
ছবি: প্রতীকী
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ ও কার্যকর রাখার অন্যতম সহজ উপায়। আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড বের করে দেওয়ার প্রধান কাজটি করে ফুসফুস। প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিলেও সময়ের সাথে সাথে বয়স, দূষণ, ধূমপান বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত কিছু শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা খুবই উপকারী। এগুলো করতে বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতি বা প্রশিক্ষণ লাগে না। যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় কয়েক মিনিটের জন্যও করা যায়।
প্রথমেই জানা দরকার, গভীর শ্বাস নেওয়া ফুসফুসের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। আমরা সাধারণত হালকা বা অগভীরভাবে শ্বাস নেই, যা ফুসফুসের নিচের অংশে পুরোপুরি বাতাস পৌঁছাতে দেয় না। কিন্তু ধীরে ও গভীরভাবে শ্বাস নিলে ফুসফুসের সব অংশে বাতাস পৌঁছায়, অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ে এবং শরীরের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয়। প্রতিদিন কয়েক মিনিট ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শ্বাসপ্রশ্বাসের পেশি মজবুত হয় এবং ফুসফুসের চাপ কমে।
শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতেও সহায়ক। যখন আমরা গভীর ও নিয়মিত ছন্দে শ্বাস নিই, তখন মস্তিষ্কে শান্তি ও স্থিরতার অনুভূতি তৈরি হয়। এতে মনোযোগ বাড়ে, উদ্বেগ কমে এবং ঘুম ভালো হয়। অনেক সময় দেখা যায়, যারা নিয়মিত এই ব্যায়াম করেন তারা ধীরে ধীরে স্ট্রেস মোকাবিলায় সক্ষম হয়ে ওঠেন। ফুসফুসের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে।
দূষিত পরিবেশে বসবাসের কারণে ফুসফুসে ধুলো, ধোঁয়া ও ক্ষতিকর কণিকা জমে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা অন্যান্য শ্বাসজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে ফুসফুসের ভেতরের জমে থাকা বাতাস ও অপ্রয়োজনীয় কণিকা ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে, ফুসফুস পরিষ্কার থাকে এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে। যারা ধূমপান করেন বা অতীতে ধূমপান করতেন, তাদের জন্য এই ব্যায়াম বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এটি ফুসফুসকে পুনরায় সক্রিয় করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ধীরে ধীরে সুস্থ হতে সাহায্য করে।
ফুসফুসের সুস্থতায় ব্যায়ামের পাশাপাশি সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখাও জরুরি। অনেকেই কাজের সময় বা বসে থাকার সময় কুঁজো হয়ে থাকেন, ফলে ফুসফুস সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত হতে পারে না। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের সময় সোজা হয়ে বসা বা দাঁড়ানো দরকার, যাতে বুক ও পেটের পেশি পুরোপুরি কাজ করতে পারে। এতে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হয়।
শুধু শ্বাস নেওয়া-ছাড়ার প্রক্রিয়াকে সচেতনভাবে অনুশীলন করাই আসল বিষয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে বাতাস টেনে নেওয়া এবং কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে মুখ দিয়ে ধীরে ছাড়ার অভ্যাস করলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে। আবার দিনের মধ্যে বিরতিতে কয়েক মিনিট চুপচাপ বসে গভীর শ্বাস নেওয়া শরীর ও মনকে সতেজ করে তোলে।
নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি কমে যায়। হাঁপানি, ব্রংকাইটিস বা সিওপিডি রোগীদের ক্ষেত্রেও ডাক্তাররা এই ধরনের ব্যায়ামকে সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে পরামর্শ দেন। তবে যাদের আগে থেকেই গুরুতর শ্বাসকষ্ট বা হৃদরোগ রয়েছে, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই ব্যায়াম শুরু করবেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এক ধরনের প্রাকৃতিক থেরাপি, যা একদিকে শরীরকে অক্সিজেনে পরিপূর্ণ রাখে, অন্যদিকে মনকে শান্ত করে। এর জন্য কোনো খরচ নেই, বাড়তি সময়ও লাগে না। প্রতিদিন কয়েক মিনিট সময় দিলেই ফুসফুস থাকবে সুস্থ, শরীর থাকবে প্রাণবন্ত আর মন থাকবে প্রশান্ত। এটা এমন এক অভ্যাস, যা আজ থেকেই শুরু করা যায় এবং সারা জীবন ধরে রাখলে এর সুফল পাওয়া যাবে দীর্ঘদিন।
এম.কে.