ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি কৌশল

-

প্রকাশিত: ০১:৫৭, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি কৌশল

প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি কৌশল

৪৫তম বিসিএসের সার্কুলার হয়েছে গত ৩০ নভেম্বর। সাধারণ, কারিগরি ও পেশাগত মিলিয়ে মোট ২৩০৯টি ক্যাডার পদ এবং  ৯ম গ্রেড ৫০৫টি, ১০ম গ্রেড ৬০টি ও ১১-১২তম গ্রেড ৪৫৭টি পদ মিলিয়ে মোট ১০২২টি পদ নন ক্যাডার পদের জন্য উক্ত সার্কুলার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (বিপিএসসি)। শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতির কিছু সংক্ষিপ্ত কৌশল জানাচ্ছেন বিসিএস তথ্য (৩৫), কর (৩৬), প্রশাসন (৩৭) এ চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়া- মো. জোনায়েদ হোসেন
সার্কুলারে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় বলা হয়েছে মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। আবেদন চলবে ১০ ডিসেম্বর-২০২২ হতে ৩১ ডিসেম্বর-২০২২ তারিখ পর্যন্ত। চার বছর মেয়াদি স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর পাস চাকরিপ্রার্থী যাদের শিক্ষাজীবনে একের অধিক তৃতীয় শ্রেণি নেই তারা আবেদন করতে পারবেন।
এবারে প্রথমবারের মতো বিসিএস এর সার্কুলারে ক্যাডারের পাশাপাশি নন ক্যাডার পদের সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনের সময় ক্যাডার এবং নন ক্যাডার পদের পছন্দক্রম বাছাই করতে হবে।
আবেদনের সময় করণীয়
বিসিএসসহ চাকরির আবেদন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে সামান্য ভুলের কারণে কেউ কেউ চাকরি থেকে বঞ্চিতও হয়। এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্স সার্টিফিকেট; পাসপোর্ট সাইজের ছবি, স্বাক্ষরের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি নিয়ে আবেদন করতে বসবেন। চেষ্টা করবেন নিজেই আবেদন ফর্ম পূরণ করতে। আবেদনপত্র পূরণের আগে সার্কুলারটি ভালোভাবে পড়ে নেবেন।
এরপর ক্যাডারগুলোর সুবিধা-অসুবিধা, নিজের আগ্রহ এবং পরিবারের কথা মাথায় রেখে পছন্দের একটা ক্রম আগেই নোট করে নেবেন। আবেদনের সময় সতর্কতার সহিত নির্ভুলভাবে সকল তথ্য দেবেন। নন ক্যাডারেরও একটা ক্রম আগেই ঠিক করে নেবেন।
বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি
বিসিএসের মূল পরীক্ষা তিন ধাপে হয়। বিসিএস প্রিলিমিনারি ২০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে এরপর ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা এবং শেষে ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কোনো পাস নম্বর নেই। সাধারণত শূন্যপদের ৭-১০ গুণ প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়।
লিখিত পরীক্ষার পাস নম্বর শতকরা ৫০ ভাগ। ৯০০ নম্বরের মধ্যে ৪৫০ পেলেই লিখিত পাস করবেন। মৌখিক পরীক্ষায়ও পাস নম্বর শতকরা ৫০ ভাগ। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর যোগ করে মেধাক্রম তৈরি করা হয় এবং পছন্দক্রম অনুযায়ী ক্যাডার এবং পরে নন ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।
পরীক্ষার প্রস্তুতি
বিসিএস পরীক্ষার যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া খুব জরুরি। দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের এমনকি বিদেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা চাকরিপ্রার্থীরাও এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। শীর্ষ মেধাবীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাক্সিক্ষত চাকরি পাওয়ার জন্য সঠিক নিয়মে প্রস্তুতি নেওয়ার বিকল্প নেই।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ২০০ নম্বরের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ৩৫ নম্বর, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য ৩৫ নম্বর, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ৩০ নম্বর, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০ নম্বর, ভূগোল-পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ১০ নম্বর, সাধারণ বিজ্ঞান ১৫ নম্বর, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ১৫, গাণিতিক যুক্তি ১৫, মানসিক দক্ষতা ১৫, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন ১০ নম্বর। একজন চাকরিপ্রার্থীর প্রথম কাজ হবে সিলেবাসটা ভালোভাবে পড়া।
এরপর বিসিএস পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন হয় তা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি। বিসিএস পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্নগুলো সহজে পাওয়ার জন্য জব সলিউশন আছে বাজারে। সময় নিয়ে দেখে পড়তে ভালো লাগে এমন একটি জব সলিউশন বাছাই করতে হবে। সেখানে বিগত সালের প্রশ্ন, ব্যাখ্যাসহ উত্তর আছে। সেগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। প্রথমে ৩৫ থেকে সর্বশেষ বিসিএস এবং পরে এর আগের বিসিএসগুলোর প্রশ্ন ও উত্তর পড়তে হবে ভালোভাবে।
এরপর বিষয়ভিত্তিক বই সংগ্রহ করতে হবে। বই কেনার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় সম্ভব হলে সিনিয়রদের সঙ্গে টুকটাক আলাপ করে ধারণা নেওয়া এবং নিজে দোকানে গিয়ে একটু দেখেশুনে পড়ে এরপর কেনা। এর কারণ হলো বই মোটামুটি সবগুলোই কাছাকাছি। একেকজনের কাছে একেকটা বই পড়তে ভালো লাগে। যার যে বইটা পড়তে ভালো লাগে সে বইটা কিনতে হবে।
বই কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে- বইয়ের তথ্য নির্ভুল কিনা, প্রিন্ট কেমন, উপস্থাপনা কেমন এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস কম কিনা। এসব বিষয় বিবেচনা করে কয়েকটা প্রকাশনী মিলিয়ে এক সেট বই সংগ্রহ করতে হবে। একসঙ্গে অনেক বই কেনার চেয়ে ধীরে ধীরে বই কেনা ভালো।
বিসিএস এর সিলেবাসটা সব ব্যাকগ্রাউন্ডের চাকরিপ্রার্থীদের কথা চিন্তা করে করা হয়েছে। এজন্য দেখা যায় সবারই কোনো না কোনো বিষয়ে দুর্বলতা আছে। দুর্বলতা নিয়ে অযথা টেনশন করার দরকার নেই। কোনো বিষয়ে কত সময়ে দিলে কত নম্বর আসতে পারে এটার একটা হিসাব করে পড়তে হবে। শুরুতে একটু কঠিন লাগতে পারে। সাধারণ জ্ঞান মুখস্থ থাকবে না। মনে হবে পড়ছি আর ভুলে যাচ্ছি। এটা সবারই হয়। ধৈর্য নিয়ে বসে পড়ুুন, এক সময় সহজ লাগবে। হাজার মাইলের পথ এক কদম থেকেই শুরু হয়। পড়তে থাকুন। বিসিএসের পড়া ভুলে গেলেও লাভ। দেখবেন পরীক্ষার হলে এগুলো টনিকের মতো কাজ করছে। পড়া থাকলে ভুলে গেলেও সঠিক উত্তর করে আসতে পারবেন। একেবারে পড়া না থাকলে উত্তর করা অসম্ভব।
পড়াশোনা করুন। নিজের শরীর ও মনের যতœ নিন। চাকরির পরীক্ষা দিন। পাশাপাশি বিকল্পের কথাও মাঝে মাঝে ভাববেন। সবার জন্য শুভকামনা।

×