
গ্রীন টি দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে খ্যাত। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিপাকক্রিয়া বাড়ানো ক্যাটেচিন এবং প্রাকৃতিক ক্যাফেইনের কারণে এটি ওজন কমানো, ডিটক্স ও সামগ্রিক সুস্থতার সহায়ক হিসেবে বাজারজাত হয়। তবে সব উপকারিতার মাঝেও গ্রীন টি সবার জন্য উপযোগী নয়।
কিছু ক্ষেত্রে এটি উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি করতে পারে, বিশেষত অতিরিক্ত সেবনের ফলে বা যাদের নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য। হজমের অসুবিধা, পুষ্টি শোষণে বাধা কিংবা স্নায়ুতন্ত্র অতিরিক্ত উদ্দীপিত হওয়া এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকের ক্ষেত্রেই বাস্তব। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় গ্রীন টি যুক্ত করার আগে কারা এটি এড়িয়ে চলবেন এবং কেন পরিমিতি জরুরি, তা জানা প্রয়োজন।
গ্রীন টি যতটা নিরীহ মনে হয়, ততটা নয়। এতে থাকা ক্যাফেইন, ট্যানিন এবং ক্যাটেচিন দেহে যেমন ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তেমনি কিছু নেতিবাচক প্রভাবও আনতে পারে। ক্যাফেইন স্বল্পমাত্রায় শক্তি বাড়ালেও সংবেদনশীল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অস্থিরতা, উদ্বেগ এবং ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। ট্যানিন পেটের আস্তরণে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে এবং আয়রনের মতো পুষ্টি উপাদান শোষণে বাধা দিতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত ক্যাটেচিনও অতিরিক্ত গ্রহণে আয়রন শোষণ কমাতে পারে এবং যকৃতের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
খালি পেটে গ্রীন টি পান করলে এসব প্রভাব আরও তীব্র হতে পারে। সাধারণত দিনে ২ থেকে ৩ কাপ নিরাপদ, তবে তার বেশি সেবনে অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। রক্তস্বল্পতা, যকৃতের অসুখ বা ক্যাফেইন সংবেদনশীলতা থাকলে সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি গ্রীন টি ক্যাপসুল বা ঘন নির্যাস আকারে গ্রহণ করা হয়।
যাদের গ্রীন টি এড়িয়ে চলা উচিত
পেটের সমস্যা বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সে ভুগছেন যারা
গ্রীন টিতে থাকা ট্যানিন পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায়, যা অস্বস্তি, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও আলসারের সমস্যা বাড়াতে পারে। বিশেষত খালি পেটে পান করলে সমস্যা তীব্র হয়। গ্যাস্ট্রাইটিস, পেপটিক আলসার বা সংবেদনশীল হজমপ্রক্রিয়ার রোগীদের খাবারের পরে বা খাবারের মাঝের সময় পান করা উচিত।
আয়রন ঘাটতিতে ভুগছেন যারা
গ্রীন টি উদ্ভিজ্জ খাদ্য, ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারের নন-হিম আয়রন শোষণ কমাতে পারে। যারা ইতিমধ্যে আয়রন ঘাটতিতে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি সমস্যা বাড়ায়। আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে না খেয়ে খাবারের মাঝে পান করা ভালো। একই সঙ্গে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন লেবু বা কমলা খেলে আয়রন শোষণ বাড়ে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানের সময় অতিরিক্ত গ্রীন টি পান ঝুঁকিপূর্ণ। এতে থাকা ক্যাফেইন গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। ক্যাটেচিন ফলিক অ্যাসিড শোষণে বাধা দেয়, আর ক্যাফেইন বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে পৌঁছে স্নায়ুতন্ত্র অতিরিক্ত উত্তেজিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এই সময় দিনে সর্বোচ্চ ২ কাপের বেশি না পান করার পরামর্শ দেন।
ক্যাফেইন সংবেদনশীল ব্যক্তি
যারা স্বভাবতই ক্যাফেইনে সংবেদনশীল, তাদের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণেই অস্থিরতা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, বিরক্তি বা হাত কাঁপা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন ক্যালসিয়াম শোষণ কমিয়ে হাড় দুর্বল করে দিতে পারে। এ ধরনের ব্যক্তিদের দিনে এক কাপের বেশি না খাওয়া এবং বিকল্প হিসেবে ডিক্যাফ বা হার্বাল চা বিবেচনা করা উচিত।
শিশুদের জন্য গ্রীন টি উপযুক্ত নয়। এতে থাকা ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্রকে অতিরিক্ত উদ্দীপিত করে, আর ট্যানিন প্রোটিন ও চর্বির মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান শোষণে বাধা দেয়, যা তাদের বেড়ে ওঠার জন্য জরুরি। তাই শিশুদের গ্রীন টি না দেওয়াই ভালো।
নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তরা
উদ্বেগজনিত সমস্যা, রক্তক্ষরণজনিত অসুখ, হৃদস্পন্দনের অনিয়ম, ডায়াবেটিস বা আইবিএস থাকলে গ্রীন টি উপসর্গ বাড়াতে পারে। এটি গ্লকোমা রোগীদের চোখের চাপ বাড়াতে পারে এবং যকৃতের অসুখে সমস্যা জটিল করতে পারে, বিশেষত ঘন নির্যাস আকারে পান করলে। অস্টিওপোরোসিসের রোগীদের ক্ষেত্রেও সাবধানতা জরুরি, কারণ এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বের করে দিতে পারে।
গ্রীন টি অনেকের জন্য উপকারী হলেও এটি সবার জন্য সমান নিরাপদ নয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্বাস্থ্যের উপকারিতার পাশাপাশি এতে থাকা ক্যাফেইন ও ট্যানিন মাথাব্যথা, অস্থিরতা, হজমের সমস্যা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। অতিরিক্ত সেবনে আয়রন শোষণ কমে যেতে পারে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা বমিভাব তৈরি হতে পারে। এছাড়া কিছু ওষুধের সঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নিরাপদ থাকতে দিনে ২ থেকে ৩ কাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, চা ঠান্ডা করে পান করা এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে না খাওয়াই ভালো। গর্ভাবস্থা, স্তন্যদান বা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্য সচেতনতার মূল চাবিকাঠি হলো পরিমিতি ও সতর্কতা।
সূত্র:https://tinyurl.com/2p9rv72p
আফরোজা