
ছবি: প্রতীকী
সকালের শুরুটাই আমাদের দিনের গতি নির্ধারণ করে দেয়। যে দিন সকালে সংগঠিতভাবে, সঠিক তথ্য ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শুরু হয়, সেই দিনটা সাধারণত অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ ও মানসিকভাবে স্বস্তিদায়ক হয়। এই ব্যস্ত জীবনে, যখন আমাদের সময় খুবই সীমিত, তখন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সকালের সময়টাকে আরও ফলপ্রসূ করে তোলা যায়। বিশেষ করে Google এবং ChatGPT-এর মতো প্রযুক্তিগত সহায়করা আমাদের জীবনে এমনভাবে ঢুকে পড়েছে যে, সঠিকভাবে ব্যবহার করলে দিনের প্রস্তুতি অনেক সহজ হয়ে পড়ে।
প্রতিদিন সকালে আমরা যদি একটি সাধারণ প্রশ্ন করি—“আজকের দিনটা কেমন হতে পারে?”—তাহলে তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমাদের বেশ কিছু দরকারি তথ্যের প্রয়োজন পড়ে। এই তথ্যগুলো যদি আমরা সকালের শুরুতেই পেয়ে যাই, তাহলে পুরো দিনের পরিকল্পনা অনেক বেশি সুসংগঠিত হয়ে ওঠে। যেমন, আবহাওয়ার খবর জানা থাকলে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি ছাতা লাগবে কি না, বৃষ্টির জন্য বিকল্প কোনো রুট বেছে নিতে হবে কি না, কিংবা হাঁটার উপযুক্ত দিন কি না। Google বা ChatGPT-কে শুধু জিজ্ঞেস করতে হবে, “আজকের আবহাওয়া কেমন?”— উত্তরে আমরা আমাদের এলাকা অনুযায়ী আপডেটেড তথ্য পেয়ে যাব।
তারপর আসে দিনের কাজের তালিকা বা টু-ডু লিস্ট। সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেক সময় মাথা ঘোলাটে থাকে, মনে পড়ে না আজকে কোন কাজটা আগে করতে হবে, কোনটা জরুরি, কোনটা অপেক্ষা করতে পারে। এই সময় আপনি যদি ChatGPT-কে বলেন, “আজকের জন্য একটা প্রোডাক্টিভ রুটিন সাজাও”— তাহলে আপনি পাবেন একটি সাজানো রুটিন, যা আপনার সময় ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে। আপনি চাইলে আপনার ক্যালেন্ডারে থাকা কাজগুলো বিশ্লেষণ করে নিতে পারেন, অথবা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে তার জন্য করণীয় জানতে চাইতে পারেন। এটা শুধু সময় বাঁচায় না, মানসিক চাপও কমায়।
অনেকেই সকাল শুরু করেন খবর পড়ে। কিন্তু আজকাল এত বেশি তথ্যের ভিড়ে সত্য-মিথ্যা আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। আপনি যদি ChatGPT-কে বলেন, “আজকের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো সংক্ষেপে বলো”—তাহলে আপনি কয়েক লাইনের মধ্যেই সারাংশ পেয়ে যাবেন। আবার Google ব্যবহার করে সরাসরি নিউজ সাইট বা ইউটিউব চ্যানেল থেকে বিস্তারিত জেনে নেওয়াও সম্ভব। এতে আপনি সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি বা প্রযুক্তির নতুন তথ্য সম্পর্কে আপডেট থাকতে পারবেন, যা অফিসে আলোচনায় বা পড়াশোনায় আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
শরীর ও মন চাঙা রাখা সকালের আরেকটি বড় কাজ। ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় আমরা ব্যায়াম বা মেডিটেশন বাদ দিয়ে দিই। অথচ সকালে ৫-১০ মিনিটের হালকা ফিজিক্যাল এক্টিভিটি বা নিঃশ্বাসের ব্যায়ামও সারা দিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনি যদি ChatGPT-কে বলেন, “শুরু করার জন্য ছোট্ট একটা ফিটনেস রুটিন বলো” বা “একটা সহজ মেডিটেশন গাইড দাও”— তাহলে আপনি এমন কিছু পেয়ে যাবেন যা নিজের ঘরেই অনায়াসে করতে পারবেন। এতে মনও ভালো থাকবে, শরীরও সতেজ থাকবে।
