.
শরত আসে শুভ্রতার আলো ছড়িয়ে। শরতকালে দেখা যায় তিন ঋতুর আবহ। গ্রীষ্মের তাপ, বর্ষা দিনের ঝুম বৃষ্টি আবার কখনও শীতের ঠান্ডা অনুভূতি। মাঝে মাঝে বেরসিক বৃষ্টিতে হারিয়ে যায় মেঘের শুভ্রতা। এই ছন্দহীন বৃষ্টিই যেন প্রকৃতিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে শরতকে বরণ করে। কবি সাহিত্যিকরা নানা গল্প, কবিতা ও উপন্যাসে শরতের সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন। আর শরতের প্রকৃতি অনুভব করতে ঢাকার ব্যস্ত মানুষরা যানজট ঠেলে চলে যায় শহরের কাছাকাছি থাকা কাশবনে। প্রকৃতির মোহে ছবি তুলে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ছড়িয়ে পড়ে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। কাশফুলের অদৃশ্য নরম ছোয়া যেন লেগে থাকে সারা বছরজুড়ে। আর শরতের শুভ্রতা পোশাকে ফুটিয়ে তুলতে ফ্যাশনেবল মানুষ আজকাল খুবই সচেতন। এসব ফ্যাশনেবল তরুণ-তরুণীর জন্য দেশীয় বুটিকস হাউসগুলোও তৈরি করছে নিত্যনতুন আকর্ষণীয় পোশাক।
এই ঋতুতে পোশাকের রং, কাপড় এবং ডিজাইন নির্বাচন করা হয় বিশেষভাবে। শরতকালের প্রকৃতি স্নিগ্ধ হওয়ায় এ ঋতুকে একটু বেশিই পবিত্র মনে হয়। কেননা শরত মানেই নীল-সাদা মেঘ আর কাশফুলের আমন্ত্রণ। প্রতিবারের মতো এ বছরও শরতের পোশাকে ডিজাইনাররা নানা রঙের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। সাদা-নীলের সঙ্গে যোগ করেছেন আকাশি, হালকা সবুজ, কমলাসহ নানা রং।
দেশীয় ফেব্রিকস, প্রাকৃতিক মোটিফ এবং সাশ্রয়ী দাম এসব মিলে পোশাক বাজার জমজমাট তবে অন্যান্য কালারের কম্বিনেশনও থাকছে। থাকছে ডিজাইন ভ্যারিয়েশন। পোশাকে আরামের কথা বিবেচনা করে বেছে নেয়া হয়েছে কটন, হ্যান্ডলুম কটন, লিনেন, হাফ সিল্ক, জর্জেট, সিল্ক, পেপার সিল্ক, অরগাঞ্জা ফেব্রিক যা শরতের আবহাওয়া স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার হয়েছে হাতের কাজ, এ্যাম্ব্রয়ডারি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট, কারচুপির কাজ।
ঋতুভিত্তিক পোশাকগুলো সাধারণত তরুণ প্রজন্মকে বেশি আকৃষ্ট করে। এ কারণে ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাদের রুচি-পছন্দকেই অধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কাশফুলের সিম্বলিক হ্যান্ড পেইন্ট আকর্ষণীয় করছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, পাঞ্জাবি ও টি-শার্টকে। নীল ও সাদার কম্বিনেশন দেখে মনে হবে এ যেন নীল আকাশে সাদা মেঘ খেলা করছে। এছাড়াও ফ্যাশন হাউসগুলোতে রয়েছে সব বয়সীদের জন্য মনোরম পোশাক।
