
বিয়ের নিমন্ত্রণে যাবেন। সব ঠিকঠাক। কিন্তু উপহার কি দিবেন? কেননা এ যে কেবল উপহার নয়, আশীর্বাদ। শুভ কামনার বস্তুগত রূপ। আর তাই সাধ ও সাধ্যের মাঝে সমন্বয় করে আপনজনের বিয়েতে মনমতো একটা উপহার দেবার চেষ্টা সবাই করে থাকেন। আগে বিয়েতে সোনার গহনা, শাড়ি, কাঠের ফার্নিচার, কাঁসার তৈজসপত্র ইত্যাদি দেবার প্রচলন বেশি ছিল। হয়তো নগদ অর্থ দিতেন কেউ কেউ। তবে দিন বদলেছে। আর তার সঙ্গে মিলিয়ে বদলেছে উপহারের রকমফের। কয়েকজন মিলে উপহার দিলে তেমন ঝামেলা নেই। তবে একা উপহার দিতে গেলেই সাধ আর সাধ্যের চিরায়ত দ্বন্দ্ব ফিরে আসে বার বার। আর মনের মধ্যে হাজারো সংশয়- বাজেটের মধ্যে ভালো দেখে একটা উপহার পাওয়া যাবে কিনা, উপহারটা খুব সাদামাটা হয়ে যাচ্ছে কিনা, পছন্দ করবে তো, সম্মান থাকবে তো, ইত্যাদি আরও কত কিছু। আমাদের বাংলাদেশীদের মধ্যে এই রেওয়াজ তো আছেই যে আত্মীয়, কাছের মানুষ, বন্ধু বা পরিচিত মানুষের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর শুভ আয়োজনে মনের মতো উপহারসহ আমারা আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকি। বিয়ের নিমন্ত্রণ আসলে প্রথমেই মাথায় আসবে কী উপহার দেওয়া যায়? আবার যাদের বিয়ে তারাও অনেক সময় একই রকম উপহার অনেক বেশি পান যা তাদের পুরোপুরি কাজেও লাগে না। তাই উপহার কেনার সময় নুতন যারা বিয়ে করতে যাচ্ছেন তাদের প্রয়োজন আর শখ মাথায় রেখেই উপহার কেনাটা ভাল। চলুন জেনে নেই কি ধরনের বাজেটে কি ধরনের উপহার দিবেন বিয়েতে:
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
নতুন সংসারে তো সব কিছুই লাগবে যেমন ধরুন ওয়াটার ফিল্টার, ননস্টিক হাঁড়িপাতিলের সেট, হটপট, ব্লেন্ডার, জুসার, গ্রাইন্ডার, টোস্টার, রাইস কুকার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ইস্ত্রি কিংবা বিছানার চাদর, কুশন কভার, কম্বল, ফুল দানি, কার্পেট, ডিনার সেট, ইত্যাদি। ঘর সাজানর টুকিটাকি, পেইন্টিং, টেবিল লাম্প, ফটো ফ্রেম, কফি মগ সেট, ছুরি-কাঁটা-চামচের সেট এইগুলোও ভীষণ দরকারি ও মানানসই উপহার নতুন দম্পতিদের জন্য। কনের জন্য পারিজাত ডিজাইনের জুয়েলারি বক্স একটি সুন্দর উপহার।
মধুচন্দ্রিমার প্যাকেজ
নবদম্পতির মধুচন্দ্রিমার জন্য সবচেয়ে বেশি যা লাগবে তা হল টাকা। তাই এমন যদি হয় যে তাদের জন্য হানিমুনের টিকেট কেটে উপহার দিলেন- তবে কিন্তু তারা ভীষণ খুশি হবেই। এ কাজটা নিকটাত্মীয়ের মধ্যে থেকে কেউ করলে বেশি ভাল। চাইলে কয়েকজন মিলেও করতে পারেন।
দলবল মিলে দিতে পারেন
কয়েকজন মিলে একটু বড়সড় উপহারও দিতে পারেন। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে অনেক কিছুই আপনি পছন্দ করতে পারেন। মোবাইল সেট, ক্যামেরা হতে পারে পারফেক্ট গিফট। ডিজিটাল এ্যালবাম অল্প খরচের মধ্যে দারুন হয়। এছাড়াও এলইডি টেলিভিশন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, এমনকি ছোটখাটো কোন আসবাবও হতে পারে অন্য রকম একটা উপহার। ডিএসএলআর ক্যামেরাও উপহার দিতে পারেন।
উপহার যখন বই
বই কোনদিন পুরনো হয় না। বই চিরদিনের বন্ধু। কাজেই আপনার বিবাহযোগ্য বন্ধুটি পরুয়া গোত্রের হলে প্রিয় লেখকের বা তার পছন্দের ঘরানার বই উপহার দিন। বিয়ে যেহেতু, একটি বই না দিয়ে কয়েকটিই দিন বরং! মনের মতো এক সেট বই হাতে বন্ধুর বিয়ের পরের আনন্দ বাড়বে, কমে যাবে না কখনোই। সুন্দর মলাটে করে কার্ডে শুভেচ্ছা জানিয়ে কিছু কথা লিখে দিতে পারেন। এছাড়া নানান ডিজাইনের মোম উপহার দিতে পারেন। আর ফুলের বিকল্প নেই। তাই তাজা ফুলের সুন্দর একটি তোড়া উপহার দিন নব দম্পতিকে।
দিতে পারেন বৃক্ষ
মৃৎ শিল্পের দোকানে বিভিন্ন দামের বনসাই, ছোট এ্যাকুয়ারিয়াম, ঘরে টিকে থাকে এমন গাছ পাওয়া যায়। চাইলে সেগুলো দিতে পারেন। ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে গাছগুলো বেশ কাজে আসবে। আর বন্ধুর যদি গাছগাছালির শখ থাকে, তার নতুন সংসারের সদস্য করে কিছু গাছ উপহার দিতে পারেন।
বর্ণিল টবে করে দিতে পারেন, দেখতে ভাল লাগবে তাতে। খুব গতানুগতিক না হোক, উপহার হিসেবে অন্য অনেক জিনিসের চেয়ে গাছ ঢের বেশি ভাল। মনে রাখবেন উপহার উপহারই। আর মানুষ উপহার দেয়, দেওয়ার আনন্দে। কাজেই যতটুকু দিলে আনন্দ পাবেন তারচেয়ে বেশি কিছু না করাই ভাল। আর হ্যাঁ উপহার দিতে গিয়ে কখনোই প্রতিযোগিতার নামবেন না যেন।