অনেকেই সকালের খাবার নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। “কি খাবো?”— এই প্রশ্নে সময় নষ্ট হয়, আবার ভুল কিছু খেলে দিনজুড়ে ক্লান্তি আসে। Google বা ChatGPT-এর কাছে আপনি জানতে চাইতে পারেন, “৫ মিনিটে কী স্বাস্থ্যকর নাস্তা করা যায়?” কিংবা “ওজন কমানোর জন্য ব্রেকফাস্টে কী খাওয়া উচিত?” আপনি যদি নির্দিষ্ট করে বলেন, “আমি ডায়াবেটিক, আমার জন্য একটা সহজ নাস্তার পরামর্শ দাও”— তাহলেও আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সাজানো উত্তর পাবেন। ফলে খাবার তৈরি সহজ হবে, এবং স্বাস্থ্যও ঠিক থাকবে।
পেশাজীবীদের জন্য সকালে ইমেইল চেক, কাজের প্রস্তুতি, ক্লায়েন্ট মিটিংয়ের রিসার্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ChatGPT এখানে হতে পারে আপনার ভার্চুয়াল সহকারী। আপনি চাইলে বলতে পারেন, “এই ইমেইলের উত্তরটা কীভাবে দেওয়া যায়?” অথবা “আজকের মিটিংয়ে কী কী প্রশ্ন আসতে পারে?” ChatGPT আপনাকে শর্ট নোট, রেসপন্স খসড়া কিংবা আইডিয়া দিয়ে সাহায্য করবে। এতে আপনি কাজের আগেই প্রস্তুত থাকতে পারবেন, সময়ও কম লাগবে।
ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেও সকালের সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাসে যাওয়ার আগে অনেকেই প্রস্তুতি নিতে চায় কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবে বুঝে ওঠে না। আপনি যদি বলেন, “আজকের পাঠ্য বিষয়ের সারাংশ বলো” বা “এই টপিকটা সহজভাবে বুঝিয়ে দাও”— ChatGPT আপনাকে সোজাসাপ্টা, পরীক্ষানির্ভর ব্যাখ্যা দিতে পারবে। এতে করে আপনি কম সময়ে অনেক বেশি শিখতে পারবেন, যা পরীক্ষার জন্যও খুবই উপকারী।
একটি জিনিস আমরা অনেক সময় এড়িয়ে যাই, তা হলো নিজেদের মানসিক প্রস্তুতি। প্রতিদিনের জীবনের চাপে অনেক সময় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি বা হতাশ হয়ে পড়ি। এই সময় আপনি যদি বলেন, “আজকের জন্য একটা অনুপ্রেরণাদায়ক কথা বলো” বা “কীভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যায়?”— ChatGPT আপনাকে এমন কিছু উপদেশ দিতে পারে যা আপনার মনোবল শক্ত করবে, এবং ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলবে।
সব মিলিয়ে বলতে গেলে, প্রতিদিন সকালে Google বা ChatGPT-কে কিছু বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করে আপনি আপনার দিনটিকে অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ, সংগঠিত ও মানসিকভাবে হালকা করে তুলতে পারেন। এটা আপনার অভ্যাসের অংশ করে তুললে ধীরে ধীরে আপনি বুঝতে পারবেন, এই প্রযুক্তি শুধু তথ্য দেওয়ার জন্য নয়। এটা হতে পারে আপনার একান্ত সহচর, আপনার দিনের পথপ্রদর্শক। একটু বোঝাপড়া করে, নিজের চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্ন করলেই আপনি পাবেন এমন সব উত্তর যা আপনার সময়, মেধা ও শ্রম সবকিছুর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করবে। তাই নতুন দিনের সূচনায় Google বা ChatGPT-এর কাছে সঠিক প্রশ্ন করা মানে, নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ়ভাবে নিজের হাতে নেওয়া।
এম.কে.