.
সবে তো এই বর্ষা গেল শরৎ এলো মাত্র, এরই মধ্যে শুভ্রকাশে ভরলো তোমার গাত্র। ক্ষেতের আলে নদীর কূলে পুকুরের ওই পাড়টায়, হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে বাঁশ বনের ওই ধারটায়-নির্মলেন্দু গুণ এর কবিতার অংশবিশেষ। শরৎ মানেই সাদা মেঘের শুভ্রতা। দিগন্তজুড়ে কাশফুল। কখনো এক পশলা বৃষ্টি, কখনো প্রকৃতির অপরূপ স্নিগ্ধতা। প্রতিটি ঋতুর আগমনে প্রকৃতিতে ভিন্নরূপ প্রকাশ পায়। আর শরৎ মানেই কাশফুলের শুভ্র প্রকৃতি। গ্রামের পথে-ঘাটে ও নদীর পাড়ে প্রায়ই চোখে পড়ে কাশবন।
তবে নগরায়ণের সভ্যতার কারণে শহর থেকে কিছুটা দূরে গেলেই দেখা মেলে কাশবনের। ইট-পাথরের এ শহরে প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে অনেকেই ছুটে যান সেই দূর-দূরান্তে। যারা যেতে পারে না তারাও এর রূপ-মাধুর্য উপভোগ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ সময়ে বৈচিত্র্যময় নানা ছবিতে নিজেকে ফুটিয়ে তোলেন তরুণ-তরুণীরা। প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হতে পোশাক ট্রেন্ড কেমন হলে ভালো হয় সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। ঋতুভিত্তিক পোশাকগুলো সাধারণত তরুণ প্রজন্মকে বেশি আকৃষ্ট করে। এ কারণে ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাদের রুচি-পছন্দকে অধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কাশফুলের সিম্বলিক হ্যান্ড পেইন্ট করা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, পাঞ্জাবি ও টি-শার্ট এ সময়ের জন্য উপযুক্ত। নীল ও সাদার কম্বিনেশন দেখে মনে হবে এ যেন নীল আকাশে সাদা মেঘ খেলা করছে। এছাড়াও ফ্যাশন হাউসগুলোতে রয়েছে সব বয়সীদের জন্য মনোরম পোশাক। শরতের শুরুতে মাঝে মাঝে ভ্যাপসা গরম থাকে, তাই কটন কাপড়কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কটন কাপড়ের ওপর তৈরি করা হচ্ছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া। বেশিরভাগই প্রিন্টবেজ ব্লক প্রিন্ট, স্কিন প্রিন্ট এগুলোর মধ্যে। কাপড়গুলো যেন আরামদায়ক হয় সেজন্য কটন কাপড়ের পাশাপাশি রঙের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সাদা, নীল, ব্রাউন ও অন্যান্য হালকা রংগুলোও বেছে নেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে নারী ও কিশোরীদের লং ও মিড লেংথ টিউনিক, টপ, শ্রাগ-স্টাইল টিউনিক ও কামিজ, আবায়া টিউনিক, ক্লাসিক কামিজ, সালোয়ার কামিজ, শার্ট ও টি-শার্টের রয়েছে বেশ চাহিদা। তরুণীদের কাছে সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল টপস এগুলোর চাহিদা বেশি থাকে।
হাল ফ্যাশনে বিশ্বজুড়ে মার্জিত ও আরামদায়ক লেংথ, স্টেটমেন্ট কলার এবং ইউনিক স্লিভস এর যে নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে, তার প্রতিফলন দেখা যাবে সব স্মার্ট ক্যাজুয়াল ও এথনিক স্টাইলে। প্রিন্টস্টোরিতে যোগ হয়েছে টোনাল ব্লক, ফ্লোরাল সোলেস, হেজি এস্কেপ, অ্যানসেস্ট্রাল রিপিট, পোয়েটিক স্ক্রিপ্ট, চেকও প্লেইড, সেডিমেন্টারি স্ট্রাইপ, ক্লাসিক কালার ব্লক এবং গ্রেট আউটডোরের মতো হাই-স্ট্রিট প্রিন্ট।
প্রকৃতিতে শরতের রূপ ফুটিয়ে তুলতে নারীরা পরুন কাশফুলের সিম্বলিক করা শাড়ি। আর কিশোরী ও তরুণীরা বেছে নিতে পারেন টপস, কুর্তি অথবা আধুনিক কাটছাঁটের নান্দনিক ড্রেস। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ডিসকাউন্ট ও বাহারি পোশাক দিয়ে সাজিয়েছে শোরুমগুলো। শরতে থ্রিপিস, কামিজ, কুর্তি, স্কার্ট, টপস, ফ্রক ইত্যাদিও বেছে নিতে পারেন ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে। আর শাড়ি পরতে চাইলে এখন অনায়াসে পরতে পারেন তসর, অ্যান্ডি, তাঁত কিংবা কটন শাড়ি। এ সময়ে রাতের দাওয়াতে সিল্ক, কৃত্রিম মসলিন বা কাতান শাড়ি দারুণ লাগবে। তবে শরৎকালে মেঘের তর্জন-গর্জন আর প্রখর রোদের দাপট বুঝে সাজাতে হবে নিজেকে। তবে যে কোনো অবস্থায় হালকা সাজের বিকল্প নেই। সাজের উপকরণটি হতে হবে অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের। ত্বকের ধরন বুঝে ব্যবহার করতে হবে প্রসাধনী সামগ্রী। যুগ যুগ ধরে এই পবিত্র ঋতুর আগমনে মুগ্ধ হয় সর্বসাধারণ। আর ঋতুকে আরও সুন্দর করতে পোশাকে থাকে নানা আয়োজন।
মডেল : স্বর্ণা
ছবি : এসএ শিহাব, স্টাইল: বিডি মিজু