
এরিন প্যাটারসন
একসময় রান্নার মনোমুগ্ধকর সুবাসে ঘর মাতানো এক নারী—এরিন প্যাটারসন। কিন্তু আজ সেই সুবাসই মৃত্যুর বার্তা বয়ে এনেছে। অস্ট্রেলিয়ার ছোট্ট শহর মরয়েলের এই নারী বিশ্বজুড়ে এখন কুখ্যাত “মাশরুম খুনি” নামে।
এরিন শুধু শ্বশুর-শাশুড়ি বা আত্মীয়দেরই নয়, নিজের স্বামীকেও হত্যা করার চেষ্টা করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক ছত্রাক—ডেথ ক্যাপ মাশরুম—খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে। খাবারের স্বাদ আড়ালে লুকিয়ে তিনি নীরবে, ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেন।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অন্তত তিনবার প্রাক্তন স্বামী সাইমন প্যাটারসনকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা করেন এরিন। কখনো বোলোনেস পাস্তা, কখনো চিকেন কোরমা, আবার কখনো ঘরে তৈরি কুকিজ—সবেতেই থাকত বিশেষ ধরনের বিষ।
সাইমন আদালতে জানান, একবার এরিন তাকে বলেছিলেন খাবারের স্বাদ নিতে, যেন ভবিষ্যতে তার পছন্দমতো রান্না করতে পারেন। কিন্তু সেই বোলোনেস পাস্তা খাওয়ার পরপরই তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন—গরম লাগা, মাথা ভারী হওয়া, প্রচণ্ড বমি—এমনকি কোমায় চলে যান। জরুরি অস্ত্রোপচারে শরীরের একটি অংশ কেটে ফেলতে হয় তাকে।
এরপর একবার এরিন তাকে ঘরে তৈরি কুকিজ পাঠান। সেদিন সাইমনের সন্দেহ আরও গভীর হয়, কারণ ভ্রমণের সময় এরিন বারবার ফোন করে জানতে চাইছিলেন তিনি কুকিজ খেয়েছেন কিনা।
২০২৩ সালের জুলাই—নিজের বাড়িতে আয়োজন করেছিলেন এক পারিবারিক মধ্যাহ্নভোজ। হাসি-আনন্দে ভরা সেই আসরের কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যান এরিনের শ্বশুর-শাশুড়ি ও খালা হিদার উইলকিনসন। গুরুতর অসুস্থ হন হিদারের স্বামী, ব্যাপ্টিস্টিক যাজক ইয়ান উইলকিনসন। আদালতের প্রমাণ অনুযায়ী, এটি ছিল ঠান্ডা মাথায় সাজানো হত্যাকাণ্ড—কারণ খাবারের টেবিলে পরিবেশিত হয়েছিল ডেথ ক্যাপ মাশরুম।
যদিও এরিন দাবি করেছিলেন, মাশরুম ভুলবশত পেস্ট্রিতে চলে এসেছিল, আদালত বলেছে—এটি ছিল সুপরিকল্পিত খুন।
গতকাল, ৮ আগস্ট, আদালতের নিষেধাজ্ঞা কাটার পর সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ক্রিস্টোফার বিয়েল জানান, তিনজনকে হত্যার এবং অন্যদের হত্যাচেষ্টার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এরিন। আগামী ২৫ আগস্ট আদালতে আবার হাজির হবেন এই “মাশরুম খুনি”। সেদিনই জানা যাবে কত বছরের সাজা অপেক্ষা করছে তার জন্য।
শেখ ফরিদ