
ছবি: সংগৃহীত
কথায় আছে, হৃদয়ের ব্যথা লুকানো যায়, তবে চোখের জল লুকানো কঠিন। এবার যেন ঠিক তেমনই ঘটলো—ক্যামেরার সামনে, জনসমক্ষে কেঁদে ফেললেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা। হাততালির ভিড়ে কাঁপা কণ্ঠে ভেসে উঠলো এক হৃদয়বিদারক মুহূর্ত, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সম্প্রতি এক আনুষ্ঠানিক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ফিরে যান তার জীবনের এক পুরনো ক্ষতচিহ্নে—যা আজও শুকায়নি। ক্ষুধার রাজ্য থেকে উঠে আসা এই নেতা জানান, জীবনে প্রথমবার রুটি খাওয়ার স্বাদ তিনি পান সাত বছর বয়সে। এর আগে তার সকালের নাস্তা মানে ছিল কেবল মাটির বাটিতে আটা আর কালো কফি। কখনো সেই আটাও মিলতো না, শুধু কালো কফি খেয়েই কাটতো সকাল।
বাবাহীন সংসারে মা একাই সামলাতেন সব দায়িত্ব। তীব্র দারিদ্র্য আর ক্ষুধা ছিল প্রতিদিনের সঙ্গী। কারখানায় কাজ করার সময় ক্ষুধা পেলেও কাউকে বলতে পারতেন না, লজ্জায় মুখ বুজে আবার কাজে ফিরতেন।
প্রেসিডেন্টের ভাষণে উঠে আসে ব্রাজিলের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের গল্পও। বছরখানেক আগেও জাতিসংঘের ‘হাঙ্গার ম্যাপ’-এ থাকা দেশটি মানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ না খেয়ে থাকা। কিন্তু জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন ব্রাজিল সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। দেশটির অপুষ্টির হার বর্তমানে ২.৫ শতাংশের নিচে।
এই অর্জনের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের সামনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন লুলা দা সিলভা। হাততালির ভিড়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা ভেতর থেকে গিলে খায়। দরিদ্রদের নিয়ে ভাষণ দেওয়া সহজ, কিন্তু তাদের জন্য কিছু করতে চাইলে সত্যিকারের ভালোবাসা লাগে। সেই জীবন যদি নিজের না হয়, তবে তা বোঝা কঠিন।’
প্রেসিডেন্টের এই কান্না যেন ছিল বিজয়ের কান্না—যেখানে একসময় ক্ষুধা ছিল তার অভ্যস্ত সঙ্গী, আজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক লড়াকু জাতি, যারা ক্ষুধামুক্ত হয়ে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=ch1CBBOVIsU
রাকিব