ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১০ আগস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সকালের ৩টি সেরা খাবার

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১০ আগস্ট ২০২৫

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সকালের ৩টি সেরা খাবার

ছ‌বি: প্রতীকী

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সকালের খাবার বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাতভর না খেয়ে থাকার পর সকালে রক্তে শর্করার মাত্রা সহজেই ওঠানামা করতে পারে। তাই এমন খাবার বেছে নিতে হবে যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখবে, দীর্ঘসময় পেট ভরা অনুভূতি দেবে এবং শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে। অনেক সময় আমরা সকালের নাস্তায় ভাজাপোড়া বা অতিরিক্ত চিনি-সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে ফেলি, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা সবসময় বলেন, দিনের শুরুতে হালকা কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার, যাতে শরীরে শক্তি বজায় থাকে এবং রক্তের গ্লুকোজ স্থিতিশীল থাকে। এ ক্ষেত্রে সকালের নাস্তায় কিছু নির্দিষ্ট খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী হতে পারে।

প্রথমেই বলা যায় ওটসের কথা। ওটস এক ধরনের পূর্ণ শস্য, যা দ্রবণীয় আঁশে ভরপুর। এই আঁশ হজম হতে সময় নেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়, ফলে হঠাৎ করে গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। শুধু তাই নয়, ওটসে থাকা বিটা-গ্লুকান নামক আঁশ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। সকালের নাস্তায় ওটস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটি সহজে তৈরি করা যায় এবং এতে নানা রকম স্বাস্থ্যকর উপাদান যোগ করা যায়। ডায়াবেটিস রোগীরা চাইলে ওটস দুধ বা পানিতে সিদ্ধ করে এর সাথে সামান্য দারুচিনি গুঁড়া, কয়েক টুকরা আপেল বা কিছু বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে স্বাদ যেমন বাড়বে, তেমনি মিলবে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা দীর্ঘসময় শক্তি জোগাবে।

এরপর আসে ডিম। ডিম একটি উৎকৃষ্ট মানের প্রোটিনের উৎস, যা রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়ায় না বরং নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার পেট ভরা রাখে, ফলে হঠাৎ করে ক্ষুধা লাগা বা অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। ডিমের সাদা অংশে প্রায় কোনো ফ্যাট বা কার্বোহাইড্রেট নেই, আর কুসুমে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ভিটামিন ডি। সকালের নাস্তায় ডিম সেদ্ধ বা সামান্য তেলে সবজি মিশিয়ে অমলেট করে খাওয়া যেতে পারে। অনেকেই ভাবেন ডিম খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণে ডিম খেলে বেশিরভাগ মানুষের কোলেস্টেরলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। বরং ডিমে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড, কোলিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখ ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীরা সপ্তাহে কয়েকদিন সকালের নাস্তায় ডিম রাখতে পারেন নির্ভয়ে।

তৃতীয়ত, গ্রিক দই বা টক দইও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো সকালের খাবার হতে পারে। বিশেষ করে গ্রিক দইয়ে সাধারণ দইয়ের তুলনায় প্রোটিন বেশি এবং কার্বোহাইড্রেট কম থাকে। এতে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হজমশক্তি বাড়ায়। টক দই খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে, কারণ এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। সকালের নাস্তায় গ্রিক দই বা টক দইয়ের সাথে কিছু তাজা ফল যেমন স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি বা আপেল কেটে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদ আসবে কিন্তু চিনি যোগ হবে না, পাশাপাশি মিলবে ভিটামিন সি, আঁশ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়া টক দইয়ের ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী এবং দীর্ঘসময় শক্তি দেয়।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সকালের নাস্তায় ওটস, ডিম এবং টক দই বা গ্রিক দই খুবই উপকারী। এই খাবারগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা একসাথে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং সারাদিন সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে, খাবারের পরিমাণ ও প্রস্তুত প্রণালীও গুরুত্বপূর্ণ। বেশি তেল, চিনি বা প্রক্রিয়াজাত উপাদান ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর উপায়ে এই খাবারগুলো প্রস্তুত করাই ভালো। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর সকালের নাস্তা খাওয়ার সাথে সাথে পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হবে। সকালের শুরু যদি হয় সঠিক খাবার দিয়ে, তবে দিনের বাকি সময় শরীর ও মন দুটোই থাকবে সতেজ ও সুস্থ।

এম.কে.

×