ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

দীর্ঘায়ু লাভের ক্ষেত্রে জিনের পাশাপাশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৬:৩৩, ৭ মার্চ ২০২৫

দীর্ঘায়ু লাভের ক্ষেত্রে জিনের পাশাপাশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা

ছবি: সংগৃহীত

আপনার যদি এমন কোনো বাবা-মা বা দাদা-দাদী থাকেন যারা ৯০-এর কোঠা পার করেছেন বা শতায়ু হয়েছেন, তাহলে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ বলেছেন, “আপনার তো ভালো জিন আছে!” কিন্তু যদি দীর্ঘায়ু আপনার পরিবারে প্রচলিত না হয়, তাহলে চিন্তার কিছু নেই: আপনার জীবদ্দশা আসলে জিনের চেয়ে বেশি নির্ভর করে আপনার জীবনধারা ও পরিবেশের ওপর, এমনটাই জানিয়েছে Nature Medicine জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা।

অর্থাৎ, আপনার আত্মীয়স্বজন কত বছর বেঁচেছিলেন, তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আপনি নিজেও দীর্ঘায়ুর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন আপনার জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তনের মাধ্যমে। আসুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গবেষণায় কী পাওয়া গেছে

যুক্তরাজ্যের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন, কারা ৭৫ বছরের আগেই মারা গেছেন এবং কেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৪৫,০০০ মানুষের ওপর আরও গভীরভাবে তাদের জৈবিক বার্ধক্য পর্যবেক্ষণ করা হয়। তারা তুলনা করেছেন জিনগত ঝুঁকি ও জীবনযাত্রার বিভিন্ন উপাদান, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় এক্সপোজোম বলা হয়।

আমাদের জিনোম বা জিনগত গঠন যেমন নির্ধারিত, তেমনি এক্সপোজোম গঠিত হয় আমাদের জীবনযাত্রার সব অভিজ্ঞতা থেকে—আমরা কী খাই, কী পান করি, কোথায় বসবাস করি এবং কীভাবে জীবনযাপন করি, সবই এর অন্তর্ভুক্ত।

গবেষণায় দেখা গেছে, মৃত্যুর ঝুঁকির পার্থক্যের মাত্র ২% নির্ধারিত হয় জিন দ্বারা, অথচ পরিবেশগত কারণগুলো প্রভাব ফেলে ১৭%। ধূমপান, আর্থসামাজিক অবস্থা (যেমন: আয়, বসবাসের স্থান, শিক্ষা ও পেশা), শারীরিক সক্রিয়তা ও জীবনযাত্রার মান—এসবই মানুষের জৈবিক বার্ধক্য এবং মৃত্যুর ঝুঁকির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।

এর মধ্যে কিছু বিষয় যেমন আয় বা বসবাসের স্থান পরিবর্তন করা কঠিন, তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫টি পরিবেশগত ভেরিয়েবলের মধ্যে ২৩টি পরিবর্তনযোগ্য। আর বেশিরভাগ পরিবর্তনই তুলনামূলক সহজ।

তাহলে কি জিন কোনো ভূমিকা রাখে না?

অবশ্যই রাখে, তবে তার প্রভাব বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু রোগের ক্ষেত্রে জিনের ভূমিকা বড় হতে পারে, যেমন APOE জিনের নির্দিষ্ট ভ্যারিয়েন্ট থাকলে আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, আবার BRCA1BRCA2 জিনের পরিবর্তন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

কিন্তু এসব জিনও আমাদের জীবনধারা ও পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। গবেষণার প্রধান গবেষক অস্টিন আর্জেন্টিয়েরি বলেন, “একজন মন্তব্য করেছিলেন, ‘জিন আমাদের জীবনের পাশা ঘুরিয়ে দেয়, কিন্তু আমরা কিভাবে খেলব, তা আমাদের ওপর নির্ভর করে।’” অর্থাৎ, যদি আমাদের জিনগত গঠনে ঝুঁকি থাকে, তবুও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা তা কমাতে পারি।

রাকিবুল

×