ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

এই ১টি আচরণই বলে দেয় আপনি গোপনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন!

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ৭ আগস্ট ২০২৫

এই ১টি আচরণই বলে দেয় আপনি গোপনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন!

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা এখনও সহজ নয়। তাই অনেকে তাদের মানসিক কষ্টের কথা গোপন রাখেন। বাহ্যিকভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও, ভেতরে ভেতরে তারা নিঃশব্দে ভেঙে পড়তে থাকেন। এই নীরব কষ্ট প্রায়ই কিছু আচরণগত লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তবে এমন একটি আচরণ আছে, যা অন্যদের কাছে খুবই সাধারণ মনে হলেও, তা প্রায়ই গোপনে মানসিক সংকটে থাকার একটি বড় লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই আচরণটি হলো: সামাজিক মেলামেশা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া বা 'উইথড্রয়াল'।

শুনতে এটি খুব সাধারণ মনে হতে পারে। কেউ একটু চুপচাপ বা একা থাকতে পছন্দ করতেই পারে। কিন্তু যখন একজন মানুষ, যিনি আগে সামাজিক ও প্রাণবন্ত ছিলেন, হঠাৎ করেই তার বন্ধু-বান্ধব, পরিবার বা প্রিয়জনদের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেন—তখন এটি একটি বড় সতর্ক সংকেত।

কেন এই আচরণ গোপনে মানসিক কষ্ট নির্দেশ করে?
১. শক্তি কমে যাওয়া (Lack of Energy): মানসিক চাপ, হতাশা বা বিষণ্নতায় ভুগলে শরীরে শক্তির অভাব দেখা দেয়। দৈনন্দিন কাজ করার মতো শক্তিও থাকে না। সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে যে মানসিক ও শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়, সেটিও তখন থাকে না। তাই সহজ উপায় হিসেবে তারা নিজেকে গুটিয়ে নেয়।

২. অনুভূতি দমন করা (Suppressing Feelings): যারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, তারা প্রায়শই তাদের কষ্ট, রাগ বা হতাশা প্রকাশ করতে পারেন না। তারা মনে করেন, তাদের কষ্ট কেউ বুঝবে না, অথবা অন্যদের কাছে তারা বোঝা হয়ে যাবেন। তাই অন্যদের সামনে হাসিখুশি থাকার ভান করার চেয়ে একা থাকাই তাদের কাছে নিরাপদ মনে হয়।

৩. আনন্দ হারিয়ে ফেলা (Loss of Interest): মানসিক সংকটে থাকা ব্যক্তিরা একসময় যেসব কাজ উপভোগ করতেন (যেমন: শপিং, খেলাধুলা, সিনেমা দেখা), সেগুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। যখন কোনো কিছুতেই আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা সামাজিক মেলামেশা বা অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন।

৪. লজ্জা ও অপরাধবোধ (Shame and Guilt): মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মানুষের মধ্যে প্রায়শই নিজেকে নিয়ে গভীর লজ্জা ও অপরাধবোধ কাজ করে। তারা মনে করেন, তাদের এই অবস্থা তাদেরই দুর্বলতা। তাই এই 'দুর্বলতা' যাতে কেউ দেখতে না পায়, সে জন্য তারা অন্যদের কাছ থেকে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন।

৫. নতুন সম্পর্ক গড়ার ভয় (Fear of New Connections): যারা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, তাদের মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়ার বা পুরনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ভয় তৈরি হয়। তারা মনে করে, এই দুর্বল অবস্থায় কেউ তাদের গ্রহণ করবে না বা তারা নতুন করে আঘাত পেতে পারেন।

কীভাবে বুঝবেন এটি নিছক একা থাকার ইচ্ছা নয়?
হঠাৎ পরিবর্তন: যদি একজন হাসিখুশি এবং সামাজিক মানুষ হঠাৎ করেই নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন, এটি একটি বড় লক্ষণ।

প্রিয়জনদের এড়িয়ে চলা: যদি তিনি তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদেরও এড়িয়ে চলেন, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা গুরুতর।

ফোন না ধরা বা মেসেজের উত্তর না দেওয়া: যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া একটি চরম লক্ষণ।

অজুহাত তৈরি করা: প্রায়শই বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাত তৈরি করে সামাজিক দাওয়াত বা অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলা।

যদি আপনার পরিচিত কোনো মানুষের মধ্যে এই ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তবে তাকে বিচার না করে তার পাশে দাঁড়ানো খুব জরুরি। তাকে জিজ্ঞেস করুন, "তুমি ঠিক আছ তো?" বা "আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারি কি?" এই সাধারণ প্রশ্নগুলোই হয়তো তাকে তার নীরব যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসার সাহস জোগাতে পারে। মনে রাখবেন, মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা উচিত নয়।

ফারুক

×