ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ উন্নয়নে ফাহমিদার বহুমুখী কর্মযোগ

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ২৪ মার্চ ২০২৩

সমাজ উন্নয়নে ফাহমিদার বহুমুখী কর্মযোগ

মনিরা নাহার ফাহমিদা, নিজেকে একজন সমাজকর্ম হিসেবে পরিচয় দিতে

মনিরা নাহার ফাহমিদা, নিজেকে একজন সমাজকর্ম হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। জন্ম ও বেড়ে ওঠা কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্য গ্রামে। পিতা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব। উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, মা ফেরদৌস আরা বেগম অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক। কর্মজীবন শেষ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নানামাত্রিক উপদেশ আর পরামর্শের কর্তা হিসেবে। এক সচ্ছল পরিবারের কন্যা হয়েও বেড়ে ওঠার সুবর্ণ সময়ে নিজেকে তৈরি করেছেন হার না মানা এক নারীর দৃঢ় প্রত্যয়।

কথোপকথনে তেমন সাবলীল বলিষ্ঠ কণ্ঠই উচ্চারিত হয়েছে। শুভাঢ্য উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মাধ্যমিক ও বেগম বদরুন্নেছা মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর মেধা ও মনন যোগ্যতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি (সম্মান) হয়ে স্নাতক স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করাও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাঠক্রম। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাননি।

এছাড়া ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর ডিপ্লোমা করা ফারহানা নিজ উদ্যোগে উদ্যোক্তা বনে যাওয়াও লড়াকু জীবনের ক্লান্তিহীন পথচলা। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুঠির শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাসঙ্গিক বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ সমাপ্তের পর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অদম্য স্পৃহায় পেশাগত জীবনে নানা মাত্রিকে ভরিয়ে তোলেন। তারই ধারাবাহিকতায় অর্জনের পাল্লা ভারি হতে খুব বেশি সময় লাগেনি।

যেহেতু নারী সংশ্লিষ্ট হরেক কর্মদ্যোতনায় নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন  সেখানে সম্মাননা পেয়েও সফল হয়েছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় রোকেয়া দিবস উপলক্ষে সমাজ উন্নয়নে নানা মাত্রিক কর্মযোগ নিরলস প্রচেষ্টায় জয়িতা পুরস্কার ২০১৬ পাওয়াও নিজের এক অনবদ্য মাইলফলক। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক শহীদুল ইসলামের ঘরণী হয়ে সংসার জীবনের শুভসূচনা করেন। সম্প্রতি ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন উপলক্ষে ফারহানার বক্তব্য সাবলীল, যৌক্তিক এবং প্রাসঙ্গিক।

যেহেতু লড়াইটা পুুরুষের বিরুদ্ধে নয় সেখানে নারীর সার্বিক অধিকার অর্জনে শুধু নারী কেন সহযোগী শক্তি হিসেবে পুরুষদেরও পাশে থাকা বাঞ্ছনীয়। যে কোনো মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা পায় সমাজের আদি ও অকৃত্রিম সংগঠন পরিবার থেকেই। প্রতিটি পরিবার যদি তাদের কন্যা সন্তানকে সব ধরনের অধিকার দিতে থাকেন সেখানে সেই সমতা সমাজে সম্প্রসারিত হতে সময় লাগে না। ফারহানা মূলত পরিবার থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতার জালে আটকে পড়েননি। সেটা বাপের বাড়ি কিংবা স্বামীর সংসার সবখানেই অবাধ স্বাধীনতা ও অধিকার পেয়েছেন। তা না হলে এতদূর নির্বিঘেœ নিঃসংশয়ে এগিয়ে আসতে আরও হোঁচট খেতে হতো। 
এই উদ্যোক্তা নিজেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীবিষয়ক নানামাত্রিক কর্মপরিকল্পনায় এগিয়ে নিয়েছেন। নিজের অভাবনীয় কর্মপ্রকল্পে সামান্য ঋণ নিয়ে যে ব্যবসা শুরু করেছেন সেখানে তিনি ক্রমান্বয়ে সফল হতে যা প্রয়োজন সবটাই করতে পারাও অবধারিত লক্ষ্যমাত্রা। নারীদের সৌন্দর্য চর্চা থেকে আরম্ভ করে বৈচিত্রিক পোশাক তৈরি করা ছাড়াও অসহায় ও হতদরিদ্র শিশুদের মধ্যে বিনা মূল্যে বই খাতা বিতরণও তার কর্মসাধনার বিশেষ পর্যায়। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও তার কাজের জায়গা বিস্তৃত হয়েছে।

স্নেহময়ী জননী ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক। আবার স্বামী স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা সব মিলিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য বিশেষ করে নারী স্বাস্থ্য নিয়ে তার উদ্বেগ আশঙ্কা ছাড়াও সুস্থাস্থ্য বিষয়টিও তীক্ষè নজরদারিতে এনেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাজের পরিধি বিস্তৃত করলেও মূল সারবত্তা একটাই- মানুষের কল্যাণে কিছু করে যাওয়া। খেলোয়াড় হিসেবে এই সমাজকর্মী স্বীয় পারদর্শিতা দেখাতে পিছপা হননি। স্কুল ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন অর্জন করা শুধু যে স্বীকৃতি পাওয়া তা নয় বরং নিজেকে সুপ্ত গুণাবলীকেও বিকশিত করার অনবদ্য প্রয়াস। কলেজে চাকতি নিক্ষেপ করেও তৃতীয় স্থানে চলে আসা ক্রীড়া জগতে নিজের আসন পোক্ত করা। কলেজের উচ্চলম্ফ, প্রতিযোগিতায়ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে আপন সক্ষমতা প্রদর্শন করেন। প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালনে নির্দ্বিধায় এগিয়ে চলেছেন। ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১’ এর সম্মাননা অর্জন চলার পথে অদম্য কর্মপ্রেরণা। 
সামান্য ঋণ করে যিনি একদিন উদ্যোক্তার কাতারে নিজের নাম লেখান সেখানে আজ তিনি নারী উদ্যোক্তা তৈরি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে অনেক নারীর কর্মসংস্থান যোগাড় করে দিচ্ছেন। বহুমাত্রিক কাজকে এক সুতায় গেঁথে সমাজে নারী উন্নয়নে যে লড়াকু ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন সেটা অন্য অনেকের জন্য পরম উৎসাহ আর প্রেরণাদায়ক তো বটেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে  জোরালোভাবে। সমসংখ্যক নারীরাও সেভাবে পিছিয়ে থাকছে না।

সর্ব মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া সার্বিক উন্নয়ন কোনোভাবেই দৃশ্যমান হতো না। নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করে চলার পথকে নির্বিঘœ করলে হরেক বিপর্যয়ও তাদেরকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, অধিকার বঞ্চনা থেকে শুরু করে নৃশংসতার আঁচড় বসাতেও যেন সময় লাগে না। এমন প্রতিবন্ধকতার মাঝেও যারা এগিয়ে আসার তারা ঠিকই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেও যাচ্ছেন।

×