাদের নিয়ে পালিত হওয়া দিবসটির তাৎপর্য বহুবিধ এবং স্বপ্নের মোড়কে বাধা এক আদর্শিক নতুন বাংলাদেশের আগামীর ভবিষ্যৎ। যেখানে সব ধরনের বৈষম্য অনিয়ম, কূপম-ূকতা, অবিচার নিয়ে কন্যাদের জীবন বিপন্ন হবেই না। বরং নতুন ও স্বপ্নে ভরা বাংলাদেশ হবে কন্যা শিশুদের জন্য এক আনন্দময়, নিরাপদ আর স্বস্তিকর বলয়। কঠোর নজর দিতে হবে শিশু কন্যা বিবাহ থেকে অকাল মাতৃত্বের চরম বিপর্যয়কে।

বুদ্ধি বিবেচনা আর সময়ের তাগিদে শ্লথ থেকে বিলীন করে দিতে হবে তা। হরেক বৈষম্যপীড়িত সমস্যাগুলো নিশ্চিহ্ন করতে পিছু হটলে নতুন পরিস্থিতিকে স্বাগত জানাতে বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। অকাল মাতৃত্বে প্রজনন স্বাস্থ্য কি মাত্রায় বিপন্নতা আবর্তে পড়ে তা বোঝার আগেই কন্যা শিশুর গর্ভে আরেক শিশুর ভ্রƒণ জন্ম হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতি যেমন সংকটময় একই সঙ্গে দেশের ভাবী প্রজন্ম নিরাপদ, নির্বিঘেœ পৃথিবীর আলো দেখা আর এক নির্মমতার বহির্প্রকাশ। মানসিক ও প্রজনন স্বাস্থ্য যে কোনো কন্যার অভাবনীয় এক শৌর্য। এমন অনন্য সম্পদের অকালে, অসময়ে স্খলন একজন কন্যাকে কি মাত্রায় শারীরিক মানসিকভাবে দুর্ভোগের শিকার করে তেমন অসহনীয় তথ্য সংবাদমাধ্যমের খবর হতে দেরিও হয় না।

বিজ্ঞজনই শুধু নয় সংশ্লিষ্ট কন্যাদেরও একই অভিমত বাল্যবিয়ে নিরোধ করা পরিস্থিতির অপরিহার্যতা, যা কোনোভাবেই ঠেকানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে কিছু অপরিণত বিয়ে ঠেকানো গেলেও মূল জায়গায় তেমন পরিবর্তন লক্ষণীয় নয়। তাই কিভাবে শিশু কন্যা বিয়ে আটকানো যায় তেমন জোরালো কর্মসূচি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশ এখনো গ্রামনির্ভর কৃষিভিত্তিক এলাকা। 
সিংহভাগ বসতি গ্রামগঞ্জে। তাই জোরালো আহ্বানে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া গ্রামকে সাড়া জাগানোর দায়বদ্ধতায় এগিয়ে আসতে হবে। শুধু কি বাল্যবিয়ের চরম নিশানা? একজন মেধাবী কন্যা তার স্বপ্নে গড়া ভুবন নিয়ে এগিয়ে যেতেও বারবার পিছু হটে। তার স্বাভাবিক সক্ষমতাকে অস্বীকার করে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর অধিকার থাকা সমিচীনই নয়।

বরং কন্যার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে পাত্রস্থ করা সীমা লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে। রক্ষণশীল সমাজ ও জাতি যে সংস্কারকে সামনে রেখে প্রচলিত বিধিবিধানকে মেনে ও মানিয়ে চলে সেখানে নবজাগরণের আলো বিচ্ছুরিত হওয়া পিছু হটে। তেমন অপসংস্কার থেকে বেরুতে হতে সর্বাগ্রে।

×