
ছবিঃ সংগৃহীত
ডিম আমাদের দৈনন্দিন রান্নাঘরের একটি অপরিহার্য উপাদান। দামেও সস্তা, রান্নায় সহজ, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর – ডিম যেন সর্বগুণে গুণান্বিত। তবে প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর? বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যাঁ – তবে কিছু সতর্কতার সঙ্গে।
পুষ্টির এক দারুণ উৎস
প্রতিটি ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা মাংসপেশী, ত্বক, চুল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রোটিন ছাড়াও ডিমে রয়েছে—ভিটামিন A, B12, D
আয়রন ও সেলেনিয়াম
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পুষ্টি উপাদান: কোলিন, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও গর্ভাবস্থায় শিশুর স্নায়ুবিক উন্নয়নে সহায়ক। লুটিন ও জিয়াক্সান্থিন, যেগুলো চোখের যত্নে কার্যকর, বিশেষত যারা দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের সামনে থাকেন।
ডিম খাওয়ার উপকারিতা
পেট ভরিয়ে রাখে, ফলে অকারণে খাবার খাওয়া কমে যায়। শরীরচর্চার পর ডিম খেলে পেশি গঠনে সহায়তা করে। স্মৃতিশক্তি উন্নত করে ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখে। চোখের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। দামেও সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য।
প্রতিদিন ডিম খাওয়ার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কোলেস্টেরল: একটি ডিমে থাকে প্রায় ১৮৫ মি.গ্রা. কোলেস্টেরল। যদিও নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কোলেস্টেরল শরীরের রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ায় না তেমন, তবুও যারা ডায়াবেটিসে ভোগেন বা হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত কুসুম খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
অ্যালার্জি: বিশেষত শিশুদের মাঝে ডিমের অ্যালার্জি দেখা যেতে পারে—হালকা চুলকানি থেকে শুরু করে তীব্র প্রতিক্রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
সালমোনেলা সংক্রমণ: কাঁচা বা আধা-সেদ্ধ ডিম খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এতে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাবনা থাকে। সম্পূর্ণ সেদ্ধ বা ভালোভাবে রান্না করা ডিম নিরাপদ। সেদ্ধ বা পোচ করা ডিম সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। ফ্রাই করলে অতিরিক্ত তেল এড়ানো উচিত। চিজ, মাখন বেশি দিলে ক্যালোরি বেড়ে যেতে পারে। ডিম খাওয়ার সময় চেষ্টা করুন— পুরো শস্যের রুটি, সবজি, অ্যাভোকাডো ইত্যাদির সঙ্গে খেতে।
দিনে কতটি ডিম খাওয়া নিরাপদ?
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য দিনে ১-২টি ডিম খাওয়া নিরাপদ। সপ্তাহে ৭-১২টি ডিমও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঝুঁকিহীন। যাদের শরীরচর্চা বেশি, তারা আরও বেশি ডিম খেয়ে থাকেন।
তবে শুধুমাত্র ডিম খেয়ে আপনি সব পুষ্টি পাবেন না। তাই ডিমকে একটি সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। আর ডিমের গুণমানও গুরুত্বপূর্ণ—যদি সম্ভব হয়, ফ্রি-রেঞ্জ বা অর্গানিক ডিম বেছে নেওয়াই ভালো।
প্রতিদিন ডিম খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী, যদি তা পরিমিত ও সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে খাওয়া হয়। ডিম আপনার শরীরকে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেয়, তবে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা অ্যালার্জির ঝুঁকিও বিবেচনায় রাখা জরুরি। সবশেষে, ডিম খাওয়ার ব্যাপারে সবসময়ই মনে রাখতে হবে, সন্তুলনই সবকিছুর চাবিকাঠি।
নোভা