ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে এলো ঈদে মেহেদি দেয়ার প্রচলন

প্রকাশিত: ১৫:০৩, ১১ এপ্রিল ২০২৪

যেভাবে এলো ঈদে মেহেদি দেয়ার প্রচলন

মেহেদি

ঈদে মেহেদির রঙে হাত সাজানো শুনলেই একটা উৎসব উৎসব গন্ধ পাওয়া যায়। মেহেদি দিয়ে হাত রাঙানো ছাড়া কোনো উদযাপনই যেন পরিপূর্ণতা পায় না। তাই সুপ্রাচীনকাল থেকে যেকোনো ধর্মীয় উৎসব থেকে শুরু করে পালাপার্বণ সবকিছুতেই রয়েছে মেহেদি পাতার আধিপত্য। তবে কিভাবে এসেছে ঈদে মেহেদি দেয়ার প্রচলন তা জানেন না অনেকেই। 

চলুন জেনে নেয়া যাক এর ইতিহাস:-

মেহেদি পাতার ইতিহাস: মেহেদি হিন্দি ও উর্দুতে মেহেন্দি, ইংরেজিতে হেনা (Henna), মধ্য-প্রাচ্যে হেন্না, মধ্য-এশিয়ায় ‘আল-খান্না’ নামে পরিচিত যা আরবি শব্দ আল-হিন্না (Al-Hinna) থেকে এসেছে। এর ইউনানি নাম হেনা, আয়ুর্বেদিক নাম মদয়ন্তিকা, বোটানিক্যাল নাম লসোনিয়া ইরামিস (Lawsonia Inermis) যা লেথরেসিয়া (Lythreaceae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।

রাজধানীর এক বিউটি পার্লারে ছোট মেয়েকে নিয়ে মেহেদির রঙে হাত সাজাতে এসেছেন নিশাত ইয়াসমিন নামের এক নারী। তিনি জানান, ঈদের সময় আমরা সবাই চাই সুন্দর হয়ে সাজতে। আর মেহেদি আমাদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। এ কারণেই মেহেদীটা পরি। এতে ঈদের আনন্দটাও বেড়ে যায়।

শরীরে এই মেহেদি দেয়ার ইতিহাস অনেক আগের। তবে ঠিক কবে কোথায় মেহেদির আবিষ্কার হয়েছিলো তার সঠিক কোন দিনক্ষণের ব্যাপারে কোন তথ্য মেলেনি।

এই বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক তৌহিদুল হক জানান, ‘লিখিত কোনও দলিল না থাকলেও হযরত মোহাম্মদ (স.) -এর মেহেদি ব্যবহারের তথ্য মুসলমানদের এই মেহেদি ব্যবহারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। পরে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্য এই মেহেদি দেয়ার প্রথাকে আরও প্রসারিত করে। 

তিনি জানান, মেহেদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে হযরত মোহাম্মদ (স.) এর একটি উক্তি রয়েছে। এই বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে এই ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময় মেহেদির ব্যবহার শুধুমাত্র মুসলিম জনগোষ্ঠী বা মুসলিম সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে মুঘল সাম্রাজ্যের জনগণ এটাকে প্রসারিত করে।

অধ্যাপক তৌহিদুল হক আরও জানান, ‌‘শুরুতে মেহেদির প্রচলন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের জায়গা থেকে শুরু হলেও পরে এই প্রথাটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় পেয়েছে। তবে এখন মানুষ এখন এটাকে সার্বজনীন রূপে গ্রহণ করেছে। তবে একেক দেশে একের ধরণের কারণ আর উদ্দেশ্যে মেহেদি ব্যবহার হয়।’

ইতিহাসের বইগুলোয়, মিসরের ফারাও সাম্রাজ্যে মমির হাতে ও পায়ের নখে মেহেদির মতো রঙ দেখা যায়। তবে সেটা মেহেদি দিয়ে রাঙানো কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আবার বর্তমান যুগে বিভিন্ন ধর্মের বিয়ের উৎসবে মেহেদি সন্ধ্যা নামে আলাদা একটি দিনের আয়োজন করা হয় যেখানে বর কনে থেকে শুরু করে পুরো পরিবার আনন্দে মেতে ওঠে শুধুমাত্র মেহেদির রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুলতে। আবার অনেকে চামড়ার বিভিন্ন রোগের জন্য হার্বাল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করছে এই মেহেদি।

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে মেহেদির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এবং আফ্রিকায় যেসব দেশের ভাষা অ্যারোবিক সেসব দেশেও ব্যবহৃত হয় এই মেহেদি।

এস

×