ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৌলভীবাজার পূজা পরিচালনায় নারী

-

প্রকাশিত: ০১:৪০, ৭ অক্টোবর ২০২২

মৌলভীবাজার পূজা পরিচালনায় নারী

বাংলাদেশে এখন নারীদের অবস্থান অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন

সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে দুর্গাউৎসবের সর্বশেষ আয়োজন প্রতিমা বিসর্জন। ভক্ত অনুরাগিদের শ্রদ্ধা, ভালবাসায় দেবি দুর্গার অন্তিম যাত্রা সেও যেন এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বহু কাক্সিক্ষত, প্রত্যাশিত দুর্গতিনাশিনী দুর্গা আবাহন চিরায়ত এক আধ্যাত্মবোধ। দুর্গা নারীশক্তির বিশাল এক প্রতিমূর্তি যা যুগ থেকে যুগান্তরে বিশ্বাসী ভক্তদের অনুপ্রাণিত এক অনন্য সম্ভার।

নারী শৌর্যের এমন আবাহনে দশভূজা দুর্গা যেন ব্যাপক কর্মদৌতনারও অনবদ্য অনুষঙ্গ। কিন্তু প্রচলিত সংস্কার বিধি অনুযায়ী নারীর অভাবনীয় মহিমায় সজ্জিত দুর্গার পূজাম-প পরিচালিত হয়েছে মূলত পুরুষদের কর্মযোগে। পুরোহিত থেকে শুরু করে সার্বিক কর্মপ্রক্রিয়া ন্যস্ত থাকে পুরুষ ভক্তদের হাতে। হ্যাঁ, নারীরা সমর্পণে, নিবেদনে দুর্গা মাকে অর্ঘ্যে আর আরতিতে পূর্ণ করে দেয়। শুধু তাই নয়, সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এমন মঙ্গলযোগে নিজেদের নিঃশর্ত, নিঃস্বার্থ আবেদনে।

কিন্তু বাংলাদেশে ২০১৯ সাল থেকে এক ব্যতিক্রমী চিত্র প্রতিভাত হয় সিলেট জেলায়। পূজাম-পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নারীদের অভাবনীয় কর্ম সঞ্চালনা। সিলেটের মৌলভীবাজারের পশ্চিমে প্রাচীন এক মন্দির ‘শ্রী শ্রী দুর্গা বাড়িতে’ ২০১৯ সাল থেকে পূজা উদ্যাপনে নারী নেতৃত্ব এগিয়ে। তবে সহযোগী হিসেবে পুরুষরাও পাশে থেকেছেন। দৃষ্টিনন্দন এক চমৎকার পরিবেশনা তো বটেই। ২০১৯ সালে পূজাম-প পরিচালনায় নারী আধিপত্য দৃশ্যমান হলেও সংখ্যা ছিল নিতান্ত অপ্রতুল।

তবে গত কয়েক বছরের ক্রমাগত নারী ভক্তদের পরিচালনা সামনে চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যাও সেভাবে বেড়ে যাওয়া সার্বিক ব্যবস্থাপনার ইতিবাচক নির্দেশনা। দুর্গা উৎসবের বিস্তৃত আয়োজনে অনবদ্য এক কর্মক্ষমতায় নারী নেতৃত্ব সত্যিই ইতোমধ্যে নিজেদের প্রমাণ করতে খুব বেশি সময় নেয়নি। নারী শক্তির আধার দুর্গার মহিমান্বিত রূপ শৌর্যে সংশ্লিষ্ট রমনীয় সত্তাই তো সবার আগে উদ্বেলিত হওয়া সঙ্গত।

শুরুতেই আবাহনে দুর্গার আগমনী বন্দনা নারী পরিচালনায় উৎসবমুখর হওয়া ছাড়াও সার্বজনীন আবহে মাতিয়ে দেওয়াও মর্ত্য,ে অমর্ত্যে নারী বিজয়িনী শক্তির অবিস্মরণীয় উপহার তো বটেই। বাংলাদেশে এখন নারীদের অবস্থান অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। শিক্ষায়, পেশায়, ঝুঁকিপূর্ণ কর্মযোগে অপেক্ষাকৃত দুর্বল আর পিছিয়ে নারীরা দুঃসাহসিক মনোবলে আপন শক্তিতে উজ্জীবিত হতে একবারও পেছনের দিকে মোটেও তাকাচ্ছে না। প্রচলিত প্রথাবিরুদ্ধ এই ব্যতিক্রমী কার্যক্রমে নারীরা এগিয়ে এসেছে ২০১৯ সালের দুর্গাপূজার পরম সন্ধিক্ষণে।

তা প্রায় ৩ বছর তার পালাক্রমে এখন চতুর্থ বর্ষে পা দিয়েছে। সূচনালগ্নে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকে নারীদের অংশগ্রহণে পুরুষ সহযোগীরা অন্যান্য পদ অলঙ্কৃত করাও দৃষ্টিগোচর হয়। তবে ২০২২ সালের পূজা উদ্্যাপন কমিটিতে উল্লেখযোগ্য সমস্ত পদই নারীদের অধীনে। তবে পুরুষরা নেতৃত্বে না থাকলেও বরাবরের মতো এবারও তাদের পাশে সহযোগী শক্তির ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। প্রতিমা প্রস্তুত থেকে শুরু করে প্রাসঙ্গিক সব আড়ম্বরই নারীরা সফলভাবে এগিয়ে নিতে পেরেছেন।

সনাতন ধর্মের আচারনিষ্ঠতা প্রচলিত বিধিই শুধু নয়, বরং ধর্মীয় উৎসবের আধ্যাত্ম দর্শনের ব্যাপক কর্মযোগও। দেবীর আরাধনা ছাড়াও দুর্গার সার্বিক মহিমান্বিত রূপ যথার্থভাবে উপস্থাপন করা ভক্ত অনুরাগীদের ভেতরের বোধে জিইয়েও থাকে। যা কাল থেকে কালান্তরে এমনকি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও প্রবলভাবে দীপ্যমান এবং প্রবহমানও বটে।

সঙ্গত কারণে সার্বিক দৈবশক্তি নিয়ে মর্ত্যে আবির্ভূত দুর্গা অপরাজেয় নারী শক্তির অনন্য নজিরই শুধু নন অসুর বধ করে দুর্গতি নাশিনীর উজ্জ্বল ভূমিকায়ও অসাধারণ কর্মযোগে নিয়তই নিয়োজিত থাকেন বলে সেই প্রাচীনকাল থেকেই নন্দিত হয়ে আছেন। আধুনিককালের সমৃদ্ধ জগতেও তার অফুরান প্রাণশক্তি নিরন্তর।
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×