ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১০ আগস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

লবণ কম খাওয়ার সঠিক উপকারিতা

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১০ আগস্ট ২০২৫

লবণ কম খাওয়ার সঠিক উপকারিতা

ছ‌বি: প্রতীকী

লবণ আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও এর অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই লবণ কম খাওয়ার অভ্যাস আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। লবণের প্রধান উপাদান সোডিয়াম। এই সোডিয়াম শরীরের পানি ভারসাম্য রক্ষা, স্নায়ুর কার্যক্রম এবং পেশীর সংকোচনের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও এর মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ তাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি লবণ গ্রহণ করে থাকে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই খাবারে লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য অপরিহার্য।

যখন আমরা লবণ বেশি খাই, তখন শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে রক্তে পানি জমে থাকে এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপ বেশি থাকলে ধমনী শক্ত হয়ে যায় এবং হৃদপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু লবণ কম খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। যারা ইতিমধ্যেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের জন্য লবণ কমানো আরও বেশি উপকারী। এটি শুধু রক্তচাপ কমায় না, বরং রক্তনালীগুলিকে সুস্থ রাখতেও সহায়তা করে।

কিডনির স্বাভাবিক কাজ হলো শরীরের অতিরিক্ত লবণ ও পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া। কিন্তু আমরা যদি বেশি লবণ খাই, কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই চাপ চলতে থাকলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। লবণ কম খেলে কিডনি এই অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি পায় এবং সুস্থভাবে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে যারা কিডনি রোগের ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য খাবারে লবণ কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লবণ কম খাওয়া হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বের করে দেয়। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হাড় দুর্বল করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই লবণের পরিমাণ কমালে হাড়ে ক্যালসিয়াম ধরে রাখা সহজ হয় এবং হাড়ের ঘনত্ব ভালো থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেহেতু হাড় ভঙ্গুর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, তাই লবণ নিয়ন্ত্রণে রাখা এই ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

অনেকেই জানেন না যে, লবণ কম খাওয়ার ফলে পাকস্থলীর স্বাস্থ্যের উন্নতিও হয়। গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, অতিরিক্ত লবণ পাকস্থলীর অভ্যন্তরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বাড়ায়, যা আলসার বা এমনকি পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। খাবারে লবণ কমিয়ে দিলে এই ঝুঁকি অনেকটা কমে আসে এবং হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকে। একইভাবে, অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, যার ফলে ফোলা ভাব বা ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। লবণ কমালে শরীরের পানি ভারসাম্য স্বাভাবিক হয় এবং ফোলা ভাব কমে যায়।

এছাড়া, লবণ কম খাওয়ার ফলে আমাদের স্বাদগ্রহণ ক্ষমতাও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। যারা নিয়মিত অতিরিক্ত লবণ খান, তাদের খাবার কম লবণযুক্ত লাগতে পারে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ লবণ কম খেলে জিহ্বা নতুন স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং খাবারের প্রাকৃতিক স্বাদ উপভোগ করা যায়। এটি খাবারের গুণমান এবং বৈচিত্র্য অনুভব করতেও সহায়তা করে।

শুধু স্বাস্থ্য রক্ষাই নয়, লবণ কম খাওয়া মানে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকা। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শক্তি বজায় রাখে এবং অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে যাওয়ার ঝুঁকি কমায়। লবণ কমানো কঠিন মনে হলেও এটি ধীরে ধীরে সম্ভব। প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া, রান্নায় কম লবণ ব্যবহার করা এবং টেবিলে অতিরিক্ত লবণ না রাখা এই অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, লবণ কম খাওয়া শরীরের জন্য বহুমুখী উপকার বয়ে আনে। এটি হৃদরোগ, কিডনি রোগ, হাড়ের ক্ষয়, পাকস্থলীর রোগ এবং অপ্রয়োজনীয় পানি জমে থাকার সমস্যা কমায়। একই সাথে খাবারের প্রাকৃতিক স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ দেয়। তাই সুস্থ, দীর্ঘ ও কর্মক্ষম জীবনযাপনের জন্য আজ থেকেই লবণ কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।

এম.কে.

×