ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

ডিমেনশিয়ার ৭টি ছলনাময় লক্ষণ—যা অনেকেই এড়িয়ে যান

প্রকাশিত: ০৩:০১, ৮ জুলাই ২০২৫

ডিমেনশিয়ার ৭টি ছলনাময় লক্ষণ—যা অনেকেই এড়িয়ে যান

ছবি: সংগৃহীত।

ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ চেনা সহজ নয়। অনেক সময় এগুলো সাধারণ ভুলে যাওয়া বা মেজাজের সামান্য পরিবর্তন মনে হতে পারে। তবে এসব সূক্ষ্ম সতর্ক সংকেত আগেভাগে ধরতে পারলে রোগ মোকাবিলায় বড় পার্থক্য আনা যায়। দ্রুত শনাক্তকরণ চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করে, রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং রোগী ও তার পরিবারের জন্য সঠিক সহায়তার পথ খুলে দেয়।

১. অদ্ভুত ও অনুপযুক্ত আচরণ
ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ এমন আচরণ করতে শুরু করতে পারেন, যা তাদের স্বভাববিরুদ্ধ এবং সামাজিক নিয়ম–নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় disinhibition বা স্বাভাবিক সংযমের অভাব। মস্তিষ্কে পরিবর্তনের ফলে নিয়ন্ত্রণহীনতা দেখা দেয় এবং তারা অশোভন মন্তব্য করতে পারেন, সামাজিক পরিবেশে অপ্রাসঙ্গিক আচরণ করতে পারেন বা অপরিচিত কাউকে ছোঁয়া, চুপচাপ জায়গায় উচ্চস্বরে কথা বলার মতো আচরণ করতে পারেন।

২. বিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন
অনেক সময় ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এমন কিছু দেখতে বা শুনতে পারেন, যা বাস্তবে নেই। এই বিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন রোগীর আচরণে আকস্মিক পরিবর্তন আনতে পারে। পরিবার ও পরিচর্যাকারীদের জন্য এই আচরণ বিভ্রান্তিকর ও কষ্টদায়ক হলেও, বুঝতে হবে—এটি রোগীর নিয়ন্ত্রণে নয়, বরং মস্তিষ্কের অবক্ষয়ের ফল।

৩. কথা বলতে বা শব্দ খুঁজে পেতে সমস্যা
ডিমেনশিয়ার একটি বড় লক্ষণ হলো ভাষাজনিত সমস্যা। বিশেষ করে primary progressive aphasia নামে এক ধরনের ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়ায় এটি বেশি দেখা যায়। রোগী ধীরে ধীরে সঠিক শব্দ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন, বাক্য গঠন করতে অসুবিধা হয়, ভাব প্রকাশে সমস্যা হয়। এর ফলে সামাজিক মেলামেশা কমে যায় ও মানসিক অবসাদ তৈরি হতে পারে।

৪. গন্ধ চেনার ক্ষমতায় পরিবর্তন
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা Mild Cognitive Impairment বা সামান্য মানসিক অবক্ষয়ে ভুগছেন, তারা গন্ধ চেনা, গন্ধ আলাদা করা বা গন্ধ মনে রাখার ক্ষেত্রে সুস্থদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। AROMHA নামের একটি ঘরোয়া গন্ধ পরীক্ষা ব্যবস্থায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

৫. পরিচিত কাজ করতে অসুবিধা
ডিমেনশিয়ার কারণে দৈনন্দিন সহজ কাজগুলোও জটিল হয়ে উঠতে পারে। যেমন: জামাকাপড় পরার সঠিক ক্রম ভুলে যাওয়া, রান্নার রেসিপি অনুসরণ করতে না পারা, বা গোসলের নিয়মিত অভ্যাস বাদ পড়ে যাওয়া। এর ফলে রোগী ধীরে ধীরে পরিচর্যাকারীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

৬. ভিজুয়াল–স্প্যাটিয়াল বা দৃষ্টিগত–স্থানিক দক্ষতায় সমস্যা
ডিমেনশিয়া শুধু স্মৃতির ওপর প্রভাব ফেলে না, এটি আমাদের পরিবেশ বোঝার সক্ষমতাকেও ব্যাহত করে। রোগীরা দূরত্ব নিরূপণ করতে ভুল করেন, গভীরতা বোঝার সমস্যা হয়, এমনকি পরিচিত মুখ বা স্থান চিনতে অসুবিধা হয়। এর ফলে হাঁটাচলা, গাড়ি চালানো, এমনকি বই পড়ার মতো কাজও কঠিন হয়ে পড়ে।

৭. অ্যালঝেইমার-নির্দিষ্ট লক্ষণ
অ্যালঝেইমার হলো ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ রূপ, যা স্মৃতি, পরিকল্পনা ও সংগঠনের ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মাড়ির রোগের সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাকটেরিয়া (Porphyromonas gingivalis) ডিমেনশিয়া রোগীদের মস্তিষ্কে পাওয়া গেছে। এই ব্যাকটেরিয়া টক্সিন উৎপন্ন করে যা মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে স্মৃতিভ্রষ্টতা ও মানসিক অবক্ষয়ের মতো লক্ষণ দেখা দেয়।

অতএব, মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখা শুধু দাঁতের জন্যই নয়, বরং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্রাশ, ফ্লস এবং দাঁতের ডাক্তার দেখানো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করতেও সহায়ক হতে পারে।

ডিমেনশিয়ার সূক্ষ্ম লক্ষণগুলোকে অবহেলা না করে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া ও সচেতন হওয়াই হতে পারে এই কঠিন রোগ মোকাবিলার প্রথম ধাপ। আপনার এবং পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও জানতে থাকুন আমাদের সাথেই।

মিরাজ খান

×