ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

মোবাইল ছাড়া ঘুমোতে পারেন না? জানুন ভয়াবহ বিপদে পড়ছেন কি না!

প্রকাশিত: ২২:৩১, ৭ আগস্ট ২০২৫

মোবাইল ছাড়া ঘুমোতে পারেন না? জানুন ভয়াবহ বিপদে পড়ছেন কি না!

ছবি: সংগৃহীত

রাতের বিছানায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা এখন অনেকেরই প্রতিদিনের অভ্যাস। ঘুমানোর আগে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা, ভিডিও দেখা বা মেসেজ চেক করা ছাড়া যেন ঘুমই আসে না। কিন্তু এই আপাত নিরীহ অভ্যাসটি আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে, তা কি আপনি জানেন? চিকিৎসকরা বলছেন, মোবাইল ছাড়া ঘুমাতে না পারা একটি মারাত্মক আসক্তি, যা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

মোবাইল ছাড়া ঘুমাতে না পারার বিপদগুলো:
১. ঘুমের গুণগত মান নষ্ট হওয়া: মোবাইল ফোনের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো (Blue Light) মস্তিষ্কে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন নিঃসরণে বাধা দেয়। মেলাটোনিন হরমোন আমাদের ঘুম-জাগরণের চক্র (সার্কাডিয়ান রিদম) নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এর নিঃসরণ কমে যায়, তখন আমাদের মস্তিষ্কের কাছে ঘুমের সংকেত পৌঁছাতে দেরি হয়, ফলে ঘুম আসতেও দেরি হয়। এতে ঘুম গভীর হয় না এবং পরের দিন ঘুম থেকে ওঠার পর ক্লান্তি অনুভব হয়।

২. চোখের ওপর চাপ: অন্ধকারে বা কম আলোতে মোবাইলের স্ক্রিন দেখলে চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এতে চোখ জ্বালাপোড়া, শুষ্ক চোখ (Dry Eye) এবং ঝাপসা দৃষ্টির মতো সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি চোখের রেটিনায়ও প্রভাব ফেলতে পারে।

৩. মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি: ঘুমানোর আগে মোবাইল ব্যবহার করলে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। ক্রমাগত নোটিফিকেশন, নিউজ ফিড বা সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যের চাপে মস্তিষ্ক সচল থাকে। এর ফলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার মতো সমস্যা বাড়তে পারে। অন্যের জীবনযাত্রা দেখে নিজের জীবনের সঙ্গে তুলনা করার প্রবণতাও বাড়ে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৪. শরীরের স্বাভাবিক চক্র ব্যাহত হওয়া: মোবাইল ব্যবহারের কারণে দেরিতে ঘুমানো এবং দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি হয়। এতে শরীরের প্রাকৃতিক ঘুম-জাগরণ চক্র বা বায়োলজিক্যাল ক্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘমেয়াদে এই চক্র ব্যাহত হলে হজমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫. কর্মক্ষমতা হ্রাস: রাতের অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়। এর ফলে পরের দিন মনোযোগের অভাব, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। এটি আপনার কর্মজীবনের ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলে।

আপনি যদি মোবাইল ছাড়া ঘুমাতে না পারেন, তাহলে কী করবেন?
নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ: ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করে দিন। এই সময়টায় বই পড়া, হালকা গান শোনা বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলার মতো রুটিন তৈরি করুন।

মোবাইলের সেটিংস পরিবর্তন: রাতে ঘুমানোর সময় মোবাইলের নাইট মোড (Night Mode) বা ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন। এটি স্ক্রিনের নীল আলোর পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দেবে।

মোবাইলকে বিছানা থেকে দূরে রাখুন: মোবাইলকে বিছানার নাগাল থেকে দূরে অন্য একটি টেবিলে রাখুন। অ্যালার্মের জন্য পুরনো ঘড়ি ব্যবহার করুন। এতে রাতে ফোন চেক করার প্রবণতা কমবে।

ঘুমের পরিবেশ তৈরি: ঘরের আলো কমিয়ে দিন, পর্দা টেনে দিন এবং একটি শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন। এতে আপনার মস্তিষ্ক ঘুমের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে।
যদি এসব অভ্যাস পালনেও আপনার সমস্যা হয়, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, ভালো ঘুম সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে আজই ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন এবং আপনার স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখুন।

ফারুক

×