ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বয়স বাড়লেও স্মৃতি থাকবে ধারালো! আজই বাদ দিন এই ৭ অভ্যাস!

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

বয়স বাড়লেও স্মৃতি থাকবে ধারালো! আজই বাদ দিন এই ৭ অভ্যাস!

ভেবেছেন কখনো কেন কেউ বয়স বাড়ার পরও খুঁটিনাটি সবকিছু মনে রাখতে পারেন, আর কেউ আবার কিছুক্ষণ আগের কথাটাও ভুলে যান?আসলে ব্যাপারটা অনেকটা আমাদের ছোট ছোট অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। এমন কিছু অভ্যাস, যা দিনের পর দিন করে যেতে যেতে অজান্তেই আমাদের স্মৃতিশক্তিকে ধোঁয়াশা করে দেয়।

ভয় পাবেন না, ব্যাপারটা এমন না যে প্রতিদিন ম্যারাথন দৌড়াতে হবে বা কোন কড়া ডায়েটে যেতে হবে। বরং সামান্য কিছু বদল আনলেই মস্তিষ্ক আবার নিজের রঙে ফিরতে পারে।চলুন, একটু খোলা মনে দেখে নিই,কোন অভ্যাসগুলোকে এখনই বিদায় জানানো উচিত যদি আপনি চান স্মৃতিশক্তি ঝকঝকে থাকুক।

১. সব একসাথে সামলাতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলছেন?
আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে একসাথে দশটা কাজ করতে পারা একটা গুণ বলে ধরা হয়। কিন্তু জানেন কি, এতে আমাদের মস্তিষ্ক আসলে দিশেহারা হয়ে যায়?
একবারে অনেক কাজ করতে গেলে মনোযোগ খণ্ড খণ্ড হয়ে যায়, আর সেই সঙ্গে নতুন কিছু শেখার বা মনে রাখার ক্ষমতাও কমে যায়।

ধরুন, আপনি একসাথে রান্না, ফোনে কথা, আর টিভি দেখা চালিয়ে যাচ্ছেন,কোনটা ঠিকভাবে মনে থাকবে বলুন তো?তাই একটু মনোযোগে ফিরুন।একসাথে অনেক কিছু নয়, বরং এক সময়ে একটাই কাজ করুন মন দিয়ে।

২. শরীর যখন বসে থাকে, মস্তিষ্কও থেমে যায়
আগে বই পড়তে পড়তেই সময় কাটাতেন,হাঁটাচলার থেকে সোফায় পড়ে থাকা পছন্দ ছিল বেশি। কিন্তু একটা সময়ে এসে বুঝবেন, কিছু কিছু কথা, নাম, বা দিনের কাজ ভুলে যাচ্ছেন।

নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শুধু শরীর না, মস্তিষ্কও চাঙ্গা থাকে। একটু একটু করে হাঁটা শুরু করুন। লিফট বাদ, সিঁড়ি বেছে নিন। ছোট ছোট বদলই অনেক বড় পরিবর্তন এনে দিবে,মাথা যেন পরিষ্কার, স্মৃতি আগের মতোই ঝকঝকে!

৩. ঘুম যখন কম, স্মৃতির ফাইল গুলিয়ে যায়
রাতে কম ঘুমিয়ে সকালে মনে হয় মাথাটা ভারী? সেটা শুধু ক্লান্তির জন্য না,আপনার ব্রেন আসলে ঠিকমতো বিশ্রাম পায়নি, তাই গতকালের তথ্যগুলো জমা দিতে পারেনি।
ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক যেন একটা লাইব্রেরিয়ান দিনের যত অভিজ্ঞতা, কথা, শেখা সব ফাইল করে রাখে। আর যদি ঘুমটা না হয়, সব এলোমেলো।

তাই যদি স্মৃতিকে টিকিয়ে রাখতে চান, ঘুমের সময়কে গুরুত্ব দিন। মোবাইল স্ক্রল না করে একটু আগে বিছানায় যান, দেখবেন পার্থক্য কতটা।

৪. মস্তিষ্কও চায় একটু চ্যালেঞ্জ!
স্মৃতি যেন একটা পেশির মতো ব্যবহার না করলে দুর্বল হয়ে যায়।
একটু রিডিং, পাজল, নতুন রেসিপি শেখা, বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো,সবই মস্তিষ্ককে জাগিয়ে রাখে। আপনি যত নতুন কিছু করবেন, তত বেশি মস্তিষ্ক সজাগ থাকবেতাই আজই শুরু করুন,হোক সেটা পুরনো বই পড়া কিংবা ইউটিউবে নতুন কিছু শেখা।

৫. সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন?
চাপ আর টেনশন আমাদের জীবনের অংশ, ঠিকই। কিন্তু সেটা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন মস্তিষ্কই সবার আগে প্রতিবাদ করে।

চাপের হরমোন ‘কর্টিসল’ মস্তিষ্কের যে অংশটা স্মৃতি ধরে রাখে, সেটারই ক্ষতি করতে শুরু করে। তখন শুরু হয় ভুলে যাওয়া, মন খারাপ, একধরনের ঝাপসা ভাব।আপনার উচিত এমন কিছু খুঁজে নেওয়া, যেটা আপনাকে চাপমুক্ত রাখে।কারণ, একটা শান্ত মাথাই পারে সব কিছু ধরে রাখতে।

৬. প্লেটেও থাকে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য
যা খাচ্ছেন, সেটার প্রতিফলন শুধু পেটেই না, মাথাতেও পড়ে।

জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত চিনি আর ফাস্ট ফুড স্মৃতিকে ধীরে ধীরে ঝাপসা করে তোলে। আর টাটকা ফল, সবজি, বাদাম, বা ডার্ক চকলেট? তারা ঠিক উল্টো কাজটা করে।ভালো খাওয়া মানে শুধু ডায়েট না,এটা মানসিক স্বাস্থ্যেরও একটা চাবিকাঠি।

৭. কথা না বললে, মনও বন্ধ হয়ে যায়
আপনার কবে শেষবার কাউকে নির্ভয়ে মনের কথা বলেছেন?
বয়স বাড়লে আমরা অনেক সময় আলাদা হয়ে যাই, একা থাকতে শুরু করি। কিন্তু সেটাই স্মৃতির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে গল্প, কিংবা প্রতিবেশীর সঙ্গে চা খাওয়া,এসবের কোন বিকল্প নেই।মানুষের সাথে সংযোগ যত বাড়বে, মস্তিষ্কও তত ফুরফুরে থাকবে।একটা চঞ্চল মাথাই জীবনের সেরা স্মৃতি তৈরি করে।স্মৃতিশক্তিকে ভালো রাখার পথটা একদিনে হয় না, এটা আসলে প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাস দিয়ে গড়ে ওঠে।

বেশি ঘুম, কম চাপ, একটু হাঁটা, ভালো খাওয়া আর প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সময় এই সব মিলেই গড়ে ওঠে একটা ঝকঝকে স্মৃতি, আর তার সঙ্গে এক দুর্দান্ত জীবন।ভালো থাকুন, মনে রাখুন মাথার যত্ন মানে জীবনের যত্ন।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/544neskv

আফরোজা

×