
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশে পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ও বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি এমনই একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা আলোচনায় এসেছে, যেখানে স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবেসে নিজের কষ্টার্জিত অর্থে স্ত্রীর নামে জমি কিনে দেন। কিন্তু কিছুদিন পর স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে এবং স্বামী বিষয়টি জানার পর তাকে প্রশ্ন করলে স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে তালাক দিয়ে দেয়। এখন সেই স্বামী চাইছেন, তার টাকায় কেনা জমিগুলো যেন তাকে ফেরত দেওয়া হয়।
ঘটনার বিস্তারিত অনুযায়ী, স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা থেকে কোনো কিছু না চিন্তা করেই স্ত্রীর নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দেন, খারিজ ও নামজারিও সম্পন্ন হয়। কিন্তু সংসার টেকেনি। বরং স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগ উঠে এবং শেষ পর্যন্ত সে স্বামীকে তালাক দিয়ে দেয়। এতে স্বামী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং বর্তমানে তিনি আইনি সহায়তা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাকির হোসাইন জানান, এই ধরনের ঘটনার প্রতিকার হিসেবে ভুক্তভোগী স্বামী ‘ডিক্লারেশন সুট’ বা ঘোষণামূলক মামলা করতে পারেন। মামলার মূল উদ্দেশ্য হবে আদালতকে বোঝানো যে, স্ত্রীর নামে সম্পত্তি রেজিস্ট্রি হলেও প্রকৃত মালিকানা স্বামীরই, কারণ সম্পত্তি কিনতে স্ত্রীর আর্থিক কোনো সামর্থ্য ছিল না। যদি স্বামী এ সংক্রান্ত প্রমাণাদি—যেমন টাকা পরিশোধের রসিদ, ব্যাংক লেনদেন, কিংবা সাক্ষ্য-প্রমাণাদি আদালতে উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে আদালত তার পক্ষে রায় দিতে পারে।
তিনি আরও জানান, এই ধরনের মামলায় আদালত বিবাদী—অর্থাৎ স্ত্রীর বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারে এবং শুনানি শেষে যদি প্রমাণিত হয় জমির প্রকৃত মালিকানা স্বামীর, তাহলে রেকর্ড সংশোধনের নির্দেশ দিয়ে সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার রায় দিতে পারে। তবে, যদি স্ত্রী প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি নিজে জমির মূল্য পরিশোধ করেছেন এবং তার আর্থিক সামর্থ্য ছিল, তাহলে মামলাটি খারিজ হয়ে যেতে পারে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, কোনো স্বামী যেন ভবিষ্যতে স্ত্রীর নামে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার আগে আইনগতভাবে সুরক্ষিত থাকেন। আইনজীবী বলেন, “ভালোবাসার সম্পর্কের পাশাপাশি বাস্তব দিকটিও বিবেচনা করা জরুরি। প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতনতা এবং সঠিক ডকুমেন্টেশন ভবিষ্যতের জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে।”
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বাস্তব জীবনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এটিকে ‘আস্থার অপব্যবহার’ হিসেবে দেখছেন। আবার অনেকে বলছেন, স্বামীদের উচিত সম্পত্তি হস্তান্তরের আগে আইনি পরামর্শ নেওয়া এবং উপযুক্ত দলিল প্রস্তুত রাখা।
মারিয়া