ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

ব্যাংকিং ডিপ্লোমার আধুনিকায়ন জরুরি

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ০১:৫৪, ১৮ নভেম্বর ২০২২

ব্যাংকিং ডিপ্লোমার আধুনিকায়ন জরুরি

ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা নিয়ে বেশ হতাশা কাজ করে ব্যাংকারদের মধ্যে

ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা নিয়ে বেশ হতাশা কাজ করে ব্যাংকারদের মধ্যে। বিশেষ করে বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষায় পাসের উপরে অনেকাংশেই পদোন্নতি নির্ভর করে। আবার ব্যাংকিং ডিপ্লোমার বেশিরভাগ সাবজেক্টই বাণিজ্য বিভাগের হওয়ায় বেশ সমস্যায় পড়তে হয় বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগ থেকে স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষ করা ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এ ছাড়া খুব ভালো লেখার পরও বারবার ফেল করানোর মতো অভিযোগও আছে ব্যাংকারদের। বিশেষ করে বাণিজ্য বিভাগ থেকে অনার্স/মাস্টার্স শেষ করা অনেক ব্যাংকারকেই ডিপ্লোমা পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট সাবজেক্টে পাস করতে কয়েকবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।
বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে সরকারি চাকরির পর প্রথম পছন্দ ব্যাংকের চাকরি। প্রথমেই অধিক বেতনসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার কারণে তারা ব্যাংকের চাকরিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ব্যাংকিং পেশায় এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও। তার মতে, ‘যারা গণিত ও বিজ্ঞানে ভালো, তারা সাধারণত ব্যাংকের চাকরিতে ভালো করে থাকেন। তাই বলে মানবিক বিভাগ থেকে পাশ করে ব্যাংকে ভালো করছে না, তা নয়।

ব্যাংকের প্রধান সম্পদ হলো গ্রাহক। কোনো গ্রাহক এলে তার সঙ্গে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে হবে। কোনো সমস্যা নিয়ে এলে নেতিবাচক কথা বলা যাবে না। গ্রাহকের সমস্যা সমাধান করতে না পারলেও যদি সমাধানের চেষ্টা করেন, তাতেই তিনি সন্তুষ্ট হবেন। সমস্যার কথা শুনতে না চাইলে সেই গ্রাহক আপনার কাছে  আর আসবেন না। গ্রাহকই হলো ব্যাংকের দূত। কাজ শেষ করে ছুটিতে যাচ্ছেন।

এমন সময় কোনো গ্রাহক এলে তাকেও সময় দিতে হবে। এসব সেবা দিতে হলে ব্যাংকের খুঁটিনাটি বিষয়ে দখল থাকতে হবে। একজন কর্মীর সেবার মানের ওপরই গ্রাহকের সন্তুষ্টি নির্ভর করবে।’ অর্থাৎ ব্যাংকিংয়ে ভালো করতে হলে ইতিবাচক মানসিকতা, আন্তরিকতা আর কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড হলেও, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা রয়ে গেছে সেই পুরনো ধারায়। অথচ বর্তমানে অনলাইন সেবা সবার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেক সহজ করে দিয়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়ও এসেছে পরিবর্তন। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাগুলো হচ্ছে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে।

ব্যাংকার ও কলামিস্ট কে.এম. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘ব্যাংকাররা সবাই উচ্চ শিক্ষিত হয়ে চাকরিতে এলেও তাদের তাত্ত্বিক বিষয়ে ১২টি সাবজেক্টেরই লিখিত পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানেও আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তাত্ত্বিক পরীক্ষাগুলো কতটা প্রয়োজনীয়, সে বিষয় নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে নীতিনির্ধারকদের।’
ইশরাত কচি, সাদেকুর রহমান ও মেহেদী হাসানের দেওয়া ব্যাংকিং ডিপ্লোমার সংক্ষিপ্ত কিছু প্রস্তাবনা:
১. প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে ওইই কে কঠোর হতে হবে।
২. যৌক্তিক সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে।
৩.পরীক্ষা জুন-ডিসেম্বরে না নিয়ে মে-নভেম্বরে গ্রহণ করতে হবে।
৪. পাশ নাম্বার ৪০ নির্ধারণ করতে হবে।
৫. ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে প্রশ্ন প্রণয়ন এবং খাতা মূল্যায়ন করতে হবে।
৬.বর্ণনামূলক প্রশ্নের পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নমালার মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ এই পরীক্ষায় টোটাল মার্কস ডিস্ট্রিবিউশন করতে হবে (এ রকম হওয়া উচিত যেখানে নৈর্ব্যক্তিক ৫০ এবং বর্ণনামূলক ৫০)।
৭.এখানে শর্ট প্রশ্নের একটা অংশ থাকা একান্ত জরুরি যেটা কিনা বিভিন্ন জব রিক্রুটমেন্ট এক্সামে থাকে।
৮. অ্যাকাউন্টিং বা কোনো প্রশ্নপত্রে নির্ধারিত কোনো প্রশ্ন বাধ্যতামূলকভাবে উত্তর প্রদানের নিয়ম বাতিল করতে হবে।
৯. প্রত্যেক ব্যাংক যেহেতু বড় অঙ্কের টাকা প্রতিবছর ওইই কে ভর্তুকি দেয়, সেক্ষেত্রে ১৫০০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করতে হবে।
১০. প্রতিটি জেলায়, সম্ভব না হলে অন্ততপক্ষে ২টি কাছাকাছি জেলার জন্য পরীক্ষা সেন্টার স্থাপন করে সারাদেশে পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
১১. দিনে ১ টা পরীক্ষা, দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নিতে হবে।

আরো পড়ুন  

×