এক ডিজাইনার বলেছেন, ‘শরতের শুরুতে মাঝে মাঝে ভ্যাপসা গরম থাকে তাই আমরা কটন কাপড়কে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। কটন কাপড়ের ওপর বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করা হচ্ছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া। মূলত যে পোশাকগুলো আমরা করেছি তার বেশিরভাগই প্রিন্টবেজ ব্লক প্রিন্ট, স্কিন প্রিন্ট এগুলোর মধ্যে। কাপড়গুলো যেন আরামদায়ক হয় সেজন্য কটন কাপড়ের পাশাপাশি আমরা রংকেও প্রাধান্য দেই। এক্ষেত্রে সাদা, নীল, ব্রাউন বেশি ব্যবহার করেছি, পাশাপাশি অন্যান্য রংগুলোও চলছে। বর্তমানে তরুণীদের কাছে সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল টপস এগুলোর চাহিদা বেশি থাকে। আবার শরত থেকেই বাংলাদেশে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয় তাই এ সময় শাড়ির চাহিদাও বেড়ে যায়।’
লা রিভের প্রধান নির্বাহী পরিচালক মন্নুজান নার্গিস বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মার্জিত ও আরামদায়ক লেংথ, স্টেটমেন্ট কলার এবং ইউনিক স্লিভস এর যে নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে, তার প্রতিফলন দেখা যাবে সব স্মার্ট ক্যাজুয়াল ও এথনিক স্টাইলে। প্রিন্টস্টোরিতে যোগ হয়েছে টোনাল ব্লক, ফ্লোরাল সোলেস, হেজি এস্কেপ, এ্যানসেস্ট্রাল রিপিট, পোয়েটিক স্ক্রিপ্ট, চেকও প্লেইড, সেডিমেন্টারি স্ট্রাইপ, ক্লাসিক কালার ব্লক এবং গ্রেট আউটডোরের মতো হাই-স্ট্রিট প্রিন্ট। কালার প্যালেট ডমিনেট করেছে ব্রিক রেড এবং বারগেন্ডিরঙের শেডগুলো।’ এছাড়া ফ্যাশন হাউসে সকলের জন্য হালকা শীতের পোশাক পাওয়া যাবে বলেও তিনি জানান।
অঞ্জন, বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশ, আড়ং, কে-ক্রাফট, লা-রিভ, ইয়েলোসহ আরও অনেক ফ্যাশন হাউস ডিসকাউন্ট ও বাহারি পোশাক দিয়ে সাজিয়েছে শোরুমগুলো। শরতে থ্রিপিস, কামিজ, কুর্তি, স্কার্ট, টপস, ফ্রক ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে। আর শাড়ি পরতে চাইলে এখন অনায়াসে পরতে পারেন তসর, এ্যান্ডি, তাঁত কিংবা কটন শাড়ি। রাতের দাওয়াতে সিল্ক, কৃত্রিম মসলিন বা কাতান শাড়ি দারুণ লাগবে। তবে শরতকালে মেঘের তর্জন-গর্জন আর প্রখর রোদের দাপট বুঝে সাজ-পোশাকে নিজেকে সাজাতে হবে। তাই যে কোন অবস্থায় হালকা সাজের বিকল্প নেই। আর সাজের উপকরণটি হতে হবে অবশ্যই ভাল ব্র্যান্ডের। ত্বকের ধরন বুঝে ব্যবহার করতে হবে প্রসাধনী সামগ্রী। যুগ যুগ ধরে এই পবিত্র ঋতুর আগমনে মুগ্ধ সর্বসাধারণ। আর শুভ্র শরতকে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় যেভাবে তুলে ধরেছেন-
এখানে আকাশ নীল নীলাভ আকাশজুড়ে সজিনার ফুল
ফুটে থাকে হিম সাদা রং তার আশ্বিনের আলোর মতন আকন্দ ফুলের কালো ভীমরুল এইখানে করে গুঞ্জরণ
রৌদ্রের দুপুর ভরে বার বার রোদ তার সুচিকন চুল
কাঁঠাল জামের বুকে নিংড়ায়ে দহে বিলে চঞ্চল আঙ্গুল।
পোশাক ও
ছবি : বিশ্ব রঙ