ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সফল সোনিয়া

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ০১:৪০, ২৪ মার্চ ২০২৩

ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সফল সোনিয়া

বিয়ে হয়েছে ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর

‘বিয়ে হয়েছে ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর। তখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি মাত্র। বিয়ের পর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছি। মধ্যবিত্ত হিসেবে সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন তো ছিলই। ভাবলাম নিজে স্বাবলম্বী হতে পারলে স্বামীকেও সহযোগিতা করতে পারব, সঙ্গে নিজেরও একটা স্বতন্ত্র পরিচয় থাকবে’- বলছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার মেয়ে সোনিয়া আকতার। বর্তমানে বসবাস করছেন নারায়ণগঞ্জে। কাজ করছেন শিশুদের জন্য তৈরি শাড়ি নিয়ে। নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য প্রথমে অনলাইনে শাড়ি বিক্রি করতেন।

সঙ্গে মেয়ে শিশুদের শাড়িও থাকত। ক্রেতাদের অনুযোগ, মেয়েকে শখ করে শাড়ি পরালেও বারবার কুচি খুলে যায়। অনেক পিন দিয়েও আরাম পায় না। কেউ বলেন, সঙ্গে যদি ব্লাউজ-পেটিকোট করে দিতেন। ভাবতে লাগলেন কি করা যায়। পেটিকোট যদি শাড়ির সঙ্গে এক করে জুড়ে দেওয়া যায়, লেহেঙ্গার মতো- তাহলে কেমন হয়! যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু করে দিলেন। আর তৈরি শাড়িটা ৬ মাসের মেয়ে শিশুরাও আরামে পড়তে পারে। ধীরে ধীরে বিক্রিও বাড়ল।

সোনিয়ার ইচ্ছে ছিলো এমন কিছু নিয়ে কাজ করার যেটা দেখতে আলাদা, ক্রেতা খুশি হবে। তখন লক্ষ্যস্থির করলেন শিশুদের জন্য কিছু করার। শিশুরা খুশি থাকলে বাবা-মাও খুশি থাকে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবার পর শাড়ির কথা মাথায় আসে। সেই থেকে শুরু তার পথচলা। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সচ্ছল সংসার এখন তার। ‘সনি ফ্যাশন ড্রেসেস’ নিয়ে তার স্বপ্নের পথচলা।
গ্রামের মেয়ে বলে ভালো ছাত্রী হলেও বেশিদূর পড়তে পারেননি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বাবা-মা দূরের রাস্তায় মেয়েকে একা কলেজে দিতে সাহস করেননি। তাই মাধ্যমিকের পরই বিয়ে দিয়ে দেন। তবে পড়ার প্রতি আগ্রহ থাকায় তার স্বামী তাঁকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করান। কিন্তু সীমিত আয়ের সংসারে এর বেশি পড়ানো সম্ভব হয়নি। তবে কাজটা শুরু করার বিষয়ে স্বামীর সমর্থন ছিল পুরোপুরি।

সমস্যা হয় পুঁজি- ২০১৯ সালে ১৯০ টাকা দিয়ে শুরু করেন। গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে থাকেন সোনিয়া। এখন মাসে তাঁর প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা আয়। তাঁর এই শাড়ি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও যায়। স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে তাঁর সুখের সচ্ছল সংসার। সোনিয়া বলেন, এখন আমি একাই সংসার চালানোর ক্ষমতা রাখি।
এমন অনেক সোনিয়া আছেন যারা কোনো না কোনো কারণে বেশিদূর পড়তে পারেননি। কিন্তু নিজে কিছু করার একটা তীব্র আকাক্সক্ষা থাকে। আবার সংসারটাও মনোযোগ দিয়ে করতে চান। তারা সোনিয়াকে দেখে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন। 

×