
প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রিজ খুলে দেখলেন, ফলের ড্রয়ারে সেই সোনালি হলুদ ফলটি আছে কি না এই দৃশ্য অনেকের কাছেই পরিচিত। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে কলা নিয়ে। বহুমুখী এই ফলটি অনায়াসে মিশে যায় স্মুদি বোল থেকে শুরু করে ওয়াফল, এমনকি কেকের টুকরোতেও।
কলা এমন এক ফল, যা আপনি বিনা ঝামেলায় প্রতিদিনের নাশতায় রাখতেই পারেন। এর স্বাদ মিষ্টি হলেও প্রভাব আরও বিস্ময়কর। প্রতিদিন সকালে কলা খাওয়ার অভ্যাস শরীরের ভেতরে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারে শক্তি জাগানো থেকে শুরু করে হজমশক্তি শান্ত রাখা এবং মনকে প্রফুল্ল করা পর্যন্ত। তবে প্রতিদিন কলা খেলে শরীরে আসলে কী হয়?
শক্তির প্রাকৃতিক জোগান
কলা প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিন বি-৬ এবং বি-১ এ ভরপুর, যা শরীরে দ্রুত ও স্থায়ীভাবে শক্তি জোগায়। এটি কফি বা মিষ্টি খাবারের মতো হঠাৎ চাঙ্গা করে পরে ক্লান্ত করে দেয় না। কলার আঁশ চিনি ধীরে শোষিত হতে সাহায্য করে, ফলে দিনের শুরুটা হয় স্থিতিশীল ও প্রাণবন্ত।
হজমে সহায়ক ও অন্ত্রের বন্ধু
প্রতিটি কলায় থাকে প্রায় ৩-৫ গ্রাম আঁশ, যা হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে। আধা-পাকা কলায় পাওয়া যায় ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’, যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এতে হজম হয় সহজ, মাইক্রোবায়োম হয় সুস্থ, আর পেট থাকে আরামদায়ক। কলা ব্র্যাট ডায়েটের (Banana, Rice, Applesauce, Toast) অংশ হিসেবেও পরিচিত, কারণ এটি পেটের জন্য বেশ কোমল।
রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
প্রতিটি কলায় প্রায় ৩৮০–৪২০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করতে ও রক্তনালী শিথিল রাখতে সাহায্য করে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদ্যন্ত্র ও পেশি সুরক্ষিত থাকে। কলার আঁশ রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া রোধ করে। এতে থাকা দ্রবণীয় আঁশ ও রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ একসঙ্গে কাজ করে খাবারের পর রক্তে শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করে।
মন ভালো রাখার গোপন সঙ্গী
কলা শুধু স্বাদের আনন্দই দেয় না, এটি মনের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে ভিটামিন বি-৬ ও ট্রিপটোফ্যান থাকে, যা সেরোটোনিন ও ডোপামিন তৈরিতে সহায়তা করে—যা সুখের হরমোন নামে পরিচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, কলা খাওয়ার সঙ্গে বিষণ্নতা উপশমের সম্ভাব্য সম্পর্ক রয়েছে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান
কলা ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এটি ভালো কার্বোহাইড্রেটের উৎস, যা প্রোটিন বা চর্বির সঙ্গে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ব্যায়ামের আগে ও পরে উপকারী
কলা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ করে, যা পেশিতে ক্র্যাম্প প্রতিরোধ ও ব্যায়ামের পর পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। ব্যায়ামের আগে বা পরে কলা খেলে শরীর পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পায় এবং শক্তি ফিরে আসে। গবেষণায় এমনকি কলাকে কিছু ক্ষেত্রে স্পোর্টস ড্রিঙ্কের সমতুল্য বলা হয়েছে।
কিছু সতর্কতার বিষয়
যদিও কলার উপকার অনেক, কিছু ক্ষেত্রে সাবধান থাকা জরুরি।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য: কলায় প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকায় একা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর চর্বির সঙ্গে খেলে ঝুঁকি কমে।
কিডনির সমস্যা: যাদের কিডনির অসুখ আছে বা পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, তাদের জন্য প্রতিদিন কলা খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
মাইগ্রেন বা আইবিএস: কলায় থাকা টায়রামিন কিছু মানুষের মাইগ্রেন বাড়িয়ে দিতে পারে, আর অতিপাকা কলা আইবিএস রোগীদের জন্য অসুবিধা তৈরি করতে পারে।
প্রতিদিন সকালে কলা খাওয়া সহজ, সাশ্রয়ী এবং স্বাস্থ্যের জন্য বহুমুখী উপকারী অভ্যাস হতে পারে। এটি শক্তি, হজম, মনোভাব, হৃদ্যন্ত্র, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ব্যায়ামের পর পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। তবে সবকিছুর মতোই পরিমিতি গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্যাভ্যাসে কলাকে যুক্ত করুন, নিজের স্বাস্থ্য অনুযায়ী মিলিয়ে নিন, তাহলেই এই সোনালি ফলটির পূর্ণ উপকার পাবেন।
আফরোজা