ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

পা ভিজলেই বিপদ! বৃষ্টির পানিতে লুকিয়ে রয়েছে মারাত্মক যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি!

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:৪২, ৯ জুলাই ২০২৫

পা ভিজলেই বিপদ! বৃষ্টির পানিতে লুকিয়ে রয়েছে মারাত্মক যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি!

ছবি: সংগৃহীত

এক সময় বৃষ্টি মানেই ছিল স্কুল ছুটি, বাসায় বসে গরম নাশতা আর বৃষ্টির রোমাঞ্চ। কিন্তু বড় হয়ে সেই ‘রেনি ডে’র আনন্দ বাস্তব জীবনের চাপে হারিয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি হলেই রাস্তায় নামতে হয়—চাকরি হোক কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজন, কাজ তো আর থেমে থাকে না।

রাস্তাঘাটে হাঁটার সময় কাদাময়, নোংরা পানিএড়ানো অসম্ভব। পা ভিজছে, জুতা কাদায় ভরে যাচ্ছে, আবার সেই ভেজা পা নিয়েই অফিসে ঢুকতে হচ্ছে কিংবা দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে বিভিন্ন কাজে। অনেকেই বাড়ি ফিরে পা ধুচ্ছেন, কিন্তু ততক্ষণে হয়তো জীবাণু চুপিসারে ত্বকে ঘাঁটি গেড়ে ফেলেছে!

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জমে থাকা বৃষ্টির পানি ত্বকের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যদি তা দ্রুত পরিষ্কার না করা হয়।

বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া নিজেই ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক জন্মানোর জন্য আদর্শ পরিবেশ। তার উপর, শহরের জলাবদ্ধতা আর নোংরা পানি রোগজীবাণুর বিস্তার কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা ইসলাম জানাচ্ছেন, “জমা পানি যতক্ষণ পায়ে লাগা থাকবে, ততক্ষনই ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এমনকি গণপরিবহনের মাধ্যমে বা বাস-ট্রেনের ভিড়েও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই বাইরে থেকে ফিরেই হাত-পা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা জরুরি। পোশাকও দ্রুত বদলে ঈষদুষ্ণ জলে গোসল করাই ভালো।”

বর্ষার পানিতে ত্বকে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?

ছত্রাকজনিত সংক্রমণ (টিনিয়া):
জুতা বা মোজার মধ্যে ভিজে পা থাকলে পায়ের পাতা, আঙুলের ফাঁকে, এমনকি শরীরের অন্যান্য অংশে চুলকানি ও লালচে দাগ হতে পারে।

ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসঘটিত ফুসকুড়ি:
র‌্যাশ, ফোস্কা, চুলকানি—সবচেয়ে বেশি হয় পায়ের আঙুলের ফাঁকে, কুচকির কাছে বা নাভির চারপাশে।

স্ক্যাবিস (চুলকানির পরজীবী সংক্রমণ):
ছোট ছোট পোকার মাধ্যমে ছড়ায় এটি। খুব সংক্রামক এবং পরিবারের এক সদস্য থেকে অন্যদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

সতর্কতামূলক যা যা করবেন

🔸 জলাবদ্ধতা এড়াতে রাবারের ঢাকাযুক্ত স্যান্ডেল বা গামবুট পরুন।
🔸 বাইরে থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গেই পরিষ্কার পানিতে পা ধুয়ে নিন।
🔸 সম্ভব হলে অফিসে বা গন্তব্যে পৌঁছে সাবান দিয়ে হাত-পা ধুয়ে ফেলুন।
🔸 বাসায় ফিরে ঈষদুষ্ণ গরম জলে স্নান করুন। জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করাই ভালো।

ঘরোয়া প্রতিকারও কার্যকর হতে পারে

✔️ ঈষদুষ্ণ জলে কয়েক টুকরো কর্পূর মিশিয়ে তাতে পা ভিজিয়ে রাখতে পারেন। কর্পূর ছত্রাক প্রতিরোধে সহায়ক।
✔️ নিমপাতা ফুটিয়ে সেই পানিতে হাত-পা ধোয়ার অভ্যাস করলে প্রাকৃতিক জীবাণু প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

ত্বকে র‌্যাশ, জ্বালা, চুলকানি দেখা দিলে দ্রুত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না নিলে সমস্যা মারাত্মক আকার নিতে পারে।

ডা. ফারহানা বলেন, “সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই যদি চিকিৎসা শুরু করা যায়, তাহলে মলমেই উপকার মেলে। তবে দেরি হলে ওষুধ নিতে হয়। আর এই ধরণের সংক্রমণ ছোঁয়াচে হওয়ায় সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিস যেমন তোয়ালে, সাবান, বালিশ—সবই আলাদা রাখা উচিত।”

শিহাব